শেষ আপডেট: 3rd August 2024 12:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেরলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে সাড়ে তিনশো ছাড়িয়েছে। অসংখ্য মানুষ আহত। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে একের পর রিসট তৈরিই কি কেরলের কাল হল, এই প্রশ্নটা উঠছে। বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও কেন কেরলে প্রকৃতি ধ্বংসে লাগাম টানা হল না, উঠছে এই প্রশ্নও।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্র জানিয়েছিল, ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে মোট ৩ হাজার ৭৮২টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। যার ৬০ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে কেরলে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতের কুয়াশাচ্ছন্ন সবুজ পাহাড় এবং কাছাকাছি পাথরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট ঝর্নার পাশে ওয়ানাড়ে কংক্রিটের তৈরি করা সেই জনপ্রিয় রিসর্ট 'স্টোন হাউস' বাংলোটিও মঙ্গলবার ভোরের দুটি ভূমি ধসে ভেঙে পড়েছে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টিতে এই রিসর্টের রান্নাঘর জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। তখনই রিসর্ট খালি করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে হতাহতের কোনও খবর নেই।
এর আগে ২০১৮ সালের বন্যায় ওয়ানাড়ে ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে তখনই কড়া পদক্ষেপ নিলে আজকের মৃত্যু মিছিল দেখতে হত না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। স্থানীয় সূত্রের খবর, ধসের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মুন্ডাক্কাই গ্রাম। এই গ্রামের প্রায় ৫০০ স্থানীয় পরিবার বাস করে। গ্রামের আশেপাশে ছিল ৭০০টি রিসর্ট, হোমস্টে। রাতারাতি যা নিশ্চিহ্নর পথে!
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাঁরা বছরের পর বছর ধরে এই বিপর্যয় দেখেছেন এবং গত ১৩ বছরে বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় অতিরিক্ত উন্নয়ন প্রাকৃতিক জলের প্রবাহকে বাধা দিয়ে ভূমিধস এবং বন্যার মতো অন্যান্য পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। অথচ সেই সতর্কতাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
ওয়ায়ানাড়ের স্থানীয় পরিবেশ সুরক্ষা এনজিও প্রকৃতি সংরক্ষন সমিতির প্রধান এন বদুশা সংবাদ সংস্থাকে বলেন, "এই যে বলা হচ্ছে ভারী বৃষ্টির জন্যই ভূমিধস, এটা ঠিক নয়। ওয়ানাড়ে এরকমই ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। আসলে যেভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে, তার ফল ভুগতে হচ্ছে।"
সরকারি রেকর্ড বলছে, গত বছর ১ মিলিয়নেরও বেশি দেশি ও বিদেশী পর্যটক ওয়ানাড়ে এসেছেন। যা ২০১১ সালে সংখ্যার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।
প্রসঙ্গত এব্যাপারে সংবাদ সংস্থার তরফে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের অফিস এবং কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
এবারের ধসে পাহাড়ে ঘেরা যে মুন্ডাক্কাই গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে সেই গ্রামের ৩০ বছর বয়সি রশিদ পাদিক্কলপারমবান অতীতে ধসের কারণে বাবা-সহ পরিবারের ছয় সদস্যকে হারিয়েছিলেন। সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে ওয়ানাড় একাংশ ব্যবসায়ীর নজরে আসে। তারপরই রাতারাতি বদলে যেতে থাকে ইশ্বরের দেশের বনভূমির চরিত্র। জঙ্গল-পাহাড় কেটে গড়ে ওঠে একের পর এক রিসর্ট। তিনি এও জানান, টাকার লোভ দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জমিগুলি কিনে নেওয়া হয়েছিল।
প্রকৃতিকে ধ্বংস করা যে ঠিক হয়নি, তা দেরিতে হলেও মানছেন ওয়েনাড় ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের সভাপতি কে আর ভ্যানচিশ্বরন। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, "মানুষের ক্রিয়াকলাপ যদি প্রকৃতির কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে তবে প্রকৃতি তার শক্তি প্রকাশ করবে, সেটাই হয়েছে। আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম, এখন আমাদেরকেই তার মূল্য চোকাতে হচ্ছে।"