শেষ আপডেট: 24th August 2024 11:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নেই। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর মতো সরকার-বিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলি বাংলাদেশের ইউনুস সরকারকে সমর্থন করছে। হাসিনা এখন ভারতে। বাংলাদেশ সরকার আর্জি জানাচ্ছে তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিক ভারত। কিন্তু এখনও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ফেরানোর কথা দিল্লিকে বলেনি সে দেশের সরকার।
এদিকে শেখ হাসিনার ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট বাতিল করে দিল ইউনুস সরকার। কূটনীতিকদের জন্য লাল পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়ে থাকে। ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্টধারীরা কিছু অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তারমধ্যে অন্যতম হল, যে কোনও সময় দেশ ছাড়ার অনুমতি। কিন্তু আগের সরকারের সব কর্তাব্যক্তির কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করায় হাসিনাও সেই রক্ষাকবচ হারাচ্ছেন। সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা রোজ চাপানো হচ্ছে, যার অধিকাংশই হত্যা ও গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে করা। এই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। তাঁর কথায়, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-য় প্রত্যর্পণ চুক্তি হওয়ার পরে হাসিনাকে ভারত ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য।”
তাই কি? হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২০১৩-র প্রত্যর্পণ চুক্তির তেমন কোনও গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে না বিদেশ মন্ত্রক। দু’দেশের মধ্যে জঙ্গি, পাচারকারী ও চোরাচালানিদের প্রত্যর্পণই ছিল এই চুক্তির উদ্দেশ্য। ২০১৬ সালে এই চুক্তিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। যেখানে উল্লেখ করা আছে, কোনও দেশ রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রত্যর্পণের দাবি জানালে, তবে তারা দাবি মানতে বাধ্য নয়। আবার চুক্তির আর একটি ধারায় রয়েছে, প্রত্যর্পণের পরে দীর্ঘ কারাবাস ও মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা থাকলে অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যাবে।
বিএনপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করেন, হাসিনার প্রত্যর্পণের মতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়ার কথাই নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ আইনশৃঙ্খলায় রাশ টেনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির হাসিনাকে ফেরত চাইলেও বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে এই দাবির বিষয়ে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের কোনও পদে ফখরুল নেই। তাই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তাঁর কথার জবাব ভারত সরকার দেয়নি।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট হাসিনার গোটা পরিবার সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পরে ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনা ও রেহানাকে আশ্রয় দেন। বাংলাদেশের এই আবহে ফের তাঁরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই একটি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ সরকারের হাতে ভারত কখনওই তাঁদের ছেড়ে দিতে পারে না। বিদেশ মন্ত্রক বিলক্ষণ জানে এতে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়াবে। যে কারণে তৃতীয় কোনও দেশে হাসিনাকে নিরাপদে রাখার তোড়জোড় করছে দিল্লি।