শেষ আপডেট: 21st March 2024 20:12
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মহানায়কের মহাপ্রস্থান। বয়স ষাট না পেরোতেই অকাল প্রয়াণ।চলে গেছিলেন উত্তমকুমার। যে কালো দিন আজও ভুলতে পারে না বাঙালি। তবে কিংবদন্তিদের মৃত্যু হয় না। তাই ২৪ শে জুলাই তারিখটা এখন বাঙালির কাছে উত্তম স্মরণের দিন। তবে এবার গল্পটা অন্য। ৪২ বছর পর ২২ শে মার্চ, ২০২৪ মুক্তি পেতে চলেছে পর্দায় আবার উত্তমকুমারের ছবি 'অতি উত্তম'। শ্রেষ্ঠাংশে স্বয়ং উত্তমকুমার। পরিচালনায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এ যেন গল্প হলেও সত্যি! কলকাতা শহর ছেয়ে গেছে উত্তমকুমারের ভুবনভোলানো হাসির হোর্ডিং, ছবি আর পোস্টারে। গোটা একটা ছায়াছবিতেই স্বমহিমায় মহানায়ক। উত্তমকুমারকে বৃদ্ধ আমরা কোনদিন দেখিনি। পর্দাতে চার দশক পেরিয়েও তিনি সেদিনের উত্তম হয়ে ফিরলেন।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি 'অতি উত্তম'। যে ছবি দিয়ে পর্দায় ফিরছেন জীবন্ত উত্তমকুমার। সঙ্গে আবার তাঁর নিজের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। ম্যাজিক করে যেন উত্তমকুমারকে ফের পর্দায় ফিরিয়ে এনেছেন সৃজিত। কিন্তু কেমন করে?
উত্তমকুমারের বিভিন্ন ছবি থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে যাওয়া সংলাপ কেটে কেটে বসিয়ে এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যেন বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলছেন উত্তমকুমার স্বয়ং! এই ছবি সম্পর্কে খোদ পরিচালক বলেছিলেন, 'টানা ৪ বছরের গবেষণা, ৬২টা ছবি বারংবার দেখা, সঠিক জায়গা খুঁজে বের করা, চিত্রনাট্য বদলানো, প্রয়োজনীয় সব অনুমতি নেওয়া, ভিএফএক্স বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অগণিত বৈঠক, সিনেমাটোগ্রাফার, ডিজাইনারদের সঙ্গে বার বার আলোচনার পরে, একটা স্বপ্ন সফল হতে যাচ্ছে। আপনি আছেন, এটাই যথেষ্ট।'
এই ছবির মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন উত্তম পৌত্র গৌরব চট্টোপাধ্যায়। গৌরব উত্তমকুমার মারা যাওয়ার পর জন্মেছেন। দাদুকে পাননি কখনও। পর্দায় দাদু নাতি একসাথে ঘুরলেন সারা কলকাতা। যা অভাবনীয়। এছাড়াও রয়েছেন, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত ও রোশনি ভট্টাচার্য।
দক্ষিণ কলকাতার নবীনা সিনেমায় উত্তমকুমারের বড় কাট আউট, হোর্ডিং দেখেই মন ভরে গেছে বাঙালির। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও সামাজিক মাধ্যমে সেইসব মহানায়কের পোস্টার হোর্ডিং তুলে পোস্ট করছেন। মধ্যবয়সীরা সবাই উদগ্রীব পর্দায় উত্তমকুমারকে দেখার জন্য। একই চিত্র শহরের প্রতিটা শপিং মলের মাল্টিপ্লেক্সেও।
উত্তর থেকে দক্ষিণ সারা শহর জুড়ে হাসছেন উত্তমকুমার, যেন সারা শহর জুড়ে ঘুরছেন উত্তমকুমারের আত্মা। অনেকেই মজা করে বলছেন উত্তমকুমারকে প্ল্যানচেট করে পর্দায় ডেকে এনেছেন সৃজিত। টালিগঞ্জের মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে টালিগঞ্জের স্টুডিওতে ঘুরছেন উত্তমকুমার। সে চাউনি সেই হাসি। গুরু আবার পর্দায়, গুরু আবার পোস্টারে। আট থেকে আশির মধ্যে উত্তমভক্ত অগুন্তি, তাঁদের তো এই ছবি দেখায় উৎসাহ তুঙ্গে। এমনও বাঙালি আছেন যারা ১৯৮০ তে উত্তমকুমার মারা যাওয়ার পর সিনেমা হলে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনবে সৃজিতের 'অতি উত্তম'। ক্যামেলিয়া প্রোডাকশান প্রাইভেট লিমিটেড প্রযোজিত রূপা দত্ত নিবেদিত সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় 'অতি উত্তম' নতুন পালক যোগ করতে করেছে বাংলা ছবির ইতিহাসে। এভাবেও ফিরে আসা যায়।
সৃজিত জানিয়েছেন, প্রায় ৪ বছর সময় লেগেছে চিত্রনাট্য লিখতে। ছবিতে অন্যরকম মাত্রা পাবে ভিএফএক্সের কাজ। উত্তমকুমারকে শ্রদ্ধার্ঘ্য এই ছবি। ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে কৃষ্ণেন্দু এবং সোহিনীকে ঘিরে। যেখানে কৃষ্ণেন্দুর চরিত্রে অভিনয় করছেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত যিনি উত্তম কুমারকে নিয়ে পিএইচডি করছেন এবং রোশনি ভট্টাচার্য রয়েছেন সোহিনীর চরিত্রে। তাঁদের প্রেমে রঙ ধরানো থেকে শুরু করে সমস্তটার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছেন উত্তমবাবু!
উত্তমকুমারের নাতির চরিত্রে থাকছেন স্বয়ং গৌরব চট্টোপাধ্যায়ই। ৪২ বছর পর পর্দায় ফিরছেন 'মহানায়ক'। ১৯৮০ তে উত্তমকুমার মারা যাবার পর ১৯৮২ অবধি মহানায়কের ছবি রিলিজ করেছিল। অনেক ছবিতেই উত্তমের ডামি ব্যবহার করেছিলেন তখনকার পরিচালকরা। তারপর আবার ২০২৪ এ পর্দায় উত্তমকুমার। সারা কলকাতা শহর এখন উত্তমময়। সেটাই বাঙালির সবথেকে বড় খুশির কারণ। উত্তমকুমারের ভক্ত সবাই। বসন্তের মাসে চিরবসন্তের প্রতীক উত্তমকুমারকে পর্দায় দেখারজন্য শুধু একদিনের অপেক্ষা।