শেষ আপডেট: 6th February 2024 13:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মায়ানমারের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিদ্রোহীরা একের পর এক প্রদেশ দখল করে নিয়েছে। রাজধানী নেপিডো এবং আগের রাজধানী ঈয়াঙ্গনের মতো বড় শহর দুটি বাদে মাঝারি মানের বেশিরভাগ শহরই এখন বিদ্রোহীদের দখলে।
গত মাসে দেশটির রাষ্ট্রপতি মিন্ট সোয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বিদ্রোহীরা যেভাবে শক্তি সঞ্চয় করে এগচ্ছে তাতে মায়ানমার ভেঙে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রপতির আশঙ্কা ইতিমধ্যেই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ভাঙনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাই বাকি। এখনই প্রায় ৫২ শতাংশ ভূখণ্ড বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির দখলে। ফলে দেশে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অচল হয়ে পড়েছে যানবাহন, বিদ্যুৎ, পানীয় জল এবং জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা।
এই পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে এসে জড়ো হয়েছে। তারা এই দুই দেশে আশ্রয় প্রার্থী। সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি শতাধিক সেনা জওয়ান ও অফিসারও ভারত ও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
গত মাসে যুদ্ধরত সেনা অফিসারদের একটি দল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে না উঠে মিজোরাম সীমান্তে এসে বিএসএফের কাছে আশ্রয় চায়। দিন কয়েক সীমান্ত রক্ষীদের আশ্রয়ে থাকার পর ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার তাদের মায়ানমার সরকারের সেনা ছাউনিতে পৌঁছে দেয়।
গত রবিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আরও ৯৫ জন মায়ানমার সেনা বাহিনীর অফিসার। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে মৃত্যুর মুখে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দেয়।
তবে ভারত ও বাংলাদেশের আসল চিন্তা বিপুল শরণার্থী নিয়ে। দুই দেশের সীমান্তেই জড়ো হয়েছে মায়ানমারের কয়েক লাখ নাগরিক। তারা ভারত ও বাংলাদেশে আশ্রয় প্রার্থী।
বাংলাদেশে কক্সবাজারে আগে থেকেই প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা জনজাতির মানুষ রয়েছে। রোহিঙ্গারা মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা। মায়ানমার সরকার তাদের সে দেশের নাগরিক বলেই মানতে নারাজ। সেনার অত্যাচারে রোহিঙ্গারা আট বছর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
সেই রাখাইন প্রদেশেও এখন কোণঠাসা সেনা। কিন্তু আসল সমস্যা তুমুল খাদ্য সংকট। দেশে শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় নিত্যপণ্যের জোগান নেই। অনাহারক্লিষ্ট মানুষ দেশ ছাড়তে মরিয়া।
মিজোরামে ভারতের সঙ্গে মায়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। মিজোরাম লাগোয়া মায়ানমারের চিন প্রদেশ গত একমাস যাবৎ বিদ্রোহীদের দখলে। সেখানে সেনার অত্যাচার থামলেও খাদ্য সংকটে জেরবার মানুষ। মিজোরামের সদ্য ক্ষমতাসীন জোরাম পিপলস মুভমেন্ট পার্টির সরকার তাদের আশ্রয় দিতে আগ্রহী। কিন্তু ভারত সরকার এখনও সবুজ সংকেত দেয়নি। বাংলাদেশের কক্সবাজারের মতোই মিজোরামের আইজলে মায়ানমারের চিন জনগোষ্ঠীর মানুষ আগে থেকেই আশ্রয় শিবিরে আছে। মিজোরাম সরকারই তাদের দেখভাল করছে।
এদিকে, মায়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার তিনদিনের ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মামুদ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের তাঁর দু-দফায় বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকে মায়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ একাই সামলাচ্ছে। মায়ানমারের চলতি পরিস্থিতিতে ভারতের হাত গুটিয়ে বসে থাকার উপায় নেই।
মায়ানমারে সেনা শাসকদের সঙ্গে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর লড়াই দশকের পর দশক ধরে চলছে। তবে অতীতে কখনই গোষ্ঠীগুলি সংঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করেনি। চলতি যুদ্ধে প্রায় কুড়িটি গোষ্ঠী হাত মেলানোতেই বিপাকে পড়েছে সেনা।
তিন বছর আগে সু চি’-কে জেলে পাঠিয়ে সেনা পুনরায় ক্ষমতা দখলের পর এবারের মতো প্রতিরোধের মুখে কখনও পড়েনি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলির মতে, এখন সেনার তুলনায় বিদ্রোহীদের হাতে জওয়ান ও যুদ্ধের রসদ বেশি আছে। ফলে সেনা বাহিনী কতদিন রাজধানীকে দখল মুক্ত রাখতে পারবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
ব্রিদ্রোহীরা মায়ানমার সেনা বাহিনীর কয়েকশো সাপ্লাই লাইন ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে বিমান যোগে খাদ্য-জ্বালানি পৌছে দিতে হচ্ছে সেনা ব্যারাকে। থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মায়ানমারের দৈনিক ইরাবতীর খবর অনুযায়ী, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি চারশোর বেশি সেনা ব্যারাক দখল করে নিয়েছে। সেনারা প্রাণভয়ে পালিয়েছে। অনেক জায়গায় সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সেনা বাহিনীর মনোবল আরও ভেঙে গিয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘থ্রি গ্রুপ অ্যালায়েন্স’-এর এমন বেশ কিছু সামরিক বিমান ধ্বংস করেছে। এই অ্যালায়েন্সের অংশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ)।