শেষ আপডেট: 18th June 2024 09:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু'দিনের বৈঠক আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার শুরু হতে যাচ্ছে। বৈঠকে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে দলের খারাপ ফলের কারণ পর্যালোচনা করবে দল।
দলের জেলা কমিটিগুলি ইতিমধ্যে তাদের প্রাথমিক পর্যালোচনা রিপোর্ট রাজ্য পার্টির সদর দফতরে পাঠাতে শুরু করেছে। তবে ইতিমধ্যে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ শীর্ষ নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে, তৃণমূল ও বিজেপির বাইনারি বা দ্বিমুখী লড়াইয়ে বাম-কংগ্রেস জোট দাগ কাটতে পারেনি। এই নির্বাচনে সেটাই ছিল দলের প্রাথমিক লক্ষ্য। সিপিএম নেতারা মেনে নিয়েছেন, তৃণমূল এবং বিজেপিকে হারাতে আগ্রহী মানুষ বাম-কংগ্রেস জোটকে গ্রহণ করেনি। দলের ২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে জমানত রক্ষা হয়েছে মাত্র দু'জনের।
তবে বিগত নির্বাচনের তুলনায় ভোট খানিকটা কমলেও সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছে, যে পরিস্থিতি অর্থাৎ ধর্মীয় মেরুকরণকে হাতিয়ার করে বিজেপি-তৃণমূল লড়াই করেছে তাতে সামগ্রিকভাবে বামেদের ফল খারাপ বলা যাবে না। বিশেষ করে ব্যারাকপুর, শ্রীরামপুর, দমদম, যাদবপুরে পার্টির প্রাপ্ত ভোট আশাব্যঞ্জক বলেই দল মনে করছে। এরমধ্যে দমদম ও যাদবপুর নিয়ে দলের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট দল যে ভোট পেয়েছে তার মধ্যে শহরের শিক্ষিত-মধ্যবিত্তের ভাগ বেশি। শহর কিংবা গ্রাম, কোথাও মানুষ বামপন্থীদের খুব একটা সমর্থন করেনি। এই প্রসঙ্গেই আলোচনায় আসছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মহিলাদের আর্থিক সহায়তা দানের এই স্কিমের বিরোধিকার খেসারত সিপিএমকে দিতে হয়েছে বলে নানা মহল থেকে পার্টির কাছে খবর এসেছে। এই সূত্রেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্টির প্রচার নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করা দরকার বলে অনেক নেতাই মনে করছে।
তাঁদের মতে, দল সরকারিভাবে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেনি ঠিকই। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের দরদি/সমর্থকদের বড় অংশ লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে নিন্দামন্দে করেন। প্রকল্পটিকে ভিক্ষার দান বলেও কটাক্ষ করেন তাঁরা। তাছাড়া, বিগত বিধানসভা ভোটের পর পর প্রকল্পটি চালু হওয়ার সময় সিপিএম নেতৃত্ব তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। তারা টাকা দেওয়ার বিরোধী, এই ধারণাই মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দলের অনেকেই চাইছেন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করা হোক। সামাজিক মাধ্যমে বাম দরদি পরিচয়ে যারা আপত্তিজনক মন্তব্য পোস্ট করছেন তাদের বক্তব্য পার্টির তরফে নসাৎ করার ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন কেউ কেউ।
এবার প্রচারে পার্টির প্রার্থীরা লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে বলেছেন, বামপন্থীরা দায়িত্ব পেলে এই ধরনের প্রকল্প আরও বেশি করে চালু করা হবে এবং অনেক বেশি গরিব মানুষকে সুযোগ করে দেওয়া হবে। কিন্তু দলের পর্যালোচনা রিপোর্ট বলছে, এই বক্তব্য গরিব মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায়নি আগে থেকেই পার্টির অবস্থান সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যাওয়ায়।
আরও কয়েকটি বিষয় দলের নজরে এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ডিএ নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালেও ভোটকর্মীদের পোস্টাল ব্যালটে তার কোনও ছাপ নেই। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে শাসক দলের সমর্থন অক্ষুন্ন।
এবার ভোট হয়েছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে। ব্যাপক হারে রিগিং, ছাপ্পা, বুথ দখলের সুযোগ ছিল না। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি জায়গায় বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ছিল। যদিও দলের কাছে খবর, বহু বুথে পার্টির এজেন্ট ছিলেন না। অনেক জায়গায় কেউ এজেন্ট হতে চাননি। কিছু জায়গায় এজেন্ট হয়েও ভোটের দিন বুথে যাননি। এই পরিস্থিতি শুধুই সাংগঠনিক দুর্বলতা, শাসক দলের চোখ রাঙানি নাকি অন্য কিছু তার চুলচেড়া আলোচনা হবে রাজ্য কমিটির বৈঠকে। এরপর বসবে পলিটব্যুরো এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। বঙ্গ সিপিএমকে স্বস্তিতে রেখেছে পলিটব্যুরোর বক্তব্য। ভোট নিয়ে প্রাথমিক বিবৃতিতে তারা বাংলা ও ত্রিপুরা নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেনি। পলিটব্যুরো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেরলের ফলাফলে। সেখানে দল আট বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এবারও সিপিএম একটি মাত্র আসন জিতেছে। এবারই বিজেপি সেখানে খাতা খুলেছে।