Advertisement
Advertisement
শেষ আপডেট: 13 February 2024 13:18
কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে যে আদি পরিবারের নাম জড়িয়ে আছে তাঁরা হলেন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। অক্টোবরে দুর্গাপুজো হোক কিংবা ডিসেম্বরের চণ্ডী মেলা, সাবর্ণ পরিবারের বাড়ি গুলি শক্তি পুজোর পীঠস্থান। আবার রথযাত্রাতেও সাবর্ণদের বড়বাড়ির রথ ঐতিহাসিক। বড়িশার সাবর্ণ বড়বাড়ি পরিবার প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজন করে ইতিহাস উৎসব। এ বছর এই ইতিহাস উৎসব পা রাখল ১৮ বছরে। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবের সূচনা হল গত ১১ ফেব্রুয়ারি চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজো পর্যন্ত।
ইতিহাস উৎসবের সূচনা করলেন বাংলা সংস্কৃতির লেজেন্ড থেকে নতুন যুগের নামী শিল্পীরা। নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, বিশিষ্ট পরিচালক রাজা সেন, গায়িকা সোমলতা আচার্য চৌধুরী, বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা নীলাদ্রি লাহিড়ি প্রমুখ উদ্বোধন করলেন অনুষ্ঠানের। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবে এ বছরের থিম ইতালি। তাই ইতালির কনসাল জেনারেল রিকারো ডালা কোস্টা ছিলেন এই অনুষ্ঠানের প্রধান মুখ। রোমান ইতিহাসের দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী উৎসবে হাজির করেছেন সংগ্রাহক শৌভিক রায়।
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক দেবর্ষি রায়চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী সুচরিতা রায়চৌধুরী এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা। তাঁদের স্বপ্ন দেখা চারাগাছটি আজ ১৮ বছরে এসে সাবালক হল। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাতেও ছিলেন দেবর্ষি রায়চৌধুরী। দেবর্ষি-সুচরিতা দুজনের সাজেই ছিল বনেদী পরিবারের অতীতের নস্টালজিয়া।
ইতালি প্রসঙ্গে বিভাস চক্রবর্তী বললেন, "ইতালির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটা গভীর। ইতালির নাট্যকার লিউইজি পিরানদেল্লোর ‘সিক্স ক্যারেক্টার্স ইন সার্চ অফ অ্যান অথর’ থেকে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত অনুবাদ করে লেখেন ‘নাট্যকারের সন্ধানে ছ’টি চরিত্র’। পরিচালনা করেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে ইতালির নোবেলজয়ী নাট্যকার দারিও ফো-র নাটক নিয়ে চর্চা হয় এবং তাঁর নাটক ‘মৃত্যু না হত্যা’, ‘হচ্ছেটা কী’ নাটকগুলি মঞ্চস্থ হয় এই বাংলায়। "আশি পেরনো বিভাস চক্রবর্তী আরও জানালেন তিনি বেহালার গর্ব লেজেন্ডারি গীতিকার মোহিনী চৌধুরী ও লেজেন্ড গায়ক সত্য চৌধুরীর ভক্ত তিনি। মোহিনী চৌধুরীর জীবন নিয়ে বিভাসবাবু নাটক মঞ্চস্থ করতে চান।
অন্যদিকে সত্য চৌধুরী সম্মান পুরস্কার প্রদান করা হয় সোমলতাকে। সোমলতার হাতে এই সম্মান তুলে দেন সত্য চৌধুরীর ভাইপো পরমানন্দ চৌধুরী।
সোমলতা বললেন "এই সাবর্ণ পরিবারে আজকের সুন্দর মুহূর্তে হয়তো বিশাল সংখ্যক মানুষের ভিড়় নেই, কিন্তু যাঁরা ইতিহাসের গুরুত্ব বোঝেন, তাঁরা অবশ্যই রয়েছেন, এটাই পরম প্রাপ্তি। এই উৎসবের মর্ম যারা বুঝবেন তারাই আসুন। সম্মান করুন অতীত সংরক্ষণ কাজটিকে। "মায়াবনবিহারিণী হরিণী" গানও দু'কলি গেয়ে শোনান সোমলতা। যে রবীন্দ্রসঙ্গীত পূর্বে সত্য চৌধুরী রেকর্ড করেছিলেন।
গুণীজনরা উদ্বোধন করেন সাবর্ণ সংগ্রহশালায় ইতিহাস উৎসবের। নীলাদ্রি লাহিড়ি বললেন "সাবর্ণ পরিবার যে ইতিহাস উৎসব করে চলেছে সাড়ম্বরে তা বেশ বিরল এই আত্মভোলা বাঙালি প্রজন্মের কাছে।"
ইতিহাস উৎসবের সূচনার পাশাপাশি পরিবারের ঐতিহ্যবাহী হাতে লেখা পত্রিকা ‘সপ্তর্ষি’র চৌত্রিশতম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। উৎসবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নিউ আলিপুর কলেজ। নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী সহ নিউ আলিপুর কলেজের ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
কলকাতার ট্রামের ইতিহাস, কালীঘাটের আদিকথা, সাবর্ণ পরিবারের পুজোর ইতিহাসের সঙ্গে মৃণাল সেন ও তপন সিনহার শতবর্ষকে রাখতেও ভোলেনি সাবর্ণ পরিষদের ইতিহাস উৎসব। সরস্বতীর নানা রূপ ডোকরা থেকে শুরু করে পট রয়েছে এই উৎসবের প্রদর্শনীতে। এছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের লেখা চিঠি। রোজ সন্ধ্যায় রাখা হচ্ছে কুইজ থেকে সঙ্গীত অনুষ্ঠান।
১৭০০ থেকে ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের হারিয়ে যাওয়া সেকালের গান গাইবেন ডঃ শ্রিয়ংকর আচার্য। যেসব গান শোনার সুযোগ চট করে মেলেনা। আবার উৎসবে থাকবে প্রণব রায়ের গান। গীতিকার প্রণব রায় ও সাবর্ণ রায়চৌধুরী-দের বংশের। উৎসবের সন্ধ্যায় উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। লাইভ শ্রুতিনাটক করবেন নীলাদ্রি লাহিড়ি ও কবিতা লাহিড়ি। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবচলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বেহালা পেরিয়ে বড়িশা। বড়িশা সখেরবাজারে নামুন। সখেরবাজারে সাবর্ণদের বড়বাড়ি বললেই যে কেউ দেখিয়ে দেবে।
Advertisement
Advertisement