শেষ আপডেট: 6th April 2024 15:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আজ, শনিবার, ৬ এপ্রিল দেশের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির ৪৪-তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এই উপলক্ষে দেশজুড়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করছেন। সামনেই লোকসভা ভোট দরজায় ঘণ্টি বাজাচ্ছে। তাই এ বছর উল্লাসের বহরটা আরও দ্বিগুণ। কিন্তু, আজকের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে দীর্ঘতম এক ইতিহাস। ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল লাখো সমর্থকের উপস্থিতিতে দলের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি বলেছিলেন, অন্ধকার কেটে যাবে। সূর্য উঠবেই এবং কমল ফুটে উঠবে।
ইতিহাসের পাতা থেকে...
তৎকালীন জনতা দলের সভাপতি চন্দ্রশেখর, মোহন ধারিয়া এবং মধু লিমায়ে জনতা দলের শরিক জনসঙ্ঘকে বারবার বলছিলেন, দ্বৈত চরিত্র বজায় রেখে চলা যাবে না। জনতা দলের জোটে থাকতে হলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সংসর্গ ত্যাগ করতে হবে। তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি এবং তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি তাঁদের বুঝিয়ে যাচ্ছিলেন আরএসএস তাঁদের শিকড়। সঙ্ঘের কোনও সদস্যপদ হয় না। এটা একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা দেশের ঐতিহ্য, পরম্পরা, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবোধ এবং সনাতন ধর্ম রক্ষার কাজ করে। তা সত্ত্বেও জনতা দলের অন্যান্য শরিকদলগুলি তা মানতে অস্বীকৃত হয়।
জরুরি অবস্থার পরপর জনসঙ্ঘ তাদের দলের নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক দীপক মুছে ফেলে। বাজপেয়ি-আদবানির সঙ্গে কথা হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন জনতা সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সহ নেতৃবৃন্দ মুখে কুলুপ এঁটে থাকে। তখন বাজপেয়ি-আদবানি দলের সাংগঠনিক নেতা সুন্দর সিং ভাণ্ডারীকে রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নেতৃবৃন্দকে ৪ এপ্রিল এক বৈঠকে যোগ দিতে বলেন।
আদবানি ওই বৈঠকে জনতা দলের সঙ্গে মনোমালিন্যের কথা নেতাদের কাছে ব্যক্ত করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জগন্নাথ রাও জোশি, ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াত, সুন্দর সিং ভাণ্ডারী, কেদারনাথ সাহনি, মুরলিমনোহর জোশি, শান্তা কুমার, বিজয়কুমার মালহোত্রা, কুশাভাউ ঠাকরে, জেপি মাথুর, কৈলাসপতি মিশ্র, উত্তমরাও পাটিল, বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী, ও রাজাগোপাল প্রমুখ। সেখানেই জীবিত অবস্থায় সঙ্ঘের সঙ্গত্যাগ করা অসম্ভব বলে জানান সব নেতারা। ফলে, জনতা দলে ভাঙন অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়ে। তাঁদের মধ্যে আরও একজন ছিলেন, তিনি মুসলিম নেতা সিকান্দর বখত। যাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু কংগ্রেসে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর ঘোরতর বিরোধী এই নেতা পরে যোগ দেন জনতা দলে। মোরারজি মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীও ছিলেন। জনতা দলের সঙ্গে জনসঙ্ঘের ভাঙনের সময় তিনি বাজপেয়ির হাত ধরেন। কারণ, ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থার সময় তাঁদের জেলে পুরেছিলেন। সেখানেই দুজনের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। সিকান্দর বখতকে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তিনিই ছিলেন হিন্দুত্ববাদী দলের একমাত্র মুসলিম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য।
৬ এপ্রিল বিজেপি নামে এক নতুন দল আত্মপ্রকাশ করে। দলের প্রতীক ঠিক হয় পদ্ম ফুল। জনসঙ্ঘের সভাপতি বাজপেয়িকেই নতুন দলের সভাপতি করা হয়। ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ২টি আসনে জেতে। ইন্দিরা গান্ধীর নিধনের পর গোয়ালিয়রে মাধবরাও সিন্ধিয়ার কাছে হেরে যান অটলবিহারী বাজপেয়ি। তিনি বলেন, আমরা ভোটে হেরে গিয়েছি, যুদ্ধে হারিনি। এই মনোবল নিয়েই ১৯৮৯ সালে বিজেপি ৮৫টি আসনে জেতে। ১৯৯১ সালে ১২০টি আসনে। ১৯৯৬ সালে ১৮২টি আসনে জিতে লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ি।
বাজপেয়ির প্রথম সরকারের আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র ১৩ দিনের। ফলে অনিবার্য নির্বাচনে ফের বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং বাজপেয়ি দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন। এবার সরকারের মেয়াদ ছিল ১৩ মাস। এনডিএ-র শরিকরা সরে দাঁড়ালে লোকসভার আস্থা হারান বাজপেয়ি। এরপর ১৯৯৯ সালে ফের এনডিএ ভোটে জিতলে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন বাজপেয়ি। এবার পূর্ণ মেয়াদ ছিল এই সরকারের। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় এলে মনমোহন সিং টানা দুবার প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ-র হাত ধরে ফের ক্ষমতায় আসে পদ্মফুল। এখনও তা চলছে।
কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
যাঁদের অসামান্য ত্যাগ ও নিষ্ঠা ছাড়া এই দল আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পারত না, আজ আমি তাঁদের স্মরণ করছি। আমাদের দল দেশবাসীর অতি প্রিয় হয়েছে এই কারণে যে, আমরাই একমাত্র দল, যারা দেশ ও জাতিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছি।