শেষ আপডেট: 14th October 2023 17:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্কুলে মাস্টার বকা দিয়েছিলেন। বাড়িতে এসে গল্প করতেই চিরতরে ঘুচে গেছিল সেই পাঠ। আর স্কুলে যেতে হয়নি। না যেতে যেতে একসময় ভুলেই গেছিলেন স্কুলের পথ। বড্ড ছোট যে তখন। পরবর্তীতে অভাবের সংসারে লড়তে লড়তে নিজের সন্তানদেরও আর স্কুলের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়নি। জীবনের অনেকটা পথ পার হয়ে পড়াশোনার গুরুত্বটা যতক্ষণে বুঝলেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেকখানি। কিন্তু নিরক্ষরতার যন্ত্রণা যে তখন রীতিমতো চেপে বসেছে মনে। এর থেকে মুক্তির উপায়ও নিজের মতো করেই খুঁজে নিলেন শক্তিগড়ের কালীদাসী কোঁড়া।
সকালবেলা স্কুলে না গিয়ে জমিতে কাজ করছে কেউ, বা ধুলো মেখে খেলে বেড়াচ্ছে পথের ধারে। এমনটা আর হওয়ার যো নেই বড়শুলের সাগরদিঘি পাড়ে। দিদিমনির চোখে একবার পড়লে হল। বকেঝকে তাঁদের স্কুলে পাঠিয়ে তবেই শান্তি কালীদাসীর। সাগরদিঘি পাড়ের ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে রক্ষা নেই অভিভাবকদেরও। যদি একবার কানে আসে, পড়া ছেড়ে কোনও কিশোর যাচ্ছে ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে, সঙ্গে সঙ্গে সেই বাড়িতে পৌঁছে যান। আবার তাকে স্কুলে না ফেরানো পর্যন্ত জারি থাকে কালীদাসীর লড়াই।
বছর পঞ্চাশের কালীদাসী কোঁড়াকে এখন একডাকে চেনেন এলাকার মানুষ। তিনিই যে এখন গোটা জেলায় সাক্ষরতার মুখ। পড়াশোনা না শিখলেও ছোট থেকেই কালীদাসীর গলায় খেলে ভাদু গানের সুর। সেই সুরকে হাতিয়ার করেও লড়াই চালান কালীদাসী। হাটবারে নেচে গেয়ে পড়াশোনার মূল্য বোঝান বেচাকেনা করতে আসা মানুষদের। অন্যদিন গ্রামান্তরে চলে যান একই বার্তা নিয়ে। এরজন্য গ্রামের আরও কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে দল গড়েছেন তিনি। সবাই মিলে ঘুরে ঘুরে পৌঁছে দেন শিক্ষার বার্তা।
কালীদাসী বলেন, ‘‘শুধু গান গাইলেই তো সবাই স্কুলে যাবে না। সব বাচ্চা স্কুলে যাচ্ছে কি না, সেটাও দেখা দরকার। তাই নজর রাখি। কেউ স্কুল যাচ্ছে না শুনলেই সেই বাড়ি গিয়ে হাজির হই।” তাঁর আক্ষেপ, জীবনে কোনও দিন স্কুলে যাননি। ছেলেমেয়েদেরও পাঠানো হয়নি। আসলে তখন এর গুরুত্বটাই বুঝতে পারেননি। এখন তাই সবাই যাতে স্কুলে যায় সেই চেষ্টা করে যান।
এখন নানা রকম সরকারি অনুষ্ঠানেও ডাক পড়ে তাঁর। সেই সূত্রেই গ্রামের স্কুলে গিয়ে সই করা শিখতে হয়েছে কালীদাসীকে। ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলতে হবে যে! ‘কিন্তু পড়াশোনাটা তো আর শেখা হল না’- এই যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খায়। তবে স্থানীয় গ্রামবাসীরা, এলাকার স্কুল মাস্টাররা যখন পঞ্চমুখে বলেন, “ভাগ্যিস কালীদাসী ছিল, না হলে তো ক্লাসঘর ফাঁকাই পড়ে থাকতো”, তখন ক্ষতে প্রলেপ পড়ে। আবার নতুন উদ্যমে গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হন বড়শুলের কালীদাসী কোঁড়া।