আমেরিকান পর্যটকদের নিয়ে পরামর্শ দিলেন সাংবাদিক, কাজে লাগবে আপনারও।
শেষ আপডেট: 1st July 2024 20:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লোকে কি আমেরিকানদের দেখলেই বোকা ভাবে?
ঘুরতে তো অনেকেই যান। পুজোর ছুটি, শীতের ছুটি, গরমের ছুটি পড়লেই বেরিয়ে পড়ার অভ্যেস বাঙালির বহুদিনের। ভারতের এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে ট্যুরিস্ট মরসুমে গেলে বহু বিদেশি পর্যটক নজরে পড়বে। যেমন গোয়া, রাজস্থান, আগ্রা, অজন্তা-ইলোরা, ভীমবেটকা, কাজিরাঙা। তার মধ্যে অবশ্যই মার্কিন পর্যটকরাও থাকেন। কিন্তু বাঙালির অন্দরেও একটা চালু কথা আছে, 'বাবারে, আমেরিকান মাত্রেই কী বোকা হয়!' তাঁদের নাকি সামান্য জ্ঞানগম্যিও থাকে না, গুগল ম্যাপের ভরসায় সর্বত্র চলেন, ভারতবর্ষ সম্পর্কে নানা উদ্ভট ধারণা ইত্যাদি বহু চলতি দোষারোপ আমেরিকানদের সম্পর্কে উড়ে বেড়ায়।
সম্প্রতি এই নিয়েই খোলামেলা লিখেছেন এক মার্কিন সাংবাদিক।
বিখ্যাত বিপণন বিশেষজ্ঞ ও মার্কিন সাংবাদিক কিম ডেভিস এই 'অপবাদ'-এর খুঁটিনাটি নিয়ে লিখেছেন সিএনএনে। আদতে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা কিম প্রায় দুই দশকের ওপর রয়েছেন লন্ডনে। বিদেশভ্রমণ বা প্রবাস আমেরিকার আমজনতার কাছে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। বিপুল সংখ্যক মার্কিন নাগরিক ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কেউ কাজের সূত্রে থেকে যান, কেউ হয়ত ঘুরে চলে আসেন। কাজেই, মার্কিনদের নিয়ে এই যে অপবাদ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে, তাতে আদৌ অবাক হচ্ছেন না কিম। লিখেছেন, আমেরিকানরা অনেক ব্যাপারে আদৌ খুব চৌখস নন। যার ফলে লোকের নানা ধ্যানধারণা তৈরি হয়ে যায়। কয়েকটি প্রেক্ষিত দেখিয়ে কিম বোঝানোর চেষ্টা করছেন ব্যাপারটা।
যেমন ধরা যাক, আদৌ কেউ কথা বলতে চায় কিনা দেখা। প্রায়ই দেখা যায়, আমেরিকানরা কেউ নিজে থেকে যেচে কথা বলতে চান, কিন্তু বোঝেন না, উল্টোদিকের ব্যক্তি কথা বলতে আগ্রহী কিনা। বা ধরা যাক, জোরে কথা বলা। নিউ ইয়র্কে নিজের বাড়িতে গলা চড়িয়ে কথা বলতে অভ্যস্ত কিম। অথচ আমেরিকানরা নাকি অনেকেই ভুলে যান, পৃথিবীতে এমন জায়গাও আছে, যেখানে গলা চড়িয়ে কথা বলাটা অত্যন্ত অভব্যতা হিসেবে ধরা হয়। একটা ভিড় ট্রেন ছুটে চলেছে, অথচ কেউ জোরে কথা বলছেন না, রেস্তোরাঁয় পাশের টেবিলে বসেও অন্য টেবিলের আওয়াজ কানে আসছে না, ইউরোপে এমনটা হামেশাই দেখা যায়। অথচ আমেরিকানরা এটা বুঝতে পারেন না। কিমের মতে, 'নিউ ইয়র্কে আমি থাকলে যত জোরেই কথা বলি না কেন, কেউ লক্ষ্যই করে না। কিন্তু বাইরে গেলে সবসময় এটা আমাকে মনে রাখতে হয়!'
কোথাও ঘুরতে গেলে সেই জায়গাটাকে নিয়ে আমেরিকানরা ধরাবাঁধা দু'চারটে ব্যাপার জেনে যান। তার বাইরে কিছু জানার চেষ্টাও করেন না। সেই ইচ্ছেটাই থাকে না কারোর। অথচ কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে একটু কৌতূহল থাকলে তা আখেরে ভালই। এই অল্প জানার জন্যই অনেক জায়গায় আমেরিকানদের মূর্খ বা বোকা ভাবা হয়। কিমের পরামর্শ, কোথাও বেড়াতে গেলে যতটা সম্ভব খোলা মনে যাও। চেষ্টা করো, সেখানকার সংস্কৃতিকে সম্মান করতে। লোকে তোমায় পাল্টা সম্মান করবে।
এই ব্যাপারে অবশ্য সজাগ থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন কিম। জানিয়েছেন, কোথাও ঘুরতে গেলে আমেরিকান দেখলেই একটা লুটে নেওয়ার স্বভাব থাকে অনেকের। তিনি একটা ট্যাক্সি-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিখেছেন। রোমে গিয়েছেন কিম। হোটেলে যাবেন, ট্যাক্সিতে উঠেছেন, কত পড়বে জিজ্ঞেস করায় ড্রাইভার বলে, আশি ইউরো। অথচ হোটেল অল্পই দূরে। সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সি থেকে নেমে হোটেলে ফোন করেন কিম। জিজ্ঞেস করেন, কত পড়তে পারে। রিসেপশন জানায়, পাঁচ ইউরো মত পড়তে পারে মেরেকেটে। তাই কিম সতর্ক করছেন, কোথাও ঘুরতে গেলে আগে চোখ কান খোলা রাখো। 'ট্যাক্সিতে উঠলে বলো, অমুক হোটেলে যাব, কাছেই তো, পাঁচ ইউরো লাগবে, তাই তো?' ট্যাক্সিওয়ালা নিশ্চয়ই আর বাড়তি ভাড়া হাঁকার ঝুঁকি নেবে না।
কোথাও ঘুরতে গেলে আমেরিকানরা কার্যত সেই জায়গার খবরাখবর কিছুই জেনে যান না। কিমের বক্তব্য, আমেরিকানরা বিদেশে এত ঘুরতে যান, অথচ বিদেশের খবরাখবর প্রায় কিছুই রাখেন না। কোথাও ঘুরতে গেলে, সে'দেশের স্থানীয় কিছু খবরে চোখ বোলানো উচিত। অন্তত সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কে, খবরের হেডলাইন কী যাচ্ছে, সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা কী, এইগুলো জানার চেষ্টা করলে ভাল হয়। আরও ভাল হয়, যদি সেখানকার ভাষাটা শিখে নেওয়া যায়। অন্তত খুব ভাল না হলেও, 'হ্যালো', 'গুডবাই', 'থ্যাঙ্ক ইউ', 'প্লিজ', 'সরি', 'হেল্প' এই শব্দগুলোর প্রতিশব্দ জানা থাকলেই সবচেয়ে ভাল হয়। মানুষ নিজের পরিচিত ভাষা শুনলে খুব তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে পারে, সহযোগিতাও করতে পারে।