অমিত শাহ
শেষ আপডেট: 11 April 2024 00:25
অমল সরকার
ভূপতিনগরের বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বুধবারের বক্তব্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সমাজের বিশিষ্টজনদের অনেকে শাহের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক সুজাত ভদ্রের মতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সংবিধান ও আইন ভেঙেছেন। বাঁচা এবং ন্যায় বিচার পাওয়া, আত্মপক্ষ সমর্থনের সাংবিধানিক অধিকার সকলের জন্য সমান। ভূপতিনগরের বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়ার অধিকার আদালতের হাতে রয়েছে। দ্বিতীয় কেউ এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।আবার এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেছেন, এ কথার মধ্যে একটা স্পষ্ট মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে এদেশে আর বিচারব্যবস্থা বলে কিছু থাকবে না। গুন্ডারাই শেষ কথা বলবে।
ভূপতিনগরের ঘটনা নিয়ে রাজ্যে তোলপাড় চলছে। বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টে গড়িয়েছে। মামলার তদন্তভার এনআইএ পাওয়ার পর এলাকায় গিয়ে তাদের উপর হামলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গেই অমিত শাহ বুধবার বলেছেন, ''যারা বোমা বেঁধে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, এনআইএ-এর ওপর হামলা করছে, তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লজ্জা হওয়া উচিত।'' সভায় যারা এসেছিলেন তাঁদের উদ্দেশে শাহ বলেন, ''আপনার কেউ চিন্তা করবেন না। হাইকোর্ট এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সবাইকে উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে।''
লেখিকা ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মিরাতুন নাহারের মতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্তব্য গণতন্ত্রের পরিপন্থী। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের হল, নেতা মন্ত্রীরা ক্ষমতাবান হওয়ার পর অন্যের অধিকার ভুলে যান। দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিদের গণতন্ত্রের প্রতি আরও বেশি কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল ব্যারিস্টার বিমল চট্টোপাধ্যায়।
অনেকের মনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আইনের শাসনের কথা বলবেন তা খুবই স্বাভাবিক। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মুখে ‘উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে’ গোছের কথা বেমানান। তিনি যে কথা বলতে চেয়েছেন, তা সাংবিধানিক পরিধির মধ্যে থেকে আরও পরিশীলিত ভাবে বলা যেত।মানবাধিকার সংগঠক সুজাত ভদ্র এই প্রসঙ্গে বুধবার আরও বলেন, “যে কারণে আমরা মাওবাদীদের বিচার ব্যবস্থার বিরোধিতা করি সেই একই দৃষ্টিকোণ থেকে অমিত শাহের কথার প্রতিবাদ করছি”।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথার প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর, দীর্ঘদিন যে সংগঠনের শীর্ষ পদে ছিলেন সুজাতবাবু। এক বিবৃতিতে এপিডিআর বলেছে, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অবিশ্বাস্য! এটা কার ভাষা! ভূপতিনগরের বিস্ফোরণের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় উল্টো করে ঝুলিয়ে ঠান্ডা করে দেবার হুমকি দিলেন কিনা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমরা তাঁর এই হুমকির তীব্র নিন্দা করছি এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে শাহের শাস্তি দাবি করছি।
এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, শাহের এই প্রতিক্রিয়ায় একটা বিষয় পরিস্কার, বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে দেশে বিচারব্যবস্থা বলে আর কিছু থাকবে না। গুন্ডারাই শেষ কথা বলবে। কিন্তু এখনও দেশের বিচারব্যবস্থা বলে একটা কিছু আছে। ভূপতিনগরের ঘটনা বিচারাধীন। আমরা কলকাতা হাই কোর্টেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং এই অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও হুমকির জন্য অমিত শাহের বিচার চাইছি। রাজ্য বাসীর কাছেও নিন্দায় সরব হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।