প্রতীকী ছবি
শেষ আপডেট: 17 April 2025 19:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সৌরজগতের বাইরের এক গ্রহের বায়ুমণ্ডলে রাসায়নিক চিহ্ন খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা, যা পৃথিবীতে শুধুমাত্র জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়। গবেষকদের মতে, এটি এখনও পর্যন্ত মহাকাশে জীবনের সম্ভাব্য উপস্থিতির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই চিহ্ন খুঁজে পেলেন।
জেমস ওয়েবের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা গ্রহটির নাম কেটু-১৮-বি (K2-18 b)। এর বায়ুমণ্ডলে যে দু'টি গ্যাসের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তা হল ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) এবং ডাইমিথাইল ডিজালফাইড (DMDS)। পৃথিবীতে এই দু'টি গ্যাসই জীবন্ত জীব, বিশেষত সামুদ্রিক শৈবালজাতীয় মাইক্রোব দ্বারা তৈরি হয়।
গবেষকদের মতে, এটি ইঙ্গিত করে কেটু-১৮-বি গ্রহটিতে প্রাণ থাকতে পারে। তবে তাঁরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কোনও জীবন্ত প্রাণির আছেই সেকথা তাঁরা ঘোষণা করছেন না—বরং এটি একটি সম্ভাব্য বায়োসিগনেচার অর্থাৎ জীববিজ্ঞানের ইঙ্গিত। ফলে এই ফলাফলকে এখনই চূড়ান্ত প্রমাণ বলে বিবেচনা না করে আরও গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা যাচাই করতে চাইছেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমির অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট নিক্কু মধুসূদন, যিনি এই গবেষণার প্রধান লেখক, বলেন, 'এটি সৌরজগতের বাইরের প্রাণ খোঁজার ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী পদক্ষেপ, মুহূর্তও। আমরা দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমেই জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন শনাক্ত করা সম্ভব। আমরা এখন পর্যবেক্ষণ-ভিত্তিক অ্যাস্ট্রোবায়োলজির যুগে প্রবেশ করেছি।'
মধুসূদন জানান, আমাদের সৌরজগতেই জীবনের সম্ভাব্য পরিবেশ খোঁজার বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলছে—যেমন মঙ্গল গ্রহ, শুক্র গ্রহ এবং চাঁদে। তবে কেটু-১৮-বি-র আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
কেটু-১৮-বি গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ৮.৬ গুণ ভারী এবং আয়তনে ২.৬ গুণ বড়। এটি একটি লাল বামন তারার চারপাশে এমন এক দূরত্বে ঘুরছে, যা 'বাসযোগ্য অঞ্চল' হিসেবে পরিচিত—যেখানে জল তরল অবস্থায় থাকা সম্ভব। এই লাল বামন তারা সূর্যের চেয়ে ছোট এবং কম উজ্জ্বল। এটি পৃথিবীর থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে, লিও নক্ষত্রপুঞ্জে রয়েছে। এই তারার চারপাশে আরও একটি গ্রহের অস্তিত্বও শনাক্ত করা হয়েছে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আগের পর্যবেক্ষণে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পাওয়া গিয়েছিল—এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনও তারার বাসযোগ্য অঞ্চলে থাকা গ্রহে কার্বন-ভিত্তিক অণুর শনাক্তকরণ।
মধুসূদন বলেন, 'বর্তমানে যেসব পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেছে, তা ব্যাখ্যা করার একমাত্র উপায় হল কেটু-১৮-বি হাইসিয়ান বিশ্ব, যা প্রাণে ভরপুর। তবে আমাদের খোলা মন নিয়ে অন্যান্য সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে হবে। যদি হাইসিয়ান গ্রহ বাস্তবেই থাকে, তবে সেখানে প্রাণ সম্ভবত পৃথিবীর সমুদ্রের মাইক্রোবের মতোই হবে। এই ধরনের গ্রহের মহাসাগর পৃথিবীর চেয়ে উষ্ণ বলে ধারণা করা হয়। এককোষী বা মাইক্রোবায়াল জীব ছাড়া, বহু-কোষী বা বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।'