শেষ আপডেট: 22nd August 2023 08:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির লাগামছাড়া বেতন (Private School Fees) নিয়ে দফায় দফায় উঠেছে অভিযোগ। কখনও হাইকোর্ট, কখনও প্রশাসন-- কড়া পর্যবেক্ষণও সামনে এসেছে একাধিকবার। তবু সুরাহা বলতে তেমন কিছুই হয়নি। এবার এই নিয়ে প্রশ্ন উঠল বিধানসভাতেও।
আজ, সোমবার, বিধানসভা অধিবেশনে বিজেপি বিধায়ক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, 'বেসরকারি স্কুলগলোর ফি বৃদ্ধি অভিভাবকদের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে।'
এর উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, বেসরকারি স্কুলের ফি কাঠামোর উপর নিয়ন্ত্রণ করতে ইতিমধ্যেই একটি শিক্ষা কমিশনের চিন্তাভাবনা করেছে সরকার। বেসরকারি স্কুলগুলো যাতে অতিরিক্ত মুনাফা করার লক্ষ্যে ব্যবসা চালাতে না পারে, এই সংক্রান্ত একটি বিলও সরকার আনতে চলেছে বলে জানানো হয়।
এদিন শঙ্কর ঘোষের আরও এক প্রশ্নে ব্রাত্য বলেন, বাংলা মাধ্যম স্কুলের দিকে ঝোঁক কমে যাচ্ছে অভিভাবকদেরও। এখন সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে ঝুঁকছে। সেই চাহিদাবৃদ্ধির কারণেও ফি নিয়ে এত অশান্তি বলে দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এই প্রথম নয়, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে বিস্তর অভিযোগও জমা পড়েছে বহুদিন ধরেই। এই পরিস্থিতিতেই চলতি মাসের গোড়ায় রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য কমিশনের ধাঁচে শিক্ষা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা কমিশনের কাজ কী হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত খসড়াও প্রস্তুত করেছে শিক্ষা দফতর, সেই সব প্রস্তাবই সায় পেয়েছে রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকে। তার মধ্যেই অন্যতম বিষয় রয়েছে, বেসরকারি স্কুলের ফি বা বেতন কাঠামো।
• প্রস্তাবিত শিক্ষা কমিশন বেসরকারি স্কুলগুলির ফি কাঠামো নির্ধারণ করে দেবে। তার পর সে ব্যাপারে সুপারিশ করবে রাজ্য সরকারকে।
• কোনও বেসরকারি স্কুল অযৌক্তিক ভাবে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় করলে সে ব্যাপারে অভিযোগের শুনানিও হবে কমিশনে।
• ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থে সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে সে ব্যাপারেও কমিশন সময়ান্তরে সুপারিশ জানাবে।
শুধু তাই নয়, গত বছরেও রাজ্য বিধানসভায় একটি বিল পেশ হয়। তার নাম ছিল পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) বেসরকারি স্কুল নিয়ন্ত্রণ বিল (The West Bengal Private Schools Regulatory Bill, 2022)। শিক্ষা কমিশনের নতুন প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর ওই বিলটি নতুন করে বিধানসভায় আনা হবে বলেও ঠিক হয়। বলা হয় সেই বিল পাশ হলে ওই আইন মোতাবেক কমিশন গঠন করা হবে। কমিশনের মাথায় থাকবেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। এ ছাড়া কমিশনের সদস্য পদে থাকবেন স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনার, এসসিইআরটি-র ডিরেক্টর, মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি, এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি। এ ছাড়া দু’জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে কমিটির সদস্য হিসাবে মনোনীত করবেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী।
এই বিলের কথাই এদিন বিধানসভায় জানিয়ে, এই বিল পাশের সময় বিজেপি বিধায়করাও যাতে সমর্থন করেন, সে বিষয়ে আবেদন রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
শুধু প্রশাসনিক স্তরে নয়, গতমাসের শেষেই বেসরকারি স্কুলের বেলাগাম বেতনের মামলায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু রাজ্য সরকারকে কার্যত তুলোধনা করেছিলেন। ৩১ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে স্কুলের বেতন নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, বেসরকারি স্কুলগুলি কত ফি বাড়াবে, কখন বাড়াবে, সে সব দিকে কেন নজর নেই রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকারকে একটি গাইডলাইন তৈরি করারও নির্দেশ দেন বিচারপতি।