ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 24th December 2024 01:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থেকে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়। গত চারদিন ধরে আপন খেয়ালে পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। তাঁকে ধরার হাজারও চেষ্টা করেও কার্যত ব্যর্থ বনকর্তারা। তবু এমন পরিস্থিতিতে হতাশার পরিবর্তে বনকর্তাদের চোখে মুখে অন্য তৃপ্তির হাসি!
কেন? একান্ত আলাপচারিতায় এজন্য গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা। একই সঙ্গে নিজেদের দফতরের কর্মীদেরও বাহবা দিচ্ছেন। কারণ, বণ্যপ্রাণ বাঁচাতে পুরুলিয়ায় লাগাতার সচেতনতার প্রচার চালিয়েছে বন দফতর। দুঃসময়ে সেটাই 'ডিভিডেন্ট' হয়ে ফিরছে বন কর্তাদের কাছে।
বস্তুত, বাঘের আতঙ্কে গ্রামবাসীদের স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। সামান্য কাঠ সংগ্রহের জন্যও তাঁরা একা একা জঙ্গলে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তবু ওরা বাঘিনির 'হয়ে' কথা বলছেন। বলছেন, 'বেচারা চারদিন না খেয়ে রয়েছে! কেউ যেন ওকে আক্রমণ না করে'!
গ্রামবাসীদের মুখে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে, "এই জঙ্গল তো আমাদের একার নয়, এই জঙ্গল ওদেরও! আমাদের জঙ্গলে বাঘিনি থাকলে থাকুক। তাতে অন্তত কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য কমবে!"
বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, "বাঘিনি জঙ্গলে থাকলে ক্ষতি কী! ও যদি আমাদের কোনও ক্ষতি না করে তাহলে আমরাও ওর কোনও ক্ষতি করব না!"
যা শুনে চওড়া হেসে এক বনকর্তা বলছেন, "গত চারদিন ধরে বাঘিনিকে ঘিরে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। বার বার টোপ দিয়েও বাগে আনা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে যদি 'গ্রামে বাঘ কেন এল বলে', গ্রামবাসীরা আমাদের ঘিরে ধরতো, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হত ভাবুন তো! সেদিক থেকে বলতে গেলে, আমাদের সচেতনতার ধারাবাহিক প্রচারে গ্রামবাসীরাও বন্যপ্রাণ রক্ষার প্রতি ওয়াকিবহাল হয়েছেন। তাই বাঘিনি ধরা না পড়লেও আমাদের মানসিক চাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই বাঘিনিকে আমরা বাগে আনত পারব।"
বাঘিনির নাম জিনত। তিন বছরের এই জিনতকে গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে (টাইগার রিজ়ার্ভ, সংক্ষেপে বা এসটিআর) আনা হয়েছিল। গত ২৪ নভেম্বর রেডিয়ো কলার পরিয়ে তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল। তার পরেই ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ঘুরে বাংলায় ঢুকে পড়েছে সে! শুক্রবার থেকে প্রথমে ঝাড়গ্রামে পরে পুরুলিয়ায় ঘাঁটি গেড়েছে জিনত।
সূত্রের খবর, বাঘিনিকে বাগে আনতে সোমবার রাতে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় রাজকীয় ডিনারের আয়োজন করেছে বন দফতর। মেনুতে আছে মহিষ , শূকর ও ছাগল। এখন দেখার জিনাত টোপে পা দেয় কিনা!