শেষ আপডেট: 8th February 2024 20:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে রাজ্যের মোট ঋণের অঙ্ক বলা হয়েছে, ৬ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে যার পরিমাণ ছিল ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা।
বিরোধীদের বক্তব্য, ঋণের অঙ্ক থেকেই রাজ্যের বেহাল আর্থিক চিত্রটি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সরকারের 'আয় কম, ব্যয় বেশি'। এই অর্থনৈতিক দর্শন ক্রমশ রাজ্যকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে তুলছে বলে তাঁদের মত।
নবান্নের কর্তাদের অবশ্য দাবি, বাম জমানার সঙ্গে বর্তমান সরকারের বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে গুণগত ফারাক রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নাগরিক কল্যাণে সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করছে। জনমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নে পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। সামাজিক খাতে এই বিনিয়োগ তৃণমূল স্তরের অর্থনীতিকে মজবুত করছে বলে তাঁদের মত। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের হাতে নগদের জোগান বাড়ছে। তার ফলে বাজারে চাহিদা বাড়বে। তাতে উৎপাদন বাড়বে।
দৃষ্টান্ত দিয়ে এক সরকারি কর্তা বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়ে দু কোটি হয়েছে। ২০২১-এ এই প্রকল্প চালুর সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরেই তা বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরে এই প্রকল্পে খরচ ২৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনার দাবিতে গত সপ্তাহে ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সেই মঞ্চে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, একশ দিনের কাজে শ্রমিকদের প্রাপ্য রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেবে। অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, শুধু এই খাতেই অতিরিক্ত ৩৭৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
বিরোধী দলগুলি অবশ্য গোড়া থেকেই বলে আসছে একের পর এক ভাতা চালু করে রাজ্য সরকার ভোটের লক্ষ্যে খয়রাতির রাস্তা নিয়েছে। ঋণের অঙ্ক বেড়ে চলায় তা পরিশোধ করতেই রাজ্যকে বিপুল খরচ করতে হচ্ছে। ফলে পরিকাঠামো খাতে ব্যয় দিন দিন কমছে। স্থায়ী সম্পদ তাই তৈরি হচ্ছে না। তার জেরে বেকারি বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার পেশ হওয়া রাজ্য বাজেট অনুযায়ী সুদ ও আসল মিলিয়ে ঋণ পরিশোধ করতেই বছরে ৭৬ হাজার কোটি টাকা কোষাগার থেকে চলে যায়। এর মধ্যে সুদ বাবদ গুণতে হয় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এছাড়া বড় খরচের মধ্যে আছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা খাতে ব্যয়। এই খাতে আগামী অর্থ বছরে ৬৬ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কর্মচারী স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন পেনশন স্কিম চালু করেনি। ফলে বাম জমানার মতো বর্তমান রাজ্য সরকারেরও পেনশন খাতে ব্যয় বাড়ছে। অনেক রাজ্য এখন চাপে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় হাঁটছে। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য পুরনো পেনশন ব্যবস্থা চালু করার ভাবনা আছে মোদী সরকারেরও। কেন্দ্রের অর্থ সচিবকে মাথায় রেখে এজন্য কমিটি গড়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। অর্থাৎ যে বিজেপি খয়রাতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদেরও সামাজিক দায়ের কথাটাই ভাবাচ্ছে। কারণ রাজনীতির দায় সবচেয়ে বড়।