শেষ আপডেট: 24th November 2019 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মিশর মানেই মমি। মিশর মানেই এক অজানা রহস্য। নীলনদের তীরে খ্রিস্টের জন্মের অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার বেশিরভাগ আধুনিক যুগেও রহস্য ও বিস্ময়ে মোড়া। বিস্ময়ের অন্যতম মমি। মৃত্যুর পরেও জীবনের অস্তিত্বে বিশ্বাসী মিশরীয়রা শুধুমাত্র যে রাজা বা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নশ্বর শরীর সংরক্ষণ করে রাখত তা নয়, পশুপাখিদের মৃতদেহও মমি করে রাখার রেওয়াজ ছিল মিশরে। পাখি, ইঁদুর, বেড়াল-সহ এমন নানা প্রাণীর মমি বহুসময় আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে সিংহশাবকের মমি এই প্রথম। সম্প্রতি গিজা পিরামিডের সাক্কারার কাছে এমনই কিছু রহস্যময় মমির খোঁজ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। মিশরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণে সাক্কারা হল সুপ্রাচীন সমাধিক্ষেত্র। রহস্যময় সমাধির খোঁজ এখানে আগেও মিলেছিল। ফের চমক দিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। মিশরের পুরাতত্ত্ব দফতরের মন্ত্রী খালেদ আল-এনানি জানিয়েছেন, সাক্কারারই একটি সমাধিক্ষেত্রের মধ্যে মিলেছে ২৫টি কাঠের বাক্স যার মধ্যে ছিল অজস্র বেড়ালের মমি। আর ছিল দু’টি সিংহ শাবক ও কয়েকটি কুমিরের মমি। তা ছাড়াও ৭৫টি বাক্সভর্তি কাঠ ও ব্রোঞ্জের তৈরি বেড়ালের মূর্তিও উদ্ধার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এই সমাধি পর্যবেক্ষণ করে মিশরের সুপ্রিম কাউন্সিল অফ অ্যান্টিকুইটিজ-এর সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তাফা ওয়াজিরি জানিয়েছেন, এই সমাধি একেবারেই অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। মনে করা হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দ থেকে ৬০১ অব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ওই সমাধি। প্রতিটি কাঠের বাক্সের গায়ে হায়ারোগ্লিফিক লিপি খোদাই করা। পাঁচটি বেড়ালের মতো আকৃতির মমি-র সিটি স্ক্যান করে দেখা গেছে সেগুলির মধ্যে দু’টি সিংহশাবকের মমি। বাকি তিনটিও সিংহশাবক কি না সেটা এখনও নিশ্চিত নন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। বিস্তারিত পরীক্ষানিরীক্ষার পরেই সেটা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ওয়াজিরি। সভ্যতার প্রথম দিকে মিশরীয়রা মৃতদেহ মরুভূমিতে সঙ্কীর্ণ গহ্বরে সমাধি দিত। ফলে গরম ও শুষ্ক বালুকণায় দেহ স্বাভাবিক উপায়ে মমিতে পরিণত হত। মিশরীয়রা বুঝেছিল, নিথর দেহ সাধারণভাবে শবাধারে রেখে দিলে তাতে পচন ধরবেই। তাই পচন রোধে কোষ থেকে অক্সিজেন ও আর্দ্রতা দূর করার দরকার। এর জন্য তারা ব্যবহার করত বিশেষ প্রলেপ। তারপর সেই প্রলেপ মাখানো দেহ মুড়ে বা ঢেকে ফেলা হত লিনেন বা বিখ্যাত মিশরীয় কটনে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, মিশরীয়দের হায়ারোগ্লিফিক লিপি পাঠ করে যতদূর জানা গেছে এই মমি তৈরির প্রক্রিয়ায় সময় লাগত প্রায় আড়াই মাস। ফারাও ছাড়াও পোষ্যদের দেহও মমি করে রেখে দেওয়া হত শবাধারে। তাই বেড়াল, ইঁদুর এমনকি পাখির মমিও মিলেছে অজস্র। তবে সিংহশাবকের দেহ কেন মমি করে রাখা হয়েছিল সেটা এখনও রহস্য। কাঠের বাক্সের উপরে খোদাই করা হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করে সেই রহস্যের পর্দা তোলার চেষ্টা চলছে জোরকদমে। ফরাসি ইজিপ্টোলজিস্ট অ্যালেন জিভি বলেছেন, এর আগে পূর্ণবয়স্ক সিংহের মমির খোঁজ মিলেছিল। তবে সিংহশাবকের মমি এই প্রথম। কাঠের বাক্সের মধ্যে ছিল আরও রহস্য। কুমির শিশুর মমি, বেড়ালের মতো আকারের আরও কয়েকটি প্রাণীর মমি এবং অজস্র মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। মিশরের প্রাচীন টলেমি সাম্রাজ্যের আমলের প্রায় ৫০টি পশুর মমির খোঁজ মিলেছিল সম্প্রতি। ৩০ খ্রিস্টপূর্বে রোমানরা আসার আগে পর্যন্ত ৩০০ বছর স্থায়িত্ব ছিল এই টলেমি সাম্রাজ্যের। টুনা-এল-গ্যাবেলে মাটির নীচে চল্লিশ লক্ষ আইবিস পাখির মমি পাওয়া গেছে। সাক্কারায় প্রাচীন করবস্থানে পাওয়া গেছে সাড়ে সতেরো লক্ষ আইবিসের মমি। গবেষকরা মনে করছেন জ্ঞানের দেবতা থথকে উৎসর্গ করা হয়েছিল এই পাখিগুলি। তাঁদের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দের মধ্যেই এই পাখিগুলিকে মমি করা হয়েছিল। থথের শরীর মানুষের মতো, তবে মুখ আইবিসের মতো।