শেষ আপডেট: 10th November 2023 19:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শুক্রবার, ১০ নভেম্বর অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে ‘পিপ্পা’। রাধাকৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ছবিটি ভারতীয় সেনার ৪৫ কাভালরি রেজিমেন্ট-এর ক্যাপ্টেন বলরাম সিং মেহেতার জীবনী নির্ভর। সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে নজরুলগীতি ‘কারার ওই লৌহকপাট’, যা নিয়ে এখন বিতর্ক তুঙ্গে।
সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের পরিচালনায় গানটির সুর, তাল, লয়, ছন্দ—সবকিছুই বদলে গিয়েছে। আর সেই নিয়েই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো তুলকালাম বেঁধেছে। অস্কারজয়ী শিল্পীকে নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ বাংলাও। রহমানের মতো সঙ্গীতজ্ঞের কাছে এমনটা আশাই করতে পারছেন না তাঁরা।
ইতিমধ্যে তাঁকে নিয়ে তুলোধনা শুরু হয়েছে। মুখ খুলেছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্রর মতো সঙ্গীতশিল্পীরা। তবে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন নামী নজরুলগীতি শিল্পী সুস্মিতা গোস্বামী এবং ‘পঞ্চকবির কন্যা’ ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। রহমান যা করেছেন, তাকে অন্যায় নয় বরং অপরাধই বলছেন তাঁরা।
জনপ্রিয় নজরুলগীতি শিল্পী সুস্মিতা বলেছেন, “কারার ওই লৌহকপাট গানটার একটা বৈপ্লবিক পটভূমি আছে। পরাধীন ভারতের বিপ্লবীরা কবির এই গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। একজন ভারতীয় হিসেবে এই গানকে বিকৃত করা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধ।”
এখানেই থামেননি সুস্মিতা। তিনি বলেছেন, “কোথাও কি কোনও সেন্সর বোর্ড নেই? অবিলম্বে নজরুল ইসলাম আকাদেমি, চুরুলিয়া আকাদেমি ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এ আর রহমানের বিরুদ্ধে লিগাল স্টেপ নেওয়া। কবির পরিবারের পক্ষ থেকেও এই ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত।”
'পঞ্চকবির কন্যা' ঋদ্ধি বলেছেন, “ভাবতে কষ্ট হচ্ছে এ আর রহমানের মতো একজন উচ্চমেধার মানুষ, এতো বড় মাপের একজন সুরকার তথা অত্যন্ত গুণী সঙ্গীতশিল্পী এইরকম হীন কাজ করেছেন। কবির লেখা এই অসাধারণ গানকে এমনভাবে নষ্ট করার অধিকার তাঁর নেই। এটা খোদার ওপর খোদকারি!”
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “নজরুল ইসলামের এই গান প্রথম গেয়েছিলেন গৌরকেদার ভট্টাচার্য। তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে গাওয়া এই গানের নাটকীয়তা, আবেগ, সুরের দৃপ্ত ভঙ্গিমা দেশবাসীকে আজও উদ্বুদ্ধ করে। রহমানের মতো মানুষ কেন এটা করলেন তা কিছুতেই বোধগম্য হল না।”
চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, যাঁকে একডাকে চেনে এই বাংলার সঙ্গীতজগত, তিনিও নিজের ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি। সঙ্গীতশিল্পীর কথায়, “এই গানগুলোর সঙ্গে ভিন্নরকম মূল্যবোধও জড়িয়ে আছে। সেই গানগুলোকে নতুনভাবে রিক্রিয়েট করতে যাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।”
অনিন্দ্য আরও বলেন, “এ আর রহমানের মতো একজন বরেণ্য শিল্পী এই গানটিকে শুধুমাত্রই একটা গান হিসাবে দেখেছেন। দুই বাংলার এই গানের অভিঘাত, মূল্য কতটা, তা উনি বোঝেননি। গানের কথায় লৌহকপাট ভেঙে ফেলার কথা বলা হলেও রহমান যেভাবে ভাঙতে চেয়েছেন, সেটা সঠিক পথ নয়।”
সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র বললেন, “আমার মনে হয় এ আর রহমান সব জেনেবুঝেই এই গানটা বেছেছেন। নাহলে তো অন্য কাউকে দিয়ে গান লেখাতেন। জানতেন কন্ট্রোভার্সি হবে। তাতে গানটা খুব সহজে জনপ্রিয় হবে। আমরা বিরোধিতা করতে গিয়ে এই অদ্ভুত সুরে গাওয়া গানকে জনপ্রিয়তা পাইয়ে দিচ্ছি।”
তাঁর মতে, “অন্যভাবে এই গানের প্রতিবাদ হওয়া দরকার।” এরপর লোপামুদ্রা আরও বলেন যে, “একটা জিনিস আমার খারাপ লাগছে। তা হল যে জুনিয়র আর্টিস্টরা গান গাইছে, তাঁদের গালাগাল দেওয়া হচ্ছে। রহমানের মতো শিল্পী গাইতে ডাকলে কোনও জুনিয়র আর্টিস্ট কি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে?”