শেষ আপডেট: 20th June 2024 17:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাড়িতে ফাঁকা ঘরে আলো জ্বলতে বা ফ্যান চলতে দেখলে অনেকেই রসিকতা করে বলেন, বাড়িকে তো সরকারি অফিস বানিয়ে দিয়েছিস!
সরকারি অফিসের সম্পর্কে এহেন অপবাদ নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ই দেখা যায়, সরকারি দফতরে কোনও একটি রুমে কোনও আধিকারিকই নেই, অথচ আলো জ্বলছে, ফ্যানও চলছে! কোথাও কোথাও এসিও!
এবার এই পরিস্থিতির বদল ঘটতে চলেছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা-সহ সমস্ত পুরনিগমের মেয়র, কমিশনার এবং সব দফতরের সচিব ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী এব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে খবর।
সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে এদিনের বৈঠকে পদস্থ আধিকারিকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় বলেন, অনেক সময়ই খবর আসে সরকারি অফিসে যখন লোক থাকছে না তখনও ফ্যান, আলো জ্বলছে, এমনকী এসিও ব্যবহার হচ্ছে। এভাবে বিদ্যুতের অপচয় বরদাস্ত করা হবে না।
এর ফলে শুধু সরকারি অর্থ অপচয় হয় তা নয়, সরকারি সম্পদ নষ্ট এবং প্রাণহানির ঝুঁকিও যে থাকে, এদিনের বৈঠকে জলদাপাড়ার হলং বাংলোর প্রসঙ্গ টেনে তা আরও স্পষ্ট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত মঙ্গলবার রাতে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কাঠের তৈরি দো'তলা হলং বনবাংলো। বন দফতর এবং দমকলের প্রাথমিক রিপোর্টে আগুন লাগার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এসি থেকে শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লেগে যায় বন বাংলোতে।
১৫ জুন থেকে প্রতি বছরই ওই বাংলো বন্ধ থাকে। অর্থাৎ এই সময় পর্যটকরা ছিল না। তা ছাড়া জুন মাসের গোড়া থেকেই উত্তরে বর্ষা ঢুকে পড়েছে। জলদপাড়ার গভীরে অবস্থিত হলং বাংলোয় রীতিমতো ঠান্ডা। তা সত্ত্বেও কী কারণে সেখানে এসি চালানো হচ্ছিল, ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠেছে।
বৈঠকে এই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, কারণে অকারণে সরকারি দফতরে আলো, ফ্যান এবং এসির ব্যবহার হচ্ছে। এবার থেকে এই জিনিস আর বরদাস্ত করা হবে না।
এমনকী ইচ্ছে মতো বিদ্যুৎ খরচ করেও অনেক সরকারি অফিস বিদ্যুৎ দফতরকে বিল মেটাচ্ছে না বলেও অভিযোগ। এ ব্যাপারে প্রয়োজন পড়লে যারা বিদ্যুৎ দফতরের বিল মেটাবে না, তাঁদের দফতরের বাজেট বরাদ্দ থেকে সংশ্লিষ্ট অর্থ কেটে নেওয়া হবে বলেও বৈঠকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের বৈঠকে পুরসভাগুলিকেও ঝাঁকুনি দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, বৈঠকে কলকাতা-সহ বিভিন্ন পুরসবার মেয়র ও পদস্থ আধিকারিকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলার কালচার চেঞ্জ হয়ে অন্য রাজ্যের মত হয়ে যাচ্ছে। বাইরে থেকে যে কেউ আসছে আর ইচ্ছে মতো পুরসভাগুলো টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে দিচ্ছে।
কিছু কাউন্সিলর এবং অফিসার টাকার বিনিময়ে এসবে মদত দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। সূত্রের খবর, বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, 'বাংলার বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। আমি এসব আর বরদাস্ত করব না।'
কলকাতাতেও এই ধরনের জবরদখলের কার্যকলাপ চলছে বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকেও এক হাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। সিপির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, "আপনার পুলিশ কী করছে? কলকাতায় যে যেখানে ইচ্ছে বসে পড়ছে। দোকান করছে একের পর এক। এগুলো বন্ধ করুন।"
জবরদখলের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন পুরসভার মেয়রদেরও। সূত্রের খবর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, "পুর এলাকাগুলোতে রাস্তাঘাট খারাপ। লাইট নেই। ময়লা আবর্জনা। তারওপর জবরদখলের সমস্যা। আপনারা কী করছেন? কাউন্সিলররা কি ফিল্ডে নামছে না? নাকি শুধু নিজেদের ইনকামের কথা ভাবছে?"
জানা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী একথাও বলেন, "এবার কি আমি রাস্তায় নামব?" অর্থাৎ পুরসভার মেয়ররা মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি করলে অদূর ভবিষ্যতে মেদিনীপুর থেকে মুর্শিদাবাদ, পুরসভার অলিতে গলিতে পৌঁছে গিয়ে কাজের হাল হকিকত খতিয়ে দেখতে পারেন, সেই সতর্কবার্তাও শুনিয়ে দিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকেও।