দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রয়াত হলেন বাংলার বিশিষ্ট কবি এবং গদ্যকার মলয় রায়চৌধুরী। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আন্দোলন 'হাংরি আন্দোলন'-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। কবির সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে এই দুঃসংবাদ দিয়েছেন তাঁরই পুত্র।
ছয়ের দশকে মলয় রায়চৌধুরীর হাত ধরেই সূচনা হয়েছিল হাংরি আন্দোলনের। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দাদা সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, দেবী রায় (হারাধন ধাড়া)। বাংলা সাহিত্যের হাত ধরেই আগাপাশতলা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা করে গেছেন হাংরি জেনারেশনের এই কবি-সাহিত্যিকরা। পরে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সন্দীপন চক্রবর্তী, বিনয় মজুমদার, সুবিমল বসাকের মতো খ্যাতনামা সাহিত্যিকরা। পাটনায় প্রকাশিত একটি ইস্তেহারের মাধ্যমে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তাকে অনেকেই রাজনীতিতে নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করতেন।
মলয় রায়চৌধুরী সারা জীবন কবিতা ও সাহিত্যে অচলায়তন ভাঙার কথা বলে গেছেন। বিতর্ক আমৃত্যু তাঁর পিছু ছাড়েনি। কবির লেখালিখি অশ্লীলতার দায়ে দুষ্ট বলেও মনে করেন অনেকে। তাঁর লেখা 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতাটির জন্য রাষ্ট্রবিরোধতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল মলয়কে। বেশ কিছুদিন কারাবাসের পর মুক্তি পান তিনি। তবে হাজার সমালোচনা, ব্যঙ্গ, অভিযোগও তাঁর লেখা বন্ধ করতে পারেননি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ২০০-র বেশি বই লিখেছেন তিনি।
তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখাগুলির মধ্যে প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার ছাড়াও রয়েছে 'মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো', 'ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস', 'জখম', 'ছোটলোকের ছোটবেলা' ইত্যাদি। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস লেখার পাশাপাশি বিদেশি লেখকদের লেখা ভাষান্তরও করেছেন মলয় রায়চৌধুরী। ২০০৩ সালে তাঁকে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত করা হলেও সেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
বয়সজনিত অসুখে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন মলয় রায়চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের একটি যুগাবসান হল বলা যায়।