শেষ আপডেট: 2nd August 2023 07:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: এভাবেও আলো জ্বালা যায়!
তাদের ঘরে দিনে আলো ঢোকে, রাতে অন্ধকার। অথচ সেই দুই শিশুই যেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলো দেখাচ্ছে, কত শত শিশুকে। এভাবেও তো দারিদ্রকে গোল দেওয়া যায়!
দিন আনি দিন খাই পরিবার, কেরোসিন কিনতেও বাবা মায়ের হিমসিম অবস্থা। কিন্তু তাতে কী! অন্ধকারে ডুবে থাকা পরিবারে আলো জ্বালার চেষ্টা করছে পাঁচ আর দশ বছরের দুই শিশু। বাড়ি লাগোয়া পেট্রল পাম্পের লাইট জ্বলে উঠলেই বই নিয়ে বসে পড়ে তারা (Two siblings study under petrol pump light)। যতক্ষণ বৃষ্টি না আসে, ততক্ষণ চলে পড়াশোনা।
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পাহাড়পুর গ্রামপঞ্চায়েতের বাসিন্দা আপন তন্ত্র। তিনি জানান, দশ বছর আগে তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল। একবার বিল এসেছিল দেড়লক্ষ টাকা। দিন আনি দিন খাই পরিবার কীভাবে মেটাবেন সেই বিল! ফলে কাটা যায় বিদুৎ সংযোগ। তখন পরিবারের কর্তা তাঁর বাবা নীরেন তন্ত্র। মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর কুপির আলোতে শুধুমাত্র রান্নাবান্না খাওয়াদাওয়াটুকুই হয়।
আপন বলেন, “আমি সামান্য দিনমজুর। পড়াশোনার জন্য আলো জ্বালতে কেরোসিন কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই ওরা পেট্রল পাম্পের আলোতেই পড়াশোনা করে।”
আর তাঁর ছেলে, ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া রাজ জানায়, “এভাবে পড়াশোনা করতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু পড়তে তো হবেই। অনেক পড়তে চাই আমি।”
দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। অথচ এই পরিবারের সন্তানদের এখনও কেন রাস্তায় বসে পেট্রল পাম্পের আলোয় পড়াশোনা করতে হয়, সেই প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষ। পেট্রল পাম্পের কর্মী অনুপ দেবনাথ বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি এই দুই ভাইবোন আমাদের পেট্রোল পাম্পের আলোতে পড়াশোনা করে। বৃষ্টি হলে বাড়ি চলে যায়। বৃষ্টি কমলে আবার ফিরে আসে। দেখে খুবই খারাপ লাগে।”
পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান বেণুরঞ্জন সরকার বলেন, “এই সময়ে এ ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। এই পরিবারের তরফে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। জানানো হলে আমরা বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতাম। বিষয়টি জানলাম। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন: বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যকে অপহরণ! পথ অবরোধে শোরগোল জলপাইগুড়িতে