শেষ আপডেট: 26th June 2024 00:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নাগরিক পরিষেবা নিয়ে সোমবার প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের কাউন্সিলর, প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, পুলিশ প্রশাসনের দায়সারা মনোভাব নিয়েও।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন তারই জ্বলন্ত ছবি দেখতে পেলেন পাঁশকুড়া হাইস্কুলের দিদিমনি সৌমী চৌধুরী। সৌমীদেবীর স্বামী ডা: তুষারকান্তি পাত্র এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক। গরমের জন্য এখন মর্নিং স্কুল চলছে। বাস ধরার জন্য মঙ্গলবার ভোর ৪টে ৪০ মিনিট নাগাদ ক্যারী রোডের বাস স্টপে দাঁড়িয়েছিলেন দিদিমনি।
সৌমীদেবীর কথায়, "বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশেই একটি ছেলে এসে দাঁড়ায়। ভেবেছিলাম, বাসের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে। দূরে একটা ছেলে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎই আমার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বাইকে থাকা ছেলেটির সঙ্গে পালিয়ে যায় পাশে দাঁড়ানো ছেলেটি। হেল্প, হেল্প বলে চিৎকার করেও কারও সাড়া পাইনি। ট্রাফিক পুলিশের একটা আউটপোস্ট থাকলেও কাউকে চোখে পড়েনি।"
ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে তখন আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছেন স্কুল শিক্ষিকা। বললেন, " একটা প্রাইভেট কার পেরিয়ে যাচ্ছিল। সাহায্য চেয়ে চিৎকার করলাম। দাঁড়াল না। দৌড়তে দৌড়়তে বাড়ি যায়।"
ঘটনাস্থল থেকে ২-৩ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত চ্যাটার্জীহাট থানা। কিছুটা দূরে রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ কার্যালয় নবান্ন। সকাল হতে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান সৌমীদেবী। সেখানেও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল দিদিমনির জন্য!
সৌমীদেবীর কথায়, "থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে সবটা বললাম। আমরা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ- মিসিং ডায়েরির কাগজ এগিয়ে দিল।"
সৌমীদেবী বলেন, "ভোর রাতে ওরা যখন ফোন ছিনতাই করে পালাল তখন ট্রাফিকের কাউকে দেখতে পাইনি, অথচ পুলিশ বলছে ওরা নাকি ছিল! হবে হয়তো! হতে পারে আমি আতঙ্কের মধ্যে ভাল করে খেয়াল করিনি।" খানিক থেমে যোগ করেন, "তাই যদি হবে তাহলে আমার চিৎকার শুনে ট্রাফিক পুলিশের কেউ এগিয়ে এলেন না কেন?" এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানার কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
তবে ঘটনার আকস্মিকতায় চরম আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে দিদিমনিকে। বললেন, "জীবনে প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটল। আগে শুনেছি, রাতের শহর, ভোরের শহর নাকি নিরাপদ নয়। এই প্রথমবার সেটা আমার সঙ্গে ঘটল। যতদিন না ডে স্কুল চালু হচ্ছে ততদিন আমি আর স্কুলে যাব না।"
সৌমীদেবীর কথায়, "মোবাইল আটকাতে গিয়ে প্রাণটাও তো চলে যেতে পারত! জীবনের মায়া কার বা নেই বলুন, তাছাড়া পরিবারের কথাও তো ভাবতে হবে।"
স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটায় যারপরনাই আতঙ্কিত এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা: তুষারকান্তি পাত্রও। তাঁর কথায়, "যেভাবে সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বাড়ছে তাতে তো রাস্তায় চলাফেরা করাটাও যথেষ্ট ঝুঁকির।"
যে ফোনটি ছিনতাই হয়েছে, সেটির সিম সৌমীদেবীর ভাইয়ের নামে কেনা। তাই সৌমীদেবীর পরিবর্তে থানায় মিসিং ডায়েরি করেছেন তাঁর ভাই সৌমিত চৌধুরী।