শেষ আপডেট: 20th July 2024 14:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: শেষ পর্যন্ত ৩৪ দিন পর সালিশি সভায় হাজির না হওয়ায় ঘরছাড়া বৃদ্ধ দম্পতি ঘরে ফিরলেন।পুলিশের সহযোগিতায় শুক্রবার জামালপুর থানার কুবাজপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরলেন বৃদ্ধা সাহানারা বিবি। সঙ্গে ছিলেন ছেলে বসির আলি। এতদিন বাদে ঘরে ফিরতে পেরে পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানালেন বৃদ্ধা। বৃদ্ধার প্রত্যাশা,আর হয়তো তাঁদের প্রতি কোনও অবিচার হবে না। স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে শান্তিতেই বসবাস করতে পারবেন। ফসলও ফলাতে পারবেন।
কুবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা এই বৃদ্ধ দম্পতিকে চাপের মুখে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য। তাঁকে ঘরে ফেরানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং জেলার পুলিশ সুপারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন বৃদ্ধা সাহানারা। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর পুত্রবধূর করা খোরপোষের মামলা এখনও বর্ধমান আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলার বিচার করতে তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন এলাকার তৃণমূল নেতা আজাদ রহমান।
তিনি জানান, ১৩ জুন তাঁদের বাড়িতে এসে চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আজাদ রহমানের সাগরেদরা জানিয়ে গিয়েছিল,তাঁদের বৌমার করা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আজাদ রহমান তৃণমূল অফিসে বিচারসভা ডেকেছে। ১৪ জুন সেই বিচার সভায় তাঁদের পরিবারের সবাইকে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা বিচারসভায় হাজির না হলে, তাঁদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে, বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি তাঁদের প্রাণে মেরে দেওয়া হবে
হুমকি পেয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধা সাহানারা বিবির ছেলে শেখ বসির আলি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরের দিন চকদিঘির তৃণমূল পার্টি অফিসে আজাদ রহমানের বিচারসভায় যাননি তাঁদের কেউ। তাঁর অভিযোগ, ওই রাতেই লাঠি-সোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় আজাদ রহমানের ১২ জন সাগরেদ। তাঁর ছেলে ও স্বামীকে ব্যাপক মারধর করা হয়। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন সাহানারাও। খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর জখম বসিরকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
যদিও বৃদ্ধা সাহানারা বিবির আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান। তিনি জানান, বসির আলির পরিবারকে তিনি চেনেন। তবে আদালতে বিচারাধীন থাকা বসির আলির বৌমার করা মামলার বিচারের জন্য তিনি কোনও বিচারসভা বা সালিশি সভা ডাকেননি। খোঁজ নিয়ে নিয়ে তিনি জেনেছেন বসিরের পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটছে সেটা গ্রাম্য বিবাদ । মিথ্যা করে ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে।
তবে আজাদ এমনটা দাবি করলেও রেহাই পাননি। পুলিশ সুপারের কাছে সাহানারা বিবির দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জামালপুর থানার পুলিশ আজাদ রহমান সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। সেই মামলায় তারা সকলেই জামিন পেয়েছেন। এর পরেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা সাহানারা বিবি। তারপরেই পরিস্থিতি বদল হতে শুরু করে। অবশেষে শুক্রবার পুলিশের সহযোগিতায় বাড়ি ফিরলেন সাহানারা বিবি ও তাঁর ছেলে। সাহানারা জানান, তাঁর স্বামী
অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসা চলছে। সাহানারা বিবির বাড়ি ফেরা নিয়ে এদিন আজাদ রহমান কোনও মন্তব্য করতে চাননি।