শেষ আপডেট: 24th June 2024 17:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ অস্বচ্ছতার অভিযোগে সারা দেশ উত্তাল। প্রশ্ন ফাঁস থেকে অতিরিক্ত নম্বর-- একাধিক অভিযোগ উঠেছে এই পরীক্ষাকে ঘিরে। বাড়তি নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের রিটেস্টও নিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে একযোগে আক্রমণ করেছে মোদী সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, আগের মতো যেন আবার রাজ্যগুলি নিজেদের দায়িত্বে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা অর্থাৎ রাজ্যভিত্তিক জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরিচালনা করার সুযোগ পায়। ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য পরীক্ষাব্যবস্থার যে কেন্দ্রীয়করণ করে 'নিট' পরীক্ষার সিস্টেম চালু হয়েছে, তার বিরোধিতা করেছেন তিনি। যুক্তি সাজিয়ে জানিয়েছেন, কেন 'নিট' পরীক্ষাব্যবস্থাটি দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না এবং তা বাতিল করা দরকার।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'নিট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন ফাঁস, ঘুষ নেওয়া, বাড়তি নম্বর দেওয়া-- এসব যা যা অভিযোগ উঠেছে, সেগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ইস্যুগুলির দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া উচিত কেন্দ্রের। সম্পূর্ণ, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্তও প্রয়োজন। লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার মেডিক্যাল পড়ার স্বপ্নকে ভেঙেচুরে দিতে পারে এই ধরনের ঘটনা। এই ঘটনা যে কেবল মেডিক্যাল পড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করবে তাই নয়, গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই নড়বড়ে করে দেবে।'
মমতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, 'এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, ২০১৭ সালের আগে পর্যন্ত রাজ্যগুলি তাদের নিজেদের ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা পরিচালনা করত এবং কেন্দ্রও আলাদা করে তা পরিচালনা করত। এই ব্যবস্থায় অনেক ভালভাবে পরীক্ষা নেওয়া যেত কোনও সমস্যা ছাড়া। পড়াশোনার মানও রক্ষা হতো। সর্বোপরি, রাজ্য সরকার যেখানে এক এক জন ডাক্তারি পড়ুয়ার পড়াশোনা ও ইন্টার্নশিপের পিছনে ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি খরচ করে থাকে, সেখানে রাজ্যের তো স্বাধীনতা থাকাই উচিত, রাজ্যভিত্তিক জয়েন্ট প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তারি পড়ুয়া বাছাই করে নেওয়ার।'
চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, 'পুরনো পদ্ধতি বদলে যখন গোটা সিস্টেমটির কেন্দ্রীয়করণ করে 'নিট' পরীক্ষা চালু করা হল, তখন রাজ্যের হাতে আর কোনও নিয়্ন্ত্রণ রইল না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোরও পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, এই কেন্দ্রীয় পরীক্ষা ব্যবস্থায় ভয়াবহ দুর্নীতির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। এর ফলে কেবল ধনীরা টাকা দিয়ে মেডিক্যাল পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। মেধাবী অথচ গরিব এবং মধ্যবিত্তরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে পিছিয়ে পড়ছে।'
মুখ্যমন্ত্রী সবশেষে লেখেন, 'এই অবস্থায় আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিন। আপনি এমন কোনও পদক্ষেপ করুন, যাতে নিট পরীক্ষার বদলে, রাজ্যগুলিতে পুরনো পরীক্ষা ব্যবস্থা ফিরে আসে। এতে ছাত্রদেরই ভাল হবে, গোটা পরীক্ষা পদ্ধতি আবার স্বাভাবিক হবে।'