শেষ আপডেট: 8th October 2023 11:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বারবার পরার ফলে পুরনো হয়ে গেছে জামা। আর পরার যোগ্য নেই সেসব। কিন্তু একেবারে ছুড়ে ফেলে দিতেও বাধে। অথচ দেবেনই বা কাকে? শুধু জামাকাপড়ই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন হরেক জিনিস থাকে যেগুলি না ব্যবহার করা যায়, না ফেলা যায়। তবে এবার থেকে সেগুলির সদগতি হতে পারে সহজেই। আর তাতে শুধু আপনার ঘর খালি হবে, তাই নয়, সেই ফেলে দেওয়া বাতিল জিনিসই বহু মানুষের রোজগারের পথ খুলে দিতে পারে।
নিশ্চয়ই ভাবছেন কীভাবে? তার জন্য চলে যেতে হবে কলকাতার নিউ টাউনের জিরো মিউজিয়ামে। সেখানে আস্ত একটা জাদুঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছে এইসব ব্যবহারের অযোগ্য জামা-গয়না কিংবা অন্য জিনিস দিয়ে।
শুধু মিউজিয়াম বললে ভুল হবে, জিরো মিউজিয়াম আসলে জিরো ওয়েস্ট শপ। অর্থাৎ এমন একটি দোকান, যা ফেলে দেওয়া কঠিন বর্জ্য পদার্থ দিয়েই বানিয়ে ফেলে নতুন জিনিস। বলা উচিত, আবর্জনাকে রিসাইকেল করে নতুন করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয় এখানে।
এই জিরো শপ আসলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি উদ্যোগ। এটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে এনকেডিএ, অর্থাৎ নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। হাস্টক্রাফট এবং কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ নামক দুটি এনজিওর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তারাই এগিয়ে নিয়ে চলেছে সরকারের এই উদ্যোগকে।
এর অধীনে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এখানে ফেলে দেওয়া জিনিস রিসাইকেল কাজ করেন। বর্তমানে ৩২টি গোষ্ঠীর মোট ৪০০ জন মহিলা যুক্ত রয়েছেন এই জিরো শপের সঙ্গে।
যে সব আবর্জনার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়, তার মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল, পুরোনো টায়ার, খবরের কাগজ, জামা কাপড় ইত্যাদি।
সেসব দিয়েই বানানো হয় ঘর সাজানোর ফুলদানি, ল্যাম্পশেড থেকে শুরু করে কফি মাগ, পার্স, জামাকাপড়, পর্দা, বিছানার চাদর, গয়না, গাড়ির পার্টস দিয়ে বানানো বিভিন্ন শোপিস, রংবেরংয়ের ছাতা, ওয়াল হ্যাংগিং, এমনকী কচুরিপানা দিয়ে তৈরি রাখিও রয়েছে।
রয়েছে জুতো, চিরুনি, এবং সিডস পেন। সিডস পেন হল এমন একধরনের পেন, যেগুলির ভিতরে বিশেষ কায়দায় ভরা থাকে বিভিন্ন গাছের বীজ। কালি শেষ হয়ে যাওয়ার ফেলে দিলে সেই বীজ থেকে জন্ম হবে নতুন গাছের।
রিসাইকেল করা জিনিস যেমন সাজিয়ে রাখা হয় জাদুঘরে, তেমন বিক্রিও করা হয় সেসব। দামও একেবারে সাধ্যের মধ্যেই, মাত্র ২০ টাকা থেকে শুরু। নিউটাউন অ্যাকশন এরিয়া ১-এ গেলেই দেখা মিলবে এই অভিনব দোকানের।
২০২১ সালের জুন মাস থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার রিসাইকেলড জিনিস বিক্রি করে আড়াই লক্ষ টাকা রোজগার করেছিল এই জিরো শপ। দিন দিন তা আরও বাড়ছে।
মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা তো বটেই, সেই সঙ্গে সমাজের আবর্জনা কমাতে সরকারের এই উদ্যোগ সত্যিই অভিনব।