ইউক্রেন পেতে চলেছে বিরাট অঙ্কের মার্কিন অর্থসাহায্য।
শেষ আপডেট: 21st April 2024 14:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অবশেষে স্বস্তি। কাটল মাসের পর মাস ধরে আটকে থাকা গেরো। ওয়াশিংটনে শনিবার বিস্তর টালবাহানা, আক্রমণ, সওয়াল-জবাব, প্রতি-আক্রমণ ও সারা বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় তোলার পরে অবশেষে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ 'হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ' সভায় পাশ হয়ে গেল সেই বহু প্রতীক্ষিত ৯৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থবিল। যার মানে, এবার বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাহায্য পেতে চলেছে ইউক্রেন, তাইওয়ান এবং ইজরায়েল।
রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই এক নাগাড়ে ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল আমেরিকা। হোয়াইট হাউস থেকে পেন্টাগন, সর্বত্রই এক কূটনৈতিক লড়াইতে নেমেছিলেন জো বাইডেন-প্রশাসনের কর্তারা। লক্ষ্য ছিল, কীভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়েও ইউক্রেনকে ক্ষমতা জোগানো যায়। লড়াইটা শুরু থেকেই অসম। ধারে-ভারে মহাশক্তিধর রাশিয়ার সামনে নিতান্তই নড়বড়ে ইউক্রেন। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইতে নেমেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নেতৃত্বাধীন ইউক্রেনের সামরিক-অসামরিক কর্তারা। কার্যত বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে গিয়েছে খারকিভ, কিভ-সহ একাধিক ইউক্রেনের সমৃদ্ধ শহর।
কিন্তু ইস্যুটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকার সাহায্য। রাশিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্রভাণ্ডারের সঙ্গে যুঝতে গেলে ইউক্রেনের দরকার সেরকমই পাল্লা দেওয়ার মত অস্ত্র। যা ইউক্রেনের নেই। জোগাড় করতে হবে। সেই জোগাড়ের কাজে ইউরোপের একাধিক দেশ এগিয়ে এলেও রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মত সেসব কিছুই নয়। তাও জার্মানি, ব্রিটেন কিছু পাঠিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় বল-ভরসা হতে পারে আমেরিকা। একমাত্র অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্রশস্ত্রই পারে মস্কোর মহাশক্তিধর বাহিনীকে ঠেকাতে।
কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যদের একাংশ। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প পথ দেখিয়েছেন। এইবার সেই পথ ধরে মারজরি টেলর-গ্রিন বা করি মিলসের মত অনেকেই বলছেন, 'আমেরিকাই একমাত্র প্রাধান্য পাওয়া উচিত। আমেরিকার সীমান্তে কী হবে সেদিকেই আমাদের নজর দিতে হবে। এখান থেকে এত হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা একটা দেশের যুদ্ধে জড়ানোটা তো কোনও কাজের কথা নয়!' গণতান্ত্রিক মার্কিন প্রশাসনে নিয়ম, অর্থসাহায্য দিতে গেলেও সেটা বিল পাশ করে অনুমোদন পেতে হবে মার্কিন সংসদের দুই কক্ষ থেকে। ভারতের মত আমেরিকাতেও নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ, যেখানে বিল পাশ হবার পরে তা যাবে উচ্চকক্ষ সেনেটে। সেখানেও ভোটাভুটির পরে বিল পাশ হলে তা যাবে হোয়াইট হাউসে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাতে সই করলে তবেই সেই বিল পরিণত হবে আইনে, অর্থসাহায্য পাঠাতে পারবে স্বরাষ্ট্রবিভাগ বা 'স্টেট ডিপার্টমেন্ট'।
অভিযোগ, কয়েক মাস ধরেই একদল রিপাবলিকান রিপ্রেজেন্টেটিভ হাউসের স্পিকার মাইক জনসনকে হুমকির মুখে রেখেছিলেন, যাতে কোনও অবস্থাতেই ওই বিল তিনি পাশ না করান। তাঁদের বক্তব্য, ইউক্রেনের পিছনে এত ডলার খরচ করার কোনও যুক্তি নেই। উল্লেখ্য, জনসন নিজেও রিপাবলিকান। কিন্তু তিনি কার্যত ঘরে-বাইরে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছেন এই বিলটি নিয়ে। আমেরিকা শেষ যা অর্থসাহায্য পাঠিয়েছিল, তা গত বছর। তারপর থেকে ইউক্রেনের অবস্থা রীতিমত কাহিল। ফলে ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবারই বলছিলেন, যাতে মার্কিন সেনেটররা উদ্যোগী হয়ে বিলটি পাশ করান। ইউক্রেনের কাছে যে এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন!
অবশেষে এল সেই স্বস্তি। ৩১১-১১২ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিল পাশ হল মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে। সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে এক বিরাট অংশ বেঁকে বসে রয়েছেন এখনও। রিপাবলিকান সদস্যদের মধ্যে ১১২ জন বিরোধিতা করেছেন, সমর্থন দিয়েছেন ১০২ জন। এরপর বিল যাবে সেনেটে। যেখানে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। মনে করা হচ্ছে, ওখানে সমস্যা হবে না। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সই করে দেবেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে ইউক্রেনের জন্য অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।