Advertisement
Advertisement
শেষ আপডেট: 15 December 2023 07:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মণিপুরের তিনটি মর্গে পড়ে থাকা ৯৪টি মরদেহের মধ্যে ৮৮টি দু সপ্তাহের মধ্যে সৎকার করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে ১৩ ডিসেম্বর। অবশেষে সৎকারের উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের অনুরোধে কেন্দ্রীয় সরকার হেলিকপ্টার বরাদ্দ করে। কপ্টারে চাপিয়ে দেহগুলি সংশ্লিষ্ট জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সড়ক পথে দেহগুলি নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বলে রাজ্য সরকার মনে করছিল। মণিপুরে জাতি দাঙ্গায় শুরু এ বছর ৩ মে। মর্গে পড়ে থাকা দেহগুলি সেই সময়ে নিহতদের।
সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য ছিল, চলতি পরিস্থিতিতে নাগরিক সংগঠনগুলির গণ সৎকারের দাবি মানা সম্ভব নয়। তাতে রাজ্যে জাতিগত সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে। সরকারই দেহগুলির সৎকার করবে।
কিন্তু সংঘর্ষে লিপ্ত কুকি এবং মৈতেই সম্প্রদায় দাবিতে অনড় ছিল, দেহ তাদের সংগঠনের হাতে দিতে হবে। সেই দাবি রাজ্য সরকার অবশেষে মেনে নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলায় সংগঠনের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হছে গণ সৎকারের জন্য।
মণিপুরে গত ৩ মে জাতিদাঙ্গা শুরুর পর এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ১৭৫ জন নিহত হয়েছেন। বেসরকারি মতে সংখ্যাটি অনেক বেশি। সংঘর্ষ চলাকালে বহু দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়েছে বলে দু পক্ষই দাবি করেছে। নিহত ১৭৫ জনের মধ্যে ৯৪ জনের দেহ রাজ্যের তিনটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল। সেগুলির সৎকার করা যাচ্ছিল না।
এরমধ্যে ৮৮টি দেহ সনাক্ত করা সম্ভব হয়। পরিবারের লোকেরা সনাক্ত করার পর তাদের হাতে দেহ তুলে দিয়ে চায় প্রশাসন। কিন্তু মণিপুরে কুকি ও মৈতেই—সংঘর্ষে লিপ্ত দুই সম্প্রদায়েরই নাগরিক সমাজ দাবি তোলে তাদের সম্প্রদায়ের নিহতদের দেহগুলি তারা গণ সৎকার করবে। দেহগুলি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। প্রশাসন গোড়ায় তাতে রাজি হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত একটি কমিটির বক্তব্য ছিল, একাধিক নাগরিক সংগঠন নিহতদের পরিবারকে দেহ সৎকারে বাধা দিচ্ছে। মণিপুরে মানবিক সংকটের বিষয়গুলি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দেন। সেই কমিটি হিংসা বিদ্ধস্ত রাজ্যটিতে এই মানবিক সংকট চিহ্নিত করে।
৯৪টির মধ্যে ছয়টি দেহের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। বাকি ৮৮টি মৃতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা ব্যক্তিগতভাবে দেহ নিতে অস্বীকার করেন।
সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত কমিটির চেয়ারপারসন বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) গীতা মিত্তলের বক্তব্য ছিল, বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর চাপ রয়েছে পরিবারগুলির উপর। তাই স্বজনেরা দেহ নিতে আসছে না। প্রধান বিচারপতির এজলাসে এই মর্মে রিপোর্ট জমা হওয়ার পর শীর্ষ আদালত মণিপুর সরকারকে বলে, সনাক্ত হওয়া দেহগুলি যেন দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রশাসন সৎকারের ব্যবস্থা করে। সাত মাস হতে চলল মর্গে পড়ে আছে দেহগুলি। সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে এ মাসের ১৩ তারিখ।
সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত কমিটি শীর্ষ আদালতকে দেওয়া রিপোর্টে বলেছিল, দেহগুলির সরকারি উদ্যোগে সৎকার করা হোক। এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে অনুরোধ করে কমিটি।
কুকিদের একটি সংগঠন এর আগে ৩৫টি দেহের নিজেরাই সৎকার করে। সেই দেহগুলির পরিচয় প্রশাসনের কাছে নেই। ৩ মে জাতি দাঙ্গা শুরুর পর সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হন। আহত হাজারের বেশি। তাদের অনেকের এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
আদালতে কুকি ও মৈতেই দুই সম্প্রদায়ের তরফেই দাবি করা হয়েছিল, তাদের হাতে সম্প্রদায়ের নিহতদের দেহগুলি দেওয়া হোক। তারা গণ সৎকারের ব্যবস্থা করতে চায়। কিন্তু প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই দাবি মানতে চায়নি। তাদের বক্তব্য, এতে অশান্তি ফের বেড়ে যাবে। গণ সৎকারের ছবি মানুষের মনে হিংসা জাগ্রত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে এমন দাবি মানা সম্ভব নয়।
সরকারি সূত্রে খবর, এই ব্যাপারে আর জেদাজেদির সুযোগ না দিয়ে রাজ্য প্রশাসন দুই সম্প্রদায়ের দাবিই মেনে নিল। রাজ্য সরকারের অনুরোধে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেহ বহনের জন্য দুটি হেলিকপ্টার বরাদ্দ করেছিল।
Advertisement
Advertisement