কাশ্মীর প্রসঙ্গে ইব্রাহিম রাইসির সমর্থন পেল না পাকিস্তান।
শেষ আপডেট: 23rd April 2024 16:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এখনও বিশ্বের তাবড় সংবাদমাধ্যমে ইজরায়েল-ইরান আঘাত-প্রত্যাঘাত নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। উত্তেজনা খানিক থিতু হলেও পারস্য উপসাগর উপকূলে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স বা ভারতের মত একাধিক দেশ। এরই মাঝে তিন দিনের সফরে সোমবার পাকিস্তানে পা রেখেছেন ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি। ইসলামাবাদে প্রথম দিনেই তিনি পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছেন। কিন্তু এসবের মাঝেই দু'দেশের বোঝাপড়া থেকে বড় রকমের সুখবর পেল ভারত।
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একাধিক বিষয় নিয়ে বৈঠকের মাঝে কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলেছিলেন পাক বিদেশমন্ত্রকের কর্তারা। চেষ্টা করেছিলেন, যাতে এই প্রসঙ্গে তেহরানের সমর্থন আদায় করতে পারে ইসলামাবাদ। বৈঠকের পরে যৌথ সাংবাদিক বিবৃতিতে কাশ্মীরের প্রসঙ্গ রাখতে পারলে তা ভারতের জন্য খানিক মাথাব্যথার কারণ হতে পারত। কিন্তু রাইসি ও সফরসঙ্গী ইরানি কূটনীতিকরা সাফ জানিয়ে দেন, দ্বিপাক্ষিক নয় এমন বিষয়ে তাঁরা নাক গলাবেন না। ফলত, যৌথ বিবৃতিতেও কাশ্মীর নিয়ে একটি শব্দও রাখতে রাজি হলেন না।
ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে ইদানিং খানিক খটাখটি লেগেছিল। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পাক-ইরান সীমান্তে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ভেতরে 'সবজ-কোহ' বলে একটি পাক জনপদ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান তখন ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামে। দাভোস থেকেই তিনি বিবৃতি দিয়েছিলেন, ইরান শুধুমাত্র জইশ-আল-আদিল নামক এক জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধেই আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু এইভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালানোকে মোটেই ভাল চোখে দেখেননি রাওয়ালপিণ্ডির কর্তারা। কূটনৈতিকভাবেও পাকিস্তান কড়া ব্যবস্থা নেয়। ইসলামাবাদে ইরানি দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তাকে ডেকে পাঠানো হয়, তেহরানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত, যিনি ঘটনাচক্রে সেই সময় পাকিস্তানে ছিলেন, তাঁকেও ফেরত যেতে নিষেধ করা হয়। মাত্র দু'দিনের মধ্যেই ১৮ জানুয়ারি ইরানের সীমান্তবর্তী সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে ড্রোন হামলা চালায় পাক সেনাবাহিনী।
এই ঘটনার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি উল্কার বেগে গরম হতে থাকে। ফলত পাকিস্তানের সঙ্গে আর বেশি ঝামেলায় জড়াতে চায়নি ইরান। তখন অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়ে ইজরায়েল। ইরানের সমর্থনপুষ্ট হেজবোল্লাহ ও অন্যদিকে লোহিত সাগরে হুথি বিদ্রোহীরা কার্যত পশ্চিমী বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে চলে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই রাইসির পাক সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর, অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের বাণিজ্যযুক্তি, আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা-সহ একাধিক ব্যাপারে কথা হয়েছে দুই দেশের।
আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে রাইসি সপার্ষদ এসে পৌঁছেছেন লাহোরে। বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান (পাক) পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ, মুখ্যসচিব জাহিদ আখতার জামান, পাঞ্জাব পুলিশের আইজি উসমান আনোয়ার-সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। সেখানে কবি আল্লামা ইকবালের সমাধিতে প্রার্থনা করেন তিনি। এলাহি ব্যবস্থার আয়োজন করেছে পাকিস্তান। কার্যত পাঞ্জাব ও সিন্ধ, দুই প্রদেশে রাইসির সফরের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছে সরকার। তবে এত কিছু করেও কাশ্মীর ইস্যুতে তেহরানকে টলাতে পারেনি ইসলামাবাদ। বাণিজ্য ও অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে ভারত-ইরানের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা সুবিদিত। এবারেও বোঝা গেল, কোনওভাবেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে বিপদে ফেলতে চান না রাইসি।