শেষ আপডেট: 10th July 2024 14:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রামজন্মভূমি অযোধ্যা জমিহাঙরদের গ্রাসে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে এ পর্যন্ত রামমন্দিরের এলাকা ঘিরে অন্তত ২৫টি গ্রামের আড়াই হাজার জমি কেনাবেচা হয়েছে। যে কেনাবেচায় জড়িয়ে রয়েছেন রাজনীতিক থেকে আমলা-আইপিএস এবং তাঁদের আত্মীয়রা।
কে নেই সেই তালিকায়? অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী থেকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্সের অধিকর্তা, মহিলা কুস্তিগিরদের ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের এমপি-পুত্র থেকে দলমতনির্বিশেষে রাজনীতিক, সকলের হাতেই রয়েছে রামলালা শাসিত অযোধ্যা রাজ্যের জমির দলিল।
অযোধ্যা এখন প্রোমোটারদের গ্রাসে চলে গিয়েছে। আর তার নেপথ্যে রয়েছে সব রঙের রঙমশালরা। যাঁদের আগুনে সাতপুরুষের ভিটেছাড়া হচ্ছেন স্থানীয় খেতমজুর থেকে কৃষিজমির মালিকরা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু ছিল রামমন্দির। যা নিয়ে রাজনৈতিক কচকচি কম হয়নি। গেরুয়া শিবিরের এই অস্ত্র অবশ্য ভোঁতা হয়ে গিয়েছে ভোটের ফলাফলে। অযোধ্যা বিধানসভা কেন্দ্রসহ ফৈজাবাদ লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী।
জানুয়ারি মাসে রামমন্দির উদ্বোধনের পর থেকে অযোধ্যার জমি থেকে সোনা বেরতে শুরু করে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নমূলক কাজে তামাম এলাকা জমি ব্যবসার খনিতে পরিণত হয়েছে। 'দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' একটি অন্তর্তদন্তমূলক সংবাদে জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রামমন্দির সংলগ্ন অন্তত ২৫টি গ্রামে জমি কেনাবেচা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্দিরের ১৫ কিমি ব্যাসের মধ্যে অযোধ্যা এবং পার্শ্ববর্তী গোন্ডা ও বস্তি জেলায় এভাবে জমি বেহাত হয়ে গিয়েছে। এর বেশিরভাগই ঘটেছে রাজনীতিক ও সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নামে অথবা তাঁদের আত্মীয়দের নামে।
অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী চাওনা মিন
উপমুখ্যমন্ত্রীর দুই ছেলে চাউ কান সেং মিন এবং আদিত্য মিন ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ কোটি ৭২ লক্ষ টাকায় ৩.৯৯ হেক্টর জমি কিনেছিলেন। জায়গাটি মন্দির থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে সরযূ নদীর তীরে গোন্ডার মহেশপুরে। ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল তাঁরা ৯৮ লক্ষ টাকায় মাত্র ০.৭৬৮ হেক্টর জমি বেচে দেন। আদিত্য বলেন, আমরা পর্যটন ব্যবসার জন্য জমি কিনেছিলাম। আমরা এখানে হোটেল তৈরি করব।
বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ব্রিজভূষণের এমপি-পুত্র করণভূষণ সিং
নন্দিনী ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মালিক করণ মহেশপুরে গতবছর জানুয়ারিতে ০.৯৭ হেক্টর জমি কিনেছিলেন। দাম পড়েছিল ১.১৫ কোটি টাকা। ওই বছরেরই জুলাই মাসে এর মধ্য থেকে মাত্র ৬৩৫.৭২ বর্গফুট বেচেছেন ৬০.৯৬ লক্ষ টাকায়। এ ব্যাপারে বাপবেটার কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এসটিএফ প্রধান অতিরিক্ত ডিজিপি অমিতাভ যশ (আইপিএস)
তাঁর মা গীতা সিং মহেশপুর, দুর্গাগঞ্জ ও অযোধ্যার যদুবংশপুরে ৯.৯৫৫ হেক্টর কৃষিজমি কিনেছিলেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। মন্দির থেকে জমিগুলি ৮ থেকে ১৩ কিমি দূরত্বে। মোট খরচ পড়েছিল ৪.০৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি এর থেকে মাত্র ০.৫০৫ হেক্টর বেচে দেন ২০.৪০ লক্ষ টাকায়। এ বিষয়েও পুলিশ কর্তা কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধিকে।
উত্তরপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব সঞ্জীব গুপ্তা (আইপিএস)
তাঁর স্ত্রী ডাঃ চেতনা গুপ্তা ২৫৩ বর্গমিটার আবাসনের জমি কেনেন অযোধ্যা থেকে ১৪ কিমি দূরের বনবীরপুরে। ২০২২ সালে খরচ পড়েছিল ৩৫.৯২ লক্ষ টাকা। সরকারি কর্তা অবশ্য তাঁর স্ত্রী ওই জমি বেচে দিয়েছেন। কিন্তু কত টাকায় তা জানাতে চাননি।
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের যুগ্ম ডিরেক্টর অরবিন্দকুমার পান্ডে
তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মমতা ১০৫১ বর্গমিটার জমি কিনেছিলেন মন্দির থেকে ৭ কিমি দূরে। সাড়ে ৬৪ লক্ষ টাকায় তিনি ওই জমি কেনেন। পান্ডে বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড হয়ে আছেন। তাঁর স্ত্রী মমতা বস্তির বিজেপি নেত্রী এবং ২০২২ সালে চালু হওয়া রামায়ণ নামে একটি হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। জমিটি হোটেল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কেনা হয়েছিল বলে জানান পান্ডে।
এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন, রেলের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মহাবল প্রসাদের ছেলে অংশুল, আলিগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আইপিএস পলাশ বনসলের বাবা প্রাক্তন আইপিএস দেশরাজ বনসল দিল্লির ঈশ্বর বনসলের সঙ্গে যৌথভাবে জমি কেনেন। ঈশ্বর কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে দিল্লি পুরসভা ও বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন।
আমেথির পুলিশ সুপার আইপিএস অনুপকুমার সিংয়ের জামাই যৌথভাবে ৪ হেক্টর কৃষিজমি কিনেছিলেন। বিজেপি বিধায়ক অজয় সিংয়ের ভাই ও ভাইপো, গোঁসাইগঞ্জ নগর পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপির বিজয়লক্ষ্মী জয়সওয়ালের আত্মীয়, আমেথি জেলা পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপির রাজেশ অগ্রহারীর মশলা কোম্পানি, বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, বিজেপির কয়েকজন প্রাক্তন বিধায়ক এই জমি খরিদের তালিকায় আছেন।
শুধু রাজনীতিক বা সরকারি আধিকারিকরা নন, কর্পোরেট দুনিয়াও এখন তাকিয়ে আছে অযোধ্যার জমি গিলে ফেলার আশায়। আদানি গ্রুপ থেকে অভিনন্দন লোধা সবাই এই তালিকায় রয়েছেন।