শেষ আপডেট: 9th October 2024 17:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘দেশে যদি সংবিধান থেকে থাকে তাহলে শেখ হাসিনা ঠিকই বলেছেন যে তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ বিএনপি-র সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার এই মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশে তুমুল শোরগোল শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপের টেপ ফাঁস হয়। তাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি দেশের কাছাকাছিই আছি। যাতে চট করে দেশে ঢুকে যেতে পারি। আমি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনায় সভায় বিএনপি নেত্রী রুমিন এই প্রসঙ্গেই বলেন, ‘শি (হাসিনা) ওয়াজ নট রং, সংবিধান অনুযায়ী এখনও তিনিই প্রধানমন্ত্রী।
পেশায় ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বাংলাদেশে একজন মুখর রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত। সাবেক এই সাংসদ নানা জ্বলন্ত ইস্যুতে সংসদে হাসিনা সরকারকে নাস্তানাবুদ করেছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে একাধিকবার তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বয়সি রুমিনের প্রশ্নের জবাব দিতে উঠে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। এমনকী দলের অবস্থানের বাইরেও নানা সময়ে সরব হতে দেখা দিয়েছে বিএনপি-র এই নেত্রীকে। হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে রাজপথেও দেখা গিয়েছে এই নেত্রীকে।
হাসিনাকে নিয়ে রুমিনের মন্তব্য ঘিরে যথারীতি বিএনপি নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছেন। রুমিন ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, আমার সব কথাই দলের কথা হতে যাবে তার কী মানে আছে। আমি একজন স্বাধীন নাগরিক হিসাবে আমার কথা বলতেই পারি। জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সভায় রুমিন তাঁর স্বাধীনচেতা মনোভাব থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, দেশে কি সংবিধান বাতিল হয়েছে? হয়নি তো। যদি বাতিল না হয়ে থাকে তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিল কীভাবে? সংবিধানে তো অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখই নেই।
এরপরই তিনি যোগ করেন, সংবিধানের ৫৭ (ই) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা দাবি করেছেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেননি। পদত্যাগপত্রে সইও করেননি। বিএনপি নেত্রী এই প্রসঙ্গেই সাংবিধানিক জটিলতার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমাদের জন্য হয়তো ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে।’ প্রসঙ্গত, ইউনুস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সায় দেননি।
সেই খবর ফাঁস করে দিয়ে ছাত্রদের দিয়ে তাঁর অপসারণের দাবি তোলা হয়। রাতারাতি তাঁকে সরিয়ে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। আপিল বিভাগের বিচারপতিরা অন্তর্বর্তী সরকারে প্রস্তাবে সায় দেন। অনেকেই মনে করছেন, এই সরকারের বৈধতা নিয়ে আগামী দিনে গুচ্ছ মামলা হবে।
জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সংবিধান নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে রুমিন তাঁর প্রয়াত পিতার কথা বলেন। তাঁর বাবা অলি আহাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন সবজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক। ভাষা-স্বশাসন-স্বাধীনতার আন্দোলন পর্বে তিনি ছিলেন আওয়ামী লিগের নেতা এবং শেখ মুজিবুরের সমসাময়িক।
রুমিন রাজনীতিতে ধর্মের বাইরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লিগের গোড়ায় নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লিগ। আমার বাবা অলি আহাদ দলের নামের সঙ্গে ‘মুসলিম’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি করে বলেছিলেন রাজনীতিকে সর্বদা ধর্মের কবলমুক্ত রাখা উচিত। আওয়ামী লিগকে সব ধর্মের মানুষের দল হিসাবে গড়ে তোলা দরকার।’ প্রসঙ্গত, মূলত অলি আহাদের মতো কতিপয়ের চাপাচাপিকে দলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে শেখ মুজিব পার্টির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেন।
বাংলাদেশের চলতি সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলে উল্লখে আছে। আবার ধর্মনিরপেক্ষতার কথাও উল্লেখ আছে তাতে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর উল্লেখ নিয়ে রুমিন বলেন, সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। একই সংবিধানের ৮নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার যে মূলনীতি বলা আছে সেগুলি হল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতিয়তাবাদ। তাঁর প্রশ্ন, সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে আপনি কী করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি করলেন?
তিনি উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের মাথা স্থির রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চলতি সংবিধান পর্যালোচনার জন্য ইউনুস সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। রুমিন বলেন, বর্তমান সংবিধান বাতিল করা হবে, নাকি সংশোধন দরকার, এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গণভোটের মাধ্যমে করা দরকার।