কাস্পিয়ান সাগরের তীরে বাকু শহরে নভেম্বর থেকে শুরু হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সম্মেলন সিওপি২৯।
শেষ আপডেট: 17th May 2024 19:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রশ্নগুলো দুবাই থেকেই উঠছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সম্মেলন। পোশাকি নাম, 'কনফারেন্স অফ পার্টিজ' বা সিওপি ২৮। প্রাথমিক লক্ষ্য, জীবাশ্ম জ্বালানি বা 'ফসিল ফুয়েলস'-এর উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে আনা। অথচ আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সবচেয়ে বড় শহর দুবাই। যাদের কিনা আজকের এই বিলাস, বৈভব, জাঁকজমকের সবটাই এসেছে খনিজ তেলের হাত ধরে। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করলেন আমিরশাহীর মন্ত্রী সুলতান আল জাবের। যিনি আবার একইসঙ্গে আমিরশাহীর জাতীয় তেল সংস্থা 'আবু ধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি'-র সিইও। শুরু থেকেই অতএব সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা। বিতর্কে ঘি ঢেলে খবর রটেছিল, আল জাবের সম্মেলনে নিজের প্রভাব খাটিয়ে আসলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের নানা লোভনীয় চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছেন। তিনি নাকি পরিবেশ রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন কমানোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেছেন। এইরকম কাউকে সভাপতি বানিয়ে আদতে জলবায়ু সম্মেলন করার মানেটা কী রইল, প্রশ্নগুলো নানা সময় খোঁচা দিয়েছে।
যথারীতি সবকিছুকে কানে না তুলে বিস্তর ঢক্কানিনাদ-সহ সম্মেলন হয়েছে। শেষ অবধি সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে 'জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা হবে', এই ক'টা শব্দ যোগ করা গিয়েছে। এটাকেই একটা বৈপ্লবিক সাফল্য বলে তুলে ধরা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছিলেন, জীবাশ্ম-জ্বালানিকে পাকাপাকিভাবে বাতিল করা হোক। কিন্তু এসব কথাতে হাঁ হাঁ করে উঠেছে একাধিক তেল-রাজ্য। কয়লার ওপর সারা বছর নির্ভর করে থাকা ভারতও তাতে সায় দিতে পারেনি। ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর বক্তব্য, অ্যাদ্দিন ধরে বিস্তর তেল-কয়লা পুড়িয়ে পশ্চিমী দুনিয়া-সহ 'গ্লোবাল নর্থ'-এর দেশগুলো নিজেদের যা উন্নয়ন করার করে নিয়েছে। এবার তারা 'কয়লা বন্ধ করো' বলে দাবি তুললে 'গ্লোবাল সাউথ'-এর দেশগুলো যাবে কোথায়? অতএব 'সরে আসা হবে'-এইটুকু বক্তব্যই আপাতত যথেষ্ট।
কিন্তু সিওপি নিয়ে বিতর্কের আর কমতি নেই। এই বছরের জলবায়ু সম্মেলন সিওপি-২৯ শুরু হওয়ার কথা নভেম্বরে। কিন্তু আবারও বিতর্ক চাগাড় দিতে শুরু করেছে। এবারের জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক আজারবাইজান। কাস্পিয়ান সাগরের তীরে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু শহরের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বসবে সম্মেলনের আসর। কিন্তু আমিরশাহীর মতোই একই প্রশ্ন রয়েছে বাকু নিয়ে। কাস্পিয়ান সাগরের তীর জুড়ে অবস্থিত আজারবাইজানের দুই তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে সমৃদ্ধ তেলের খনি। সরকারি বাজেটের ৬০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে তেল থেকে আসা আয়। রফতানির ৯০ শতাংশই তেল ও পেট্রোলিয়াম-জাত দ্রব্য। বস্তুত, আজারবাইজানে পা রাখলেই যে কারোর চোখে পড়বে, তেল এখানে কতটা জরুরি। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে আজারবাইজানে তেল তোলার ইতিহাস রয়েছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি পৃথিবীর প্রথম তৈলকূপ খোঁড়া হয়েছিল এই দেশে।
এ'হেন আজারবাইজানে সিওপির আসর বসায় আবারও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তার ওপর দুবাইয়ের মতোই সম্মেলনের সভাপতিত্ব নিয়ে আপত্তি তুলতে শুরু করেছেন পরিবেশকর্মীরা। আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন আজারবাইজানের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার বাবায়েভ। যিনি আজারবাইজানের রাষ্ট্রায়ত্ব তেল সংস্থা 'সোকার'-এ দীর্ঘ আড়াই দশক কাজ করেছেন।
আজারবাইজান অবশ্য এই সম্মেলনকে নিজেদের পুনর্নবীকরণ শক্তির দিকে গুরুত্ব বাড়ানো দিয়েই দেখতে চাইছে। সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া বাবায়েভ বলেছেন, 'আমরা আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বের একটা সংযোগস্থলে রয়েছি। পশ্চিম ও পুবের মধ্যভাগে আমাদের অবস্থা। গ্লোবাল নর্থ ও গ্লোবাল সাউথের মধ্যেও একটা মধ্যস্থতার জায়গা হিসেবে নিজেদের দেখতে পারি আমরা।' সম্প্রতি ধীরে ধীরে নিজেদের তেল-নির্ভরতা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে আজারবাইজান। কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী হওয়ার সুবিধেকে কাজে লাগিয়ে বায়ু ও পাশাপাশি সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে তারা।
আজারবাইজানের দায়িত্ব পাওয়াটা যদিও সহজ ছিল না। গত দুবাই সম্মেলনের একেবারে শেষ পর্বে দায়িত্ব পেয়েছে আজারবাইজান। দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল বুলগারিয়া ও রোমানিয়ার। কিন্তু আপত্তি তোলে রাশিয়া। শেষে রাশিয়া ও আর্মেনিয়ার সম্মতি আসায় দায়িত্ব পেয়েছে বাকু। গত বছর অবধি কারাবাখ অঞ্চলকে নিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি ছিল আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের। ডিসেম্বরে আর্মেনিয়ার সঙ্গে শান্তি স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু কারাবাখ অঞ্চলে শান্তি ফেরেনি পুরোপুরি। সম্মেলন আয়োজন করে নিজেদের ভাবমূর্তি ফেরাতেও উদ্যোগী হবে আজারবাইজান।