শেষ আপডেট: 23rd April 2019 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বুধবারের সকালটা কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে একটু অন্যরকমই ছিল। থ্রিসি গেট থেকে ৩০ই গেট পর্যন্ত শয়ে শয়ে মানুষের ভিড়। পরনে ইউনিফর্ম, হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান। দিল্লি, মুম্বইয়ের পর এ বার কলকাতা। জেট কর্মীদের কান্নায় ভিজল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ দিন সকাল থেকে কলকাতা বিমানবন্দরের গেটে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন জেট কর্মীরা। এঁদের সকলেরই পরিচয়, ঝাঁপ ফেলে দেওয়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান সংস্থার কর্মী। প্রতিবাদে উচ্চ-নিম্ন পদের ভেদাভেদ নেই। মিছিলে যেমন আছেন পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী, তেমনই রয়েছেন গ্রুপ ফোর স্টাফও। সকলেরই বেতন আটকা পড়েছে তিন মাসেরও বেশি। সকলেরই মনে আশা জেট ফিরবে একদিন। কালো দিন পেরিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবে সংস্থা। প্রতিবাদকারীদের স্লোগান একই, ‘জেটকে বাঁচান, আমাদের আবার আকাশে উড়তে দিন।‘ পাশ থেকে জনা কয়েক পাইলটকে বলতে শোনা গেল, ‘তাড়াতাড়ি করুন, আমাদের লম্বা পথ যেতে হবে।’ এই লম্বা পথের শেষ কোথায় সেটা এখনও বোধহয় অজানা। কয়েকজন বিমানকর্মী জানালেন, ঋণদাতারা অবিলম্বে ফান্ডের ব্যবস্থা করলে ফের ডানা মেলতে পারবে জেট। বাঁচবে প্রায় ২২ হাজার জেট কর্মীর পরিবার। দিন কয়েক আগেই সংস্থা ঘোষণা করেছিল, পুঁজির অভাবে আপাতত পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। তার পর থেকেই নানা জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কর্মীরা। প্রতি জেটের কর্মী সংগঠনের আর্জি, অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে জেটকে বাঁচান। বিপুল ঋণের পুঁজি মেটাতে এগিয়ে আসুক সরকারও। জেটের কাঁধে এই মুহূর্তে ৮,৫০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে কর্মীদের বকেয়া বেতন। ফেরত দিতে হবে বাতিল যাওয়া উড়ানগুলির টিকিটের দামও। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে জ্বালানি সংকট। ফলে অনেকে মনে করছেন, নতুন করে লগ্নিকারীরা পুঁজি না ঢাললে এর পরে জেটের চাকা কী ভাবে গড়াবে তা বলা বেশ কঠিন। এই বোঝা মাথায় নিয়ে সংস্থা আপাতত তাকিয়ে নিলাম প্রক্রিয়ার দিকে। যার ফলাফল বুঝতে এখনও অন্তত দু’তিন সপ্তাহ বাকি। জেট ফের ডানা মেলবে কি না তার উত্তর নেই ২২,০০০ কর্মীর কাছে। সংস্থার সিইও বিনয় দুবে পাইলটদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, জেট আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আকাশ দখলের লড়াইয়ে ফের একবার নিজের বীরত্ব দেখাবে। তবে আশ্বাসই সার, আদৌ সেটা পরিণতির দিকে এগোবে কি না জানা নেই সংস্থার হাজারের বেশি পাইলটদের। এ দিনের প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন জেট কর্মী সুদেষ্ণা গুহ। ‘‘আমাদের আবেদন বলুন নিবেদন বলুন, দয়া করে জেটকে বাঁচান। আমাদের আকাশে উড়তে দিন। জেটের এত সুন্দর একটা পরিবার ছাড়খাড় হয়ে যেতে বসেছে, দয়া করে কিছু করুন।’’ কথা বলতে বলতেই চোখ ছলছল করে উঠল সুদেষ্ণার। বললেন, ‘‘আমাদের একটাই অনুরোধ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফান্ড রিলিজ করে জেটকে বাঁচান। আমরাও দেখিয়ে দিতে চাই যে আমরাও পারি, সবাই যদি পারে তাহলে আমরাও পারি। আমাদের নতুন করে শুরু করতে দিন। ’’ তাঁর দাবি, শুধু ২২ হাজার কর্মী নন, জেট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রায় এক লক্ষ পরিবার তছনছ হয়ে যাবে সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে। https://www.youtube.com/watch?v=9OtltBjGsik&feature=youtu.be মার্চের শেষে ১ টাকার বিনিময়ে জেটের ৫১% শেয়ার নিয়েছে এসবিআইযের নেতৃত্বাধীন ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু পুঁজির অভাবে গত সপ্তাহ থেকেই পরিষেবা বন্ধ করেছে জেট। সূত্রের খবর, সংস্থার অংশীদারি বিক্রির প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে এতিহাদ এয়ারওয়েজ, টিপিজি ক্যাপিটাল, ইন্ডিগো পার্টনার্স, এনআইআইএফ। নিলাম প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই জেটের সম্পত্তি কাজে লাগিয়ে কিছু টাকা তুলতে চাইছে ব্যাঙ্কগুলি। তার জন্য সংস্থার ১৬টি বিমান লিজ দেওয়ার কথাও ভাবছে তারা। ভারতের এখন যে কটি বেসরকারি বিমান সংস্থা রয়েছে, জেট তাদের মধ্যে সব থেকে পুরনো। ১৯৯৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে জেট। প্রথম আর্থিক সংকট তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে বার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন নরেশ গয়াল। তবে এ বারের অবস্থা ভিন্ন। জেটের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন গয়াল ও তাঁর স্ত্রী। জেটের সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেন সংস্থার সিইও বিনয় দুবে, বিমান সচিব প্রদীপ সিংহ খারোলা ও জেট ইউনিয়নের কিছু কর্মীরা। বিমানকর্মীদের ধৈর্য রাখতে বলে দুবে জানিয়েছেন, অন্তত এক মাসের বকেয়া মেটানোর কথা ভাবছে সংস্থা। তবে এই আশ্বাসে বিশেষ খুশি হতে পারেননি সংস্থার কর্মীরা। অনেকেই জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তাঁরা। কখনও ছেঁটে ফেলা হয়েছে উড়ানের সংখ্যা, কখনও মাঝ রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিষেবা। এই অনিশ্চয়তার মেঘ পুরোপুরি না কাটা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেন না কেউই। আরও পড়ুন: https://www.four.suk.1wp.in/news-national-save-our-family-jet-employees-protest-as-jet-airways-grounded/