শেষ আপডেট: 4th October 2024 18:55
সুমন বটব্যাল
গতবারে জেলেই দুর্গা পুজো দেখতে হয়েছিল মানিক ভট্টাচার্য, অনুব্রত মণ্ডল, জীবনকৃষ্ণ সাহাদের। তবে এবারে পুজোর মুখে জেলমুক্তি ঘটেছে শাসকদলের এই তিন মূর্তির।
কিন্তু জামিন তো দূরে থাক দু'বছর গরাদে দিন কাটানোর পর এবারে পুজোর মুখে গত ১ অক্টোবর রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, তৃৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এদিন আদালতে তোলা হলে বিচারক ফের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে পার্থকে। অন্যদিকে একই মামলায় বাকিবুর রহমান-সহ তিন ঘনিষ্ঠর জেল মুক্তি ঘটলেও পুজোর আগে রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জেলমুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁর ঘনিষ্ঠরাও।
গত বছর দুর্গাপুজোর দশমীর ২ দিন পর ২৬ অক্টোবর গভীর রাতে (২৭ অক্টোবর) সল্টলেকের বাড়ি থেকে জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় এজেন্সির হেফাজত ঘুরে এখন তাঁর ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেলে। একই কারাগারে রয়েছে পার্থও।
২০২২ সালের ২২ জুলাই দিনভর তল্লাশি অভিযানের পর সে দিন গভীর রাতে অথাৎ ২৩ জুলাই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। শুক্রবার আদালতে তোলা হলে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অর্থাৎ পুজোর মধ্যে ফের আদালতে হাজির করানো হবে। তবে সিুবিআই সদ্য নতুন করে গ্রেফতার করায় এখনই জামিনের সম্ভাবনা দেখছেন না পার্থর ঘনিষ্ঠরাও।
বস্তুত, রেশন দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয় ছাড়া বাকি ধৃত অন্যতম তিন অভিযুক্তর জামিন সম্প্রতি ম়্জুর করেছে ইডির বিশেষ আদালত। এরা হলেন, চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান, বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য এবং ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস। তিনজনেই রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
ফলে পুজোর মুখে জ্যোতিপ্রিয়ও জামিন পেতে পারেন বলে মনে করা হয়েছিল। তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিন চেয়েছিলেন বালু। ইডির তরফে আদালতে পেশ করা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভাল। ইডির রিপোর্ট দেখে আদালত ফের জেলেই পাঠিয়েছে বালুকে।
অন্যদিকে ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। পার্থ, জ্যোতিপ্রিয়র প্রতিবেশী হয়ে টানা ২৩ মাস প্রেসি়ডেন্সিতে ছিলেন তিনি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মানিক। এর আগে নিয়োগ মামলায় জামিন পেয়েছেন মানিকের স্ত্রী ও ছেলে। অর্থাৎ এবারের পুজো তাঁরা সপরিবারে বাইরেই কাটাবেন।
গরু পাচার মামলায় ২০২২ সালের ১১ অগস্ট বোলপুরের বাড়ি থেকে বীরভূমের তৎকালীন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। পরে তাঁর মেয়ে সুকন্যাকেও একই মামলায় গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আসানসোল হয়ে তিহাড়ে ঠাঁয় হয়েছিল বাবা-মেয়ের। পুজোর মুখে দু'জনেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
পুকুরে মোবাইল ছুড়ে গত বছরের ১৭ অপ্রিল খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে গত বছর জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তল্লাশি অভিযানের মাঝেই নিজের দামি দুটি অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল সেট পুকুরে ছুড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে। তথ্য লোপাটের অভিযোগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজত ঘুরে তখন থেকেই জেলবন্দি ছিলেন বিধায়ক। গত অগস্টে জামিনে জেল মুক্তি ঘটেছে তাঁরও।
ফলে এবারের পুজোয় বাড়ির খাবার খেতে পারবেন অনুব্রত, মানিক, জীবনকৃষ্ণরা। পার্থ, বালুকে অবশ্য পুজোতেও খেতে হবে সেই জেলের মেনুই।