ভারত - পাকিস্তান
শেষ আপডেট: 26th April 2024 18:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেশের বেহাল আর্থিক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন পাকিস্তানের বণিক মহলের শীর্ষস্থানীয়রা। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে তাঁরা বলেছেন, চলতি অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে আপনার উচিত ভারতের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
পাকিস্তানের প্রথমসারির সংবাদপত্র ‘ডন’-এর এই খবর নিয়ে ঘরে-বাইরে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের প্রথমসারির শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা ওই পরামর্শ দেন চলতি সপ্তাহের গোড়ায়। ঘরোয়া আলোচনায় বলা ওই বক্তব্য চাপা ছিল। ডন শুক্রবার ওই খবর প্রকাশ করেছে।
দেশের বেহাল আর্থিক অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ চলতি সপ্তাহের গোড়ায় দেশের বাণিজ্য রাজধানী করাচিতে শিল্প-বাণিজ্যমহলের কর্তাদের আলোচনায় ডেকেছিলেন। সেখানে একাধিক শিল্পপতি এবং বণিক সংগঠনের পদাধিকারীরা প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দেন, আপনার উচিত হবে হিন্দুস্থানের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলার চেষ্টা করা। তাঁরা জেল বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে শাহবাজকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে ‘ডন’ জানিয়েছে।
সেই বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কে পাক প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যও নিয়েও দেশে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। ‘ডন’ জানিয়েছে, আলোচনার এক ফাঁকে শাহবাজ বলেন, ‘বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি দেখে একজন পাকিস্তানি হিসাবে আমার লজ্জাবোধ হয়।’ এই প্রসঙ্গেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। শাহবাজ হলেন, ‘ওই যুদ্ধের সময় আমি খুবই ছোট ছিলাম। আমাদের তখন বোঝানো হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তান নাকি পাকিস্তানের কাঁধে একটা বোঝা। অথচ আজ দেখছি, সেই বোঝা আমাদের পিছনে ফেলে কতদূর এগিয়ে গিয়েছে।’
বাংলাদেশকে নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়া মাত্রা যোগ করেছে। শাহবাজের মন্ত্রিসভার অন্যতম শরিক দল হল পাকিস্তান পিপলস পার্টি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের রাজনীতিতে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন পিপিপি-র প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলি ভুট্টো। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লিগের নেতা শেখ মুজিবুরের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। তাঁকে আটকাতেই ভুট্টো সামরিক কর্তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে মিলিটারি অপারেশন চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মুজিবুর।
ঘটনা হল, প্রয়াত ভুট্টোর নাতি তথা পিপিপি-র বর্তমান চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টোর মধ্যস্থতায় পাকিস্তানে জোট সরকার গড়তে পেরেছেন শাহবাজ। বিলাবল মন্ত্রিসভায় যোগ না দিলেও সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অন্যদিকে, তাঁর বাবা আসিফ আলি জারদারি বর্তমানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি। ফলে বাংলাদেশ নিয়ে শাহবাজের মন্তব্য সম্পর্কে পিপিপি-র প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে জল্পনা চলছে।
পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষ শিল্প সংস্থা আরিফ হাবিব গ্রুপের কর্ণধার আরিফ হাবিব স্বয়ং। তাঁর নেতৃত্বেই শিল্পমহল ভারতের দিকে বন্ধুত্বের বার্তা দেওয়ার পরামর্শ দেয় প্রধানমন্ত্রীকে। হাবিব দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। প্রসঙ্গত, ২০১৮ থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হওয়া দরকার বলে শাহবাজের দাদা নওয়াজ শরিফও মনে করেন বলে তাঁর মেয়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম শরিফ ক’দিন আগে ভারতীয় শিখদের এক পূণ্যার্থী দলকে জানিয়েছেন। তাঁরা পাকিস্তানে অবস্থিত শিখদের অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থান কর্তারপুর সাহিবে গিয়েছিলেন।