হোয়াইট হাউসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন জো বাইডেন।
শেষ আপডেট: 25th July 2024 07:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জো বাইডেন। সে কথা ঘোষণার পরে এই প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন তিনি। আলোচনা করলেন নিজের সরে দাঁড়ানোর কথা এবং তাঁর বদলে নাম উঠে আসা প্রার্থী কমলা হ্যারিসের যোগ্যতার কথাও। তাঁর কথায়, গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্যই তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি স্বীকার করেছেন যে এবার নতুন প্রজন্মের হাতে মশাল তুলে দেওয়ার সময় এসেছে।
সদ্য করোনামুক্ত হয়েছেন জো বাইডেন। তারপরেই বুধবার হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ভাষণ দেন তিনি।
এক বছর আগে যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান জো বাইডেন, তখনই তিনি নিজেকে ব্যাখ্যা করেছিলেন 'একজন ট্রানজিশনাল প্রার্থী' হিসেবে। এবং বলেছিলেন, তরুণ প্রজন্মের নেত্রী, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্যে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন। বছর ঘুরতেই সেই ভবিষ্যৎ বর্তমানে পরিণত হয়েছে। নতুন, তরুণ কণ্ঠের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দেশ-- একথা জানিয়ে বাইডেন বলেন, তিনি কমলা হ্যারিসের নাম মনোনয়নের জন্য সমর্থন করেছেন।
এদিন বাইডেন বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার রেকর্ড, বিশ্বে আমার নেতৃত্ব, আমেরিকার ভবিষ্যতের জন্য আমার দৃষ্টিভঙ্গি-- এর সবকিছুই দ্বিতীয়বার পদে বসার জন্য যোগ্য। কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রকে বাঁচানো আরও জরুরি। তাতে এখন ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা জায়গা নিয়েছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নতুন প্রজন্মের কাছে মশাল পৌঁছে দেওয়ার। এটাই এগিয়ে যাওয়ার উপায়, আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সর্বোত্তম উপায়।'
পাশাপাশি, বাইডেন রিপাবলিকান প্রার্থী এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছেন, নাম না করে।
তাঁর কথায়, 'আমি হোয়াইট হাউসকে ভালবাসি, কিন্তু আমি আমার দেশকে আরও বেশি ভালবাসি। এ দেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য সম্মানের। তবে গণতন্ত্র যখন ঝুঁকির মুখে, তখন আমি মনে করি, এটি যে কোনও পদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
অনেকেই মনে করছেন, এই কথার মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে তিনি ট্রাম্পকে নাও পরাজিত করতে পারেন। সংশয়ে আছেন তিনি। সে জন্যই তাঁর মনে হয়েছে, তিনি এ নির্বাচন লড়লে ক্ষমতায় আসতে পারেন ট্রাম্প এবং দেশের গণতন্ত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারেন।
এদিন বাইডেন তাঁর দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক যাত্রা শুরুর আগে নিজের জীবন কেমন ছিল, সে কথাও বলেন। 'তোতলা, আনস্মার্ট একটি শিশু যে একদিন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবে, এটা পৃথিবীর কোনও প্রান্তেই কেউ ভাবতে পারেননি। কিন্তু সেই শিশু, অর্থাৎ আমি, সেখানে পৌঁছেছি। এটাই আমেরিকার বিশেষত্ব।'
আমেরিকান জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, '৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই জাতির সেবা করা আমার জীবনের সৌভাগ্য। আমি আরও অনেকের মতোই আমার হৃদয় উৎসর্গ করেছি দেশের জন্য। আমি আমার সমস্ত আশীর্বাদ দেশবাসীর উপর বর্ষিত করেছি। বিনিময়ে আমেরিকান জনগণের ভালবাসা এবং সমর্থন পেয়েছি। আশা করি আপনাদের সকলের কাছে আমি কতটা কৃতজ্ঞ, তা বোঝাতে পেরেছি আমি।'
জো বাইডেনের রাষ্ট্রপতি পদে মেয়াদের আর ছ'মাস বাকি আছে। এই সময়টায় তিনি রাষ্ট্রপতির 'চাকরি' করায় মন দেবেন বলে স্থির করেছেন। পাশাপাশি, তিনি পরিবারের জন্য খরচ কমানোর, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার, ভোটের অধিকার রক্ষার এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করারও পরিকল্পনা করেছেন। পাশাপাশি, তিনি হিংসার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আইন সংস্কারের আহ্বান জানানোর কথাও ভেবেছেন। ইউক্রেনের স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন করার কথা এবং গাজায় যুদ্ধ থামানোর কথাও উঠে আসে তাঁর ভাষণে।
এদিন বাইডেন সমস্ত আমেরিকানকে মনে করিয়ে দেন, তারাই আদতে আমেরিকার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, 'রাজা ও স্বৈরাচারীরা দেশ শাসন করেন না, ইতিহাস মানুষের হাতেই থাকে। আপনাদের হাতেই সবকিছু।'
এদিন বাইডেন নিজের কতিত্বের কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, জাতিগত সম্পদের ব্যবধান কমানো, বড় ফার্মা কোম্পানির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা, ওষুধের দাম কমানো, কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং প্রথম কোনও কালো চামড়ার মহিলাকে সহ-রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর মতো বিষয়গুলি।
তবে এখনই তিনি নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন না, সে কথাও জানান বাইডেন। বলেন, 'আমি কোথাও যাচ্ছি না। আমি কমলার সঙ্গে ভোটের প্রচার চালাব। আমি এখনও প্রচুর কাজ করতে চলেছি বর্তমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে, আইনরক্ষক হিসেবে এবং আমার দলের ভোটের প্রচারে।
বাইডেন বক্তব্য শেষ করার সময়ে বলেন, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে আমেরিকান জনগণ দেশের ভবিষ্যৎ পথ বেছে নেবে। আমি তো আমারটা বেছে নিয়েছি, আমার মতামত জানিয়েছি। আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি অভিজ্ঞ, তিনি কঠোর, তিনি সক্ষম। তিনি আমার সঙ্গে অবিশ্বাস্য ভাবে পায়ে পা মিলিয়ে লড়েছেন। তিনিই দেশের নেতা। এখন শেষ কথা বলবে আমেরিকান জনগণই।'