আন্তর্জাতিক এক গবেষক দল নতুন এক প্রোটিন নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র এক ডোজেই এই অবক্ষয় থামানো যেতে পারে, এমনকী শরীর-মনকে আরও অনেক বেশি সচল রাখা সম্ভব।
প্রতীকী ছবি
শেষ আপডেট: 22 May 2025 21:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে শরীরের সহ্যশক্তি। পাশাপাশি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আর পেশির জোর হারিয়ে যাওয়াটা অনেকের জন্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে আন্তর্জাতিক এক গবেষক দল নতুন এক প্রোটিন নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র এক ডোজেই এই অবক্ষয় থামানো যেতে পারে, এমনকী শরীর-মনকে আরও অনেক বেশি সচল রাখা সম্ভব।
গবেষণাটি হয়েছে স্পেনের অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অফ বার্সেলোনার (UB) নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মিগেল চিয়নের অধীনে (Miguel Chillón)।
কী সেই প্রোটিন?
প্রোটিনটির নাম ক্লোথো (Klotho)। এর এক বিশেষ সিক্রিটেড ভার্সন, s-KL বা secreted Klotho এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু গবেষণা বলছে, কোশের সিগনালিং-এর ওপর প্রভাব রয়েছে এর। সঙ্গে সেল এজিং ও ইনফ্লেমেশনেরও সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
Klotho প্রথম আলোচনায় আসে ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে। ইঁদুরদের ওপর করা পরীক্ষায় থেকে জানা যায়- এই প্রোটিনের ঘাটতিতে অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়া ও দুর্বলতার লক্ষণ দেখা যায়। চিয়নের কথায়, ‘আমরা বহুদিন ধরেই Klotho নিয়ে কাজ করছি কারণ এটি স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় বড় ভূমিকা পালন করার সম্ভাবনা রাখে। আমাদের গবেষণার বিষয়, এটি সাধারণ নিয়মে আসা বার্ধক্যে কতটা সাহায্য করতে পারে।’
ইঁদুরদের ওপর হওয়া গবেষণায় জানা গেছে, s-KL প্রোটিনের প্রভাব পুরুষ ও নারী ক্ষেত্রে একরকম ছিল না। ছেলে ইঁদুরদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের আয়ু বেড়েছে, পেশিশক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মেয়ে ইঁদুরদের মধ্যে হাড়ের গঠনে উন্নতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে যদি অল্প বয়সেই এই প্রোটিন তাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়।নারী-পুরুষের হরমোনজনিত পার্থক্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই লিঙ্গভিত্তিক হিউম্যান ট্রায়াল ভাল ফল দিতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
যেসব ইঁদুরকে s-KL দেওয়া হয়েছে, তাদের পেশি অনেক বেশি সুগঠিত এবং বয়সজনিত ছাপ কম ছিল। তারা আরও ভাল সহ্যশক্তি ও কোঅর্ডিনেশন দেখিয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষায়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, তাদের হাড়ের ভিতরের গঠন অনেকটাই অক্ষত ছিল। এই ফলাফল আগের পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে, যেখানে দেখা গিয়েছিল Klotho শরীরে মিনারেলসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি কমায়।
কখন প্রয়োগ করা হয়েছিল প্রোটিন s-KL?
যেসব ইঁদুর ৬ মাস বয়সের বদলে ১২ মাস বয়সে এই প্রোটিন পেয়েছে, তাদের আয়ু বেড়েছে এবং স্বাস্থ্যের ওপরও ভাল প্রভাব পড়েছে।
মস্তিষ্কের ওপরও নানারকম প্রভাব রয়েছে এই প্রোটিনের। গবেষণায় দেখা গেছে, স্মৃতি ও বুদ্ধিমত্তার কেন্দ্রীয় অংশ হিপোক্যাম্পাসেও পরিবর্তন এসেছে। দেখা গেছে নতুন স্নায়ুকোষ গঠনের হার বেড়েছে, যা ‘adult neurogenesis’ নামে পরিচিত। বয়সের অনুপাতে ব্রেনের ইমিউন সেলগুলোর কার্যক্ষমতা বেড়েছে।
কীভাবে s-KL প্রয়োগ করা হয়েছে?
গবেষকরা gene therapy vectors ব্যবহার করেছেন, যার মাধ্যমে দেহের কোশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে s-KL প্রোটিন তৈরি করে। এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্ক সহ দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেও s-KL পৌঁছাতে পেরেছে।
যদিও গবেষণাটি এখনও ইঁদুরের শরীরের ওপর হয়েছে এবং সেই পর্যায়েই সীমাবদ্ধ, তবুও এটি স্পষ্ট যে মানুষের ক্ষেত্রে মোবিলিটি, স্মৃতিশক্তি ও হাড়ের গঠনের উন্নতিতে উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, এমন একটি উপায় সামনে এসেছে।
বর্তমানে বয়সজনিত সমস্যাগুলোতে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রত্যেকটি সমস্যাকে আলাদা করে লক্ষ্য করে, সেখানে s-KL একসঙ্গে সেইসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে। আগামী পরিকল্পনা কী?
বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন s-KL কীভাবে সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতিতে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা যায়- সরাসরি প্রোটিন ইনজেকশন, নাকি উন্নত জিন-ভিত্তিক থেরাপি। তাঁদের লক্ষ্য, বয়সজনিত দুর্বলতাকে পেছনে ফেলে সুস্থ ও স্বাধীন বার্ধক্য নিশ্চিত করা।