শেষ আপডেট: 19th June 2023 11:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জুন মাসের রাত। ওয়াশিংটনের অ্যাডামস মর্গ্যান শহরে তখন উপচে পড়ছে ভিড়। খানা-পিনা, নাচ-গান, হই-হুল্লোড়ে মাতোয়ারা সবাই। তবে শুধু মানুষই নয়, সেই ভিড়ের মধ্যেই মিশে রয়েছে আরও বেশ 'কয়েকজন।' এমনিতে ছোটখাটো, তবে সংখ্যায় তারা এতই বেশি যে মার্কিন রাজধানীর পথঘাট চলে গেছে তাদেরই দখলে। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে গোঁফের গোছা, রয়েছে লম্বা ল্যাজও। অবস্থা এমনই, যে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো বাহিনী নামাতে হয়েছে মার্কিন প্রসাশনকে।
কথা হচ্ছে ইঁদুরদের নিয়ে। ওয়াশিংটনের অ্যাডামস মর্গ্যান শহরের আনাচে কানাচে এখন ইঁদুরের উৎপাতে টেকা দায়। নাইট ক্লাব, রেস্তোরাঁ আর পাবগুলির উচ্ছিষ্ট খাবারের লোভে একেবারে রাস্তায় উঠে আসছে তারা, ঢুকে পড়ছে ঘরের ভিতর। কেউ কেউ আবার কামড়াচ্ছেও লোকজনকে। ডাস্টবিন আর নর্দমা থেকে টেনে বের করছে নোংরা। তাদের কীর্তিতে এখন দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত স্থানীয়দের। আর তা থেকে বাঁচতে দিনে প্রায় ১৩-১৪ হাজার ফোন পাচ্ছেন সিটি হটলাইনের কর্মীরা।
ইঁদুরের উৎপাত থেকে বাঁচতে শেষপর্যন্ত অন্য পন্থা নিয়েছে ওয়াশিংটন প্রশাসন। রীতিমতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর এবং বিড়ালদের পথে নামানো হয়েছে। আর কাজে যোগ দিয়েই ইঁদুর-নিধন যজ্ঞে নেমে পড়েছে তারা। এই অভিযানকে বলা হচ্ছে র্যাটিং। বোমানি নামে র্যাটিং বাহিনীর এক সদস্য জানিয়েছেন, ইঁদুরগুলি এতটাই বেপরোয়া যে হিংস্র কুকুর দেখেও তারা পালিয়ে যাওয়ার কোনও চেষ্টাই করছে না। উল্টে কুকুরগুলির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকছে। যদিও সেই দৃষ্টিবিনিময় বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। শিকারি কুকুর বাহিনীর দাঁত-নখের কাছে অল্প সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। তাদের শিরদাঁড়া ভেঙে মুহূর্তেই যন্ত্রণাবিহীন মৃত্যু উপহার দিচ্ছে র্যাটার কুকুররা।
এভাবেই নাকি খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসছে ইঁদুরের উৎপাত। একটি র্যাটার কুকুর নাকি ৩ ঘণ্টার মধ্যেই অন্তত ৩০টি ইঁদুরকে নিকেশ করেছে। বসে নেই বেড়ালরাও। যদিও তাদের লক্ষ্য মূলত নেংটি ইঁদুররা। সব মিলিয়ে রাজধানী শহরে নাকি রাতারাতি ইঁদুরের দৌরাত্ম্য অনেকখানি কমে গেছে।
এক ইঁদুর-বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এককালে পেস্ট কন্ট্রোলের কাজেও ব্যবহার করা হত শিকারি কুকুর-বিড়ালদের। ইঁদুর মারার ক্ষেত্রেও নাকি বিষ প্রয়োগের থেকেও এই পদ্ধতি বেশি কার্যকর। বিষ প্রয়োগের ফলে ইঁদুরের মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহ যখন অন্য প্রাণী খায়, তখন তাদের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আবার ফাঁদ পাতলে ইঁদুর ধরা পড়তে দিনের পর দিন কেটে যায়। তাই ইঁদুরকূলের দৌরাত্ম্য সামাল দিতে র্যাটার বাহিনীর সাহায্য নেওয়াই বেশি উপযুক্ত বলে মনে করছেন তিনি।
৭০০ বছর আগের জার্মানির হ্যামেলিন শহরের প্রেক্ষাপটে এমনই এক গল্প লেখা হয়েছিল, যা আজও ক্লাসিক হয়ে থেকে গেছে। সে গল্পে, ছোট্ট সে শহরের মানুষ ইঁদুরের অত্যাচারে এমনই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ইঁদুরবাহিত রোগ যেমন মহামারীর আকার ধারণ করে, তেমনই ইঁদুরের অত্যাচারও দিন দিন বেড়েই চলে। এমন সময় প্রশাসনিক কর্তারা ঘোষণা করেন, শহরকে যে ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে, তাকে মোটা অঙ্কের পুরস্কার দেওয়া হবে। সেই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে শহরে এসে হাজির হয়েছিলেন রহস্যময় এক বাঁশিওয়ালা। তিনি বাঁশি বাজাতে শুরু করতেই তাঁর অদ্ভুত এক অচেনা সুর শুনে, শহরের সমস্ত গর্ত থেকে পিলপিল করে বেরিয়ে আসতে লাগল ইঁদুরের দল। তার পরে সে সব ইঁদুরকে মায়াবী সুরের টানে নিয়ে গিয়ে গিয়ে ওয়েজার নদীতে ফেলে দিলেন বাঁশিওয়ালা। বাঁচল শহরবাসী।
এ গল্প অবশ্য এখানেই শেষ নয়, তবে পরের অংশটুকু আর প্রাসঙ্গিক নয় এই প্রতিবেদনে। এখন কোথায় বা সেই হ্যামেলিন, কোথায় বা সেই বাঁশিওয়ালা! তাই বাধ্য হয়েই কুকর-বিড়ালের উপরেই ভরসা ওয়াশিংটন প্রশাসনের।
সৌমেন মিত্রর ব্যাচের অফিসার দেশের 'র’ চিফ হলেন, কে এই রবি সিনহা