শেষ আপডেট: 22nd June 2023 13:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোলো ট্রাভেল। যত দিন যাচ্ছে, ক্রমশই এই শব্দ দুটির সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠছেন মানুষজন। ভ্রমণপ্রিয় হিসেবে বাঙালির বরাবরই সুনাম রয়েছে। তাদের নাকি পায়ের তলায় সর্ষে, সময় সুযোগ হলেই হল। বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু সবসময়ই কি সঙ্গে কাউকে না কাউকে থাকতেই হবে? একেবারেই তেমনটা নয়। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি তো রয়েছেই, তার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্ম ক্রমশই 'সোলো ট্রাভেল'-এ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এর অর্থ হল, একা ঘোরা। আসলে বর্তমান সময়ের ব্যস্ত জীবনযাত্রার মাঝে নিজের সঙ্গেই ঠিক করে সময়টুকু কাটানো হয়ে ওঠে না বহু মানুষের। তাই আর কেউ নয়, একান্তই নিজের সান্নিধ্য উপভোগ করতে অনেকেই আজকাল ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন।
সারা পৃথিবী জুড়েই সোলো ট্রাভেলার-এর সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ। আর তাঁদের দৌলতেই দেশ-বিদেশের নানা জায়গা চাহিদার নিরিখে পর্যটন মানচিত্রে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। বর্তমানে এই তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়। গুগল বলছে, সোলো ট্রাভেল স্পট হিসেবে নেটমাধ্যমে গত এক বছরে হ্যানয়কে খোঁজাখুঁজির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৪৬%। কিন্তু কী এমন রয়েছে এই শহরে যার জন্য এই বিপুলসংখ্যক মানুষের একা ঘোরার জায়গা হিসেবে অন্যতম পছন্দ হয়ে উঠেছে এটি? আজ সেই সন্ধানই দেব আপনাদের।
ভিয়েতনামের এই রাজধানী শহরটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। এখানে রয়েছে অজস্র সুপ্রাচীন স্থাপত্য। কয়েক শতকের পুরনো ঐতিহাসিক মন্দির ঘুরে দেখা, বিভিন্ন ফুড মার্কেটে ঢুঁ মেরে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া, শপিং, ঝিলের ধারে বসে নিজের সঙ্গেই কোয়ালিটি টাইম কাটানো- কত কিছুই না করার আছে হ্যানয়তে। সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলে বসে যেতে পারবেন রাস্তার পাশে কোনও কফিশপে। এখানকার ক্যাফেগুলি আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের মিশেলের জন্য সুপরিচিত। হ্যানয়তে স্থানীয় খাবার জায়গা ছাড়াও একাধিক আন্তর্জাতিক ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁ চেন রয়েছে। সেগুলিতে ভিয়েতনামের ঐতিহ্যবাহী খাবার থেকে শুরু করে কন্টিনেন্টাল ডিশ, সবই পাওয়া যায়। পছন্দমতো পানীয় এবং খাবার তো খাবেন বটেই। সেই সঙ্গে স্থানীয় খাবার চেখে দেখতে ভুলবেন না।
হ্যানয়কে ভিয়েতনামের শিল্পকলার রাজধানী বলা হয়। এশিয়ান সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ এই শহরে রয়েছে অজস্র মিউজিয়াম। রয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন স্থাপত্য। সময় বের করে এখানকার ওয়াটার পাপেট থিয়েটারে একটা শো অবশ্যই দেখবেন। এছাড়া এশিয়া এবং ভিয়েতনামের সংস্কৃতির সঙ্গে আরও বেশি মাত্রায় পরিচিত হতে চাইলে অবশ্যই যেতে হবে হ্যানয় অপেরা হাউসে।
আরেকটি জায়গা যেখানে না গেলেই নয়, সেটি হল পারফিউম প্যাগোডা। ১৫ শতকে তৈরি এই প্যাগোডাটি আসলে একটি বৌদ্ধ মন্দির। এটি হ্যানয় তো বটেই, সমগ্র ভিয়েতনামের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৌদ্ধ মন্দির। এখানে পৌঁছাতে গেলে প্রথমে সড়কপথে কিছুদূর যেতে হবে। তারপর নৌকা করে জল পেরিয়ে যেতে হবে প্যাগোডায়।
শহরের মাঝে রয়েছে হোয়ান কিয়েম লেক। এই হ্রদের চারপাশে ভিড় করে বসে থাকে তরুণ-তরুণীরা। ছবির মতো সুন্দর এই হ্রদের ধারে বসে থাকতে থাকতে কখন যে সময় কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না। লেকের পাশেই রয়েছে একটি মন্দির। সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
হ্যানয়তেই রয়েছে ডন জুয়ান মার্কেট। চারতলা এই বিল্ডিংটির প্রতিটি তলায় রয়েছে নানা স্থানীয় সামগ্রীর ভাণ্ডার। এখানে জিনিসের দামও অত্যন্ত কম। তাই নিজের জন্য শপিং করা তো বটেই, আত্মীয়-প্রতিবেশী এবং বন্ধু-বান্ধবদের জন্য যদি কিছু উপহার নিয়ে যেতে চান, তাহলে ডন জুয়ান মার্কেট হল কেনাকাটার সেরা জায়গা।
খাওয়া-ঘোরা, কেনাকাটা- সব মিলিয়েই একা ঘুরে বেড়ানোর জন্য হ্যানয় একেবারে উপযুক্ত শহর। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়েই সোলো ট্রাভেল জনপ্রিয় হচ্ছে, আর তার সঙ্গেই সোলো ট্রাভেল স্পট হিসেবে এশিয়ার বিভিন্ন শহরের জনপ্রিয়তা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিশ্বের প্রথম ৫টি সোলো ট্রাভেল ডেসিনেশনই এশিয়ায় অবস্থিত। হ্যানয়ের পরেই একা ঘোরার ঠিকানা হিসেবে মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ব্যাংকক, তাইপেই, সিওল, ফম পেন, হো চি মিন সিটি, কুয়ালালামপুর এবং সিঙ্গাপুর। একা ঘুরতে চাইলে হ্যানয়ের পাশাপাশি এই শহরগুলি থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
হাওয়া বদল করতে ‘পশ্চিমে’ যাবেন? ব্রিটিশ স্থাপত্যের স্মৃতিমাখা এই শহর আপনারই অপেক্ষায়