শেষ আপডেট: 28 August 2023 18:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সম্প্রতি একটি রিল বানিয়েছেন অভিনেতা জিতু কমল। তাতে তাঁকে বলতে শোনা গেছে, ‘স্ত্রীর ইংরেজি টেনশন!’ জিতুর মুখে এমন সংলাপ শুনে অবাক নেটদুনিয়া। কারণ মাসখানেক আগেই স্ত্রী নবনীতা দাসের সঙ্গে বিচ্ছেদ (Divorce Cases are increasing) ঘোষণা করেছেন অভিনেতা জিতু কমল। তবে তার পরেও নিজের স্ত্রীকে ‘বাচ্চা বৌ’ বলে সবার সামনে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। দেখে অনেকেরই মনে হয়েছিল, বিচ্ছেদ হয়তো স্বল্পস্থায়ী। কিন্তু তার পরে হঠাৎ স্ত্রীকে 'টেনশন' বলে উল্লেখ করার পরে ফের জল্পনা ছড়িয়েছে ডিভোর্সের।
তবে তথ্য বলছে, এটা একেবারেই কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রোজ রোজ ডিভোর্স এতই বাড়ছে রাজ্যে, যে এ বছর রেকর্ড গড়তে পারে ডিভোর্সের সংখ্যা (Divorce Cases are increasing)! এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। জানা যাচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে ডিভোর্স। তবু বিয়ে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না নবদম্পতিদের মধ্যে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত রাজ্যে ১৪ হাজার ৫০৯টি ডিভোর্স হয়েছে। এর পরে চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে এই সংখ্যা আরও হাজার চারেক। যদিও নির্দিষ্ট কোনও কারণ এ জন্য চিহ্নিত নয়, তবু এ কথা খুবই স্পষ্ট, যে সাংসারিক খুঁটিনাটি অশান্তিই অনেক সময় বড় কারণ হয়ে উঠছে বিচ্ছেদের (Divorce Cases are increasing)।
একথা মানতেই হবে, কোভিড পরবর্তী সময়ে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মনোবিদরা চিহ্নিত করেছেন, একই ঘরে দম্পতিদের দীর্ঘদিনের বন্দিদশা বহুক্ষেত্রেই নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। সামাজিক-আর্থিক উদ্বেগ যেমন জাঁকিয়ে বসেছে, তেমনই অনেকেই বাইরের মুক্তি হারিয়ে বন্ধ ঘরে 'একঘেয়ে' হয়ে গিয়েছেন পরস্পরের কাছে। বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংসাও এবং তার ফলে সেই ডিভোর্স (Divorce Cases are increasing)।
আইন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৯২ হাজার ৯৪৮ যুগলের বিয়ে হয়েছিল রাজ্যে। সেই বছর বিবাহবিচ্ছেদ হয় হাজার দুয়েক দম্পতির। পরের বছর প্রায় দেড় লক্ষ বিয়ে হয়েছিল। সে বছর ৩ হাজার দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পরে ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বিয়ের সংখ্যা অনেকটা বাড়ে, মোট ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮১৪। ডিভোর্স হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার দম্পতির। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রাজ্যে ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৭৪ বিয়ে হয়েছিল, ডিভোর্সের সংখ্যা ছাড়ায় ৫ হাজার (Divorce Cases are increasing)।
তবে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই সংখ্যা অনেকটা বড় ঠেকলেও, এই নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই বলেই মনে করছেন মনোবিদরা। তাঁরা বলছেন, এই ডিভোর্সের সংখ্যা বিয়েতে সমস্যা বাড়ার দিকে ইঙ্গিত করছে না। কারণ এইসব সমস্যা ও ডিভোর্সের ইচ্ছে, পরিস্থিতি আগেও ছিল। তবে উপায় ছিল না। কিন্তু এখন মহিলারা আর্থিক স্বনির্ভরতার পাশাপাশি মনের দিক থেকেও অনেক স্বাধীনচেতা হওয়ায় জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান না কোনওভাবেই।
মনোবিদরা একথা বললেও, এ প্রজন্মের অসহিষ্ণুতাকে অনেকেই দায়ী করে থাকেন ক্রমবর্ধমান ডিভোর্সের কারণ হিসেবে। এসবের সঙ্গে দোষ চাপানো হয়, স্মার্টফোনের মাধ্যমে পাওয়া সহজলভ্য পরকীয়া সম্পর্কের উপরেও। অনেক মাঝবয়সি বা প্রবীণ দম্পতিই প্রায়ই বলে থাকেন, 'আমাদের সময়ে এমন হতো না' বা 'আমরা এমন কথায় কথায় বিয়ে ভাঙতাম না।'
তবে এসবই খানিকটা সত্য হলেও, ডিভোর্স (Divorce Cases are increasing) মানেই যে তা কেবলই এই আধুনিক সময়ের অসুখ এবং সর্বতোভাবেই নেগেটিভ একটা বিষয়, তাও মানতে রাজি নন অনেকেই। আধুনিক প্রজন্ম মনে করছে, জোর করে দাম্পত্য টেনে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে বিচ্ছেদ করে দু'টি মানুষ মুক্ত ভাবে বাঁচতেই পারেন। এখন আর সে যুগ নেই, যে লোকলজ্জার ভয়ে বিয়ে ভাঙাই যাবে না। এমনকি এখন অনেক বয়স্ক দম্পতিও বিয়ে ভাঙার কথা ভাবছেন, ভাঙছেনও। বিচ্ছেদ মানেই যে হুলস্থূল পড়ে যাওয়া একটা ব্যাপার-- সেটাই স্বীকার করতে রাজি নন অনেকে।
তবে সব মেনে নিলেও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, এই ডিভোর্সের মাঝে পড়ে অনেক সময়ই সমস্যা তৈরি হয় সন্তানদের মধ্যে। নিজেদের আত্মনির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনে জোর করে কেউ কাউকে জড়িয়ে রাখতে না চাওয়ার যেমন যুক্তি রয়েছে, তেমনই এটাও মাথায় রাখতে হবে, সে যুক্তির ফাঁদে পড়ে কোনও শৈশব বা কৈশোর যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তবে সে সমস্যার প্রতিও এখন তেমন আমল দিতে চাইছে না এ প্রজন্ম। কারণ সুস্মিতা সেন বা করণ জোহরদের মতো সেলেব্রিটিরা যেভাবে সিঙ্গল পেরেন্ট হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছেন, তাতে সন্তান নিয়েও একা থাকার কথা ভাবছেন অনেকে।
প্রতিদিন চোঁ চোঁ করে মদ খেলে খিদে কমে, ফুলে জয়ঢাক হয় লিভার, হাঁসফাঁস করে হার্ট