রামমন্দিরে মোদী। ফাইল চিত্র।
শেষ আপডেট: 6th June 2024 17:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র চার মাস আগেই অযোধ্যার ফৈজাবাদে উদ্বোধন হয়েছে রামমন্দিরের। খোদ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন সেই মন্দির। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস ছিল এই মন্দিরই। এই মন্দিরকে ভিত্তি করেই বিজেপি গলা তুলে স্লোগান দিয়েছিল, 'আব কি বার, চারশো পার'। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল, চারশো দূরের কথা, ৩০০-ও পেরোয়নি এনডিএ। তার মধ্যে বিজেপির এককভাবে জোটেনি ম্যাজিক ফিগারও।
শুধু তাই নয়, বিজেপিকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে এই রামমন্দিরের শহরই। ফৈজাবাদ আসনে জিততে পারেনি তারা। সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী তথা ন’বারের বিধায়ক অবধেশ প্রসাদ ৫৪ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপির দু’বারের সাংসদ লালু সিংকে।
বিজেপির কাউন্টিং এজেন্ট লক্ষ্মীকান্ত তিওয়ারি হতাশ গলায় বলেন ‘আমাদের প্রচুর লড়াই করতে হয়েছে রামমন্দির গড়ার জন্য। প্রাণপাত পরিশ্রম করেছি আমরা। তবু রামমন্দিরের উন্মাদনা ভোটবাক্সে ছাপ ফেলল না!’
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই হারের দেওয়াল লিখন আগেই লেখা হয়েছিল চুপিসারে। কেবল রামমন্দিরের ঝাঁ চকচকে আলোয় তা দেখতে পাননি অনেকেই। কারণ:
রামমন্দির যতই প্রচার পাক, এলাকাবাসীর সমস্যাগুলিই বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে এই ভোটে। রামমন্দির ঘিরে ফৈজাবাদের নির্দিষ্ট এলাকা যতই জমে উঠুক না কেন, অযোধ্যার বহু গ্রামেই মানুষের ক্ষোভ ছিল নানা সরকারি পরিষেবা নিয়ে।
রামমন্দিরের আশপাশের জমি অধিগ্রহণ নিয়েও আপত্তি ছিল স্থানীয়দের বড় অংশের। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বও একমত হয়েছে এই বিষয়ে। তাঁরা মনে করছেন, এই ফলের নেপথ্যে রয়েছে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, জমি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ, প্রশ্নপত্র ফাঁস। চাকরি না পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল এলাকার যুব সম্প্রদায়ের মনে।
সেই সঙ্গে ছিল, সংবিধান বদলের আশঙ্কাও। ভোট প্রচারের পর্বে বিজেপি প্রার্থী লালু সিং নিজে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘সংবিধান বদলাতে গেলে আমাদের ৪০০ আসন লাগবে।’ এর ফলে দলিতদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়, সংবিধান বদল হলে তাঁদের অধিকারে, বিশেষ করে সংরক্ষণে হাত পড়তে পারে। কারণ, বিজেপি নেতারা অতীতে অনেকবারই সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার পক্ষে নীতিগত অবস্থান নিয়েছেন।
ফলে এই মন্তব্যকে অস্ত্র করেই, সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অবধেশ প্রসাদ স্থানীয়দের, বিশেষ করে দলিতদের আস্থা কুড়িয়েছেন অনেকটাই। সেই সঙ্গেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মন্দিরের আশপাশে রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে বিজেপি সরকার যাদের ক্ষতির মুখে ফেলেছে, তাঁদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার।
তাই বিজেপি-র দু'বারের সাংসদ লালু সিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক দলিত সম্প্রদায়ের নেতা হয়েও, সব মিলিয়ে ভোট পেয়েছেন অবধেশ প্রসাদ। ধর্ম-বর্ণ ভুলে স্থানীয় মানুষ তাঁকে ভোট দিয়েছেন, নিজেদের সমস্যাগুলি সমাধান হতে পারে সেই আশায়। কারণ বিশাল রামমন্দির নির্মাণকে অযোধ্যার বাইরে থেকে দেখতে যতটা ঝাঁ চকচকে লাগছে, স্থানীয় মানুষের জন্য ততটাই বেড়েছে ঝামেলা। এমনকি একথাও জানা যাচ্ছে, হাতে গোনা অযোধ্যাবাসী রামমন্দিরে যান। আসল ভিড়ের প্রায় পুরোটাই বাইরে থেকে আসা।
অবধেশ প্রসাদ জেতার পরে বলছেন, "বিজেপি রামমন্দিরকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চেয়েছিল। বেকারত্ব, দারিদ্র, মুদ্রাস্ফীতি কিংবা কৃষকদের সমস্যার মতো বিষয়গুলি থেকে মানুষের মনোযোগ সরাতে চেয়েছিল।"
ফলে একথা বলাই যায়, যে সব মিলিয়ে ফৈজাবাদের ভোটবাক্স রামমন্দির দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। বরং রাজনীতির কারবারিদের মনে হচ্ছে, এই মন্দিরই বুঝি উল্টো প্রভাব ফেলল স্থানীয়দের মধ্যে, যার ফলস্বরূপ বিজেপি-কে সরিয়েই দিল তারা!