শেষ আপডেট: 14th August 2023 09:57
৩১ বছর বয়স হল দ্বিতীয় হুগলি সেতু (Second Hooghly Bridge) বা বিদ্যাসাগর সেতুর (Vidyasagar Setu)। এরই মধ্যে সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে দীর্ঘ কেবল স্টেইড (Cable stayed) এই সেতুর কয়েকটি কেবলের অবস্থা ভাল নয়। কদিন আগে এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ঠিক হয়েছে, পুজোর (Durga puja) পর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেতুর মেরামতে হাত দেওয়া হবে।
এখানে জানিয়ে রাখা ভাল, এ ধরনের প্রতিটি সেতুরই সময়ান্তরে রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। দুনিয়া জুড়ে তা মেনে চলা হয়। নবান্নের কর্তাদের মতে, তাই এ ব্যাপারে এখনই প্যানিক করাও হয়তো ঠিক হবে না।
তবে নবান্নের বড় উদ্বেগ রয়েছে ট্রাফিক ডাইভারসন নিয়ে। ১ লক্ষেরও বেশি গাড়ি প্রতি দিন দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। তার মধ্যে হেভি ভেহিকেলস রয়েছে প্রচুর। তা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বাসে করে এই সেতুর মাধ্যমে প্রতি দিন কয়েক লক্ষ নিত্যযাত্রী কলকাতা শহরে আসেন। ব্রিজে মেরামতির কাজ শুরু হলে এই ট্রাফিক কীভাবে কোন রাস্তা দিয়ে ঘোরানো হবে সেটাই এখন বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে পুজোর পর কাজ শুরু হলে বিপুল সংখ্যক মানুষের অফিস কাছারিতে পৌঁছতে দুর্ভোগ যে হবেই সে ব্যাপারে প্রশাসনের অনেকেরই কোনও সন্দেহ নেই।
মুখ্য সচিব সম্প্রতি নবান্নে যে বৈঠক ডেকেছিলেন তাতে সেই কারণেই পুলিশের পদস্থ কর্তাদের থাকতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়া ছিলেন পূর্ত সচিব অন্তরা আচার্য সহ পূর্ত দফতরের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়াররা উপস্থিত ছিলেন। তবে সেতুর মেরামতির যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার জন্য এদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের উপর ভরসা করছে না নবান্ন। পুজোর পর জার্মানি থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল কলকাতা আসবে। মেরামতির কাজ তাঁদের তত্ত্বাবধানেই হবে।
৭৯ সাল নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। তার পর ৯২ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উদ্বোধন হয়। তবে ২০১৩ সালে রাজ্য সচিবালয় রাইটার্স বিল্ডিংস থেকে সরিয়ে নবান্নে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিদ্যাসাগর সেতুর মাহাত্ম্য বেড়েছে।
এই সেতুর ডিজাইন করেছিল জার্মান কারিগরী সংস্থা শ্লায়েশ বার্জারম্যান পার্টনার (Schlaich Bergermann Partner)। সে কারণেই জার্মান বিশেষজ্ঞদের আনা হচ্ছে সেতুর মেরামতির জন্য। মোট ১২১ টি কেবলের ফ্যান অ্যারেঞ্জমেন্টের উপর সেতুটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, এর মধ্যে কয়েকটি কেবলের অবস্থা ভাল নয়। কেবল মেরামতির জন্য জার্মানি থেকে সামগ্রী ইতিমধ্যে আনা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মেরামতির জন্য খরচ হতে পারে ৫৫ কোটি টাকা। তবে সেই অঙ্ক আরও অনেকটা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এর আগে এ বছরই দ্বিতীয় হুগলি সেতুর রাস্তার সংস্কার করা হয়েছিল। সেতুর উপর রাস্তার অংশ তুলে ফেলে তাতে ম্যাস্টিক অ্যাস্ফাল্টের প্রলেপ দেওয়া হয়। নতুন অ্যাস্ফাল্টের প্রলেপ দেওয়ার আগে পুরনো রাস্তার অংশ এই কারণেই তুলে ফেলা হয়েছিল যাতে ব্রিজের ডেড লোড বেড়ে না যায়। কারণ, ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকের মতে, ডেড লোড বেড়ে যাওয়ার জন্যই মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়েছিল। রাস্তার সংস্কারেরর পাশাপাশি সেই সময়ে রাস্তার পাশের অংশের সংস্কারও করা হয়েছিল। তখন খরচ হয়েছিল প্রায় ২৭ কোটি টাকা। হুগলি সেতু ৮২৩ মিটার লম্বা। সাধারণত ২০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তার উপরের অংশ তুলে ফেলতে ১৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। ফলে সেবার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কাজ সেরে ফেলতে পেরেছিল হুগলি রিভারব্রিজ কমিশন। কিন্তু এবার সময় আরও বেশি লাগতে পারে বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা।
অন্তঃসত্ত্বা হাতি মৃত্যুর ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত করতে পারে বন দফতর