শেষ আপডেট: 3rd June 2024 22:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মানুষের সৌন্দর্য কেবল তাঁর চেহারায় নয়, মনের সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য। এ কথা খাতায়-কলমে যতই সত্য হোক না কেন, সুন্দর হওয়ার নেশা, বলা ভাল, প্রথাগতভাবে সুন্দর হওয়ার নেশা মানুষের চিরন্তন। প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া চেহারার পরেও, নিখুঁততর নাক-চোখ-ঠোঁট হোক বা মসৃণ উজ্জ্বল ত্বক হোক বা পছন্দসই একমাথা চুলই হোক-- এসবের প্রতি কোনও মোহ নেই, এমন মানুষ হয়তো কমই আছেন বিশ্বে।
মানুষের এই আখাঙ্ক্ষাকে মূল পুঁজি করেই, গোটা বিশ্বজুড়ে গত দু'দশকে একটি অসাধারণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে সৌন্দর্যশিল্প। রূপচর্চা এখন আর মোটেই পার্লারের চারদেওয়ালে বন্দি থাকা কোনও বিলাসযাপন নয়, এটি রীতিমতো বিজ্ঞান, হয়তো বিপ্লবও। এই রূপচর্চা দিয়েই চ্যালেঞ্জ করা যায় প্রকৃতিকে। কারণ এই রূপচর্চার অস্ত্রেই, অর্থের বিনিময়ে, শরীরের প্রায় প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই মানুষের পছন্দ অনুযায়ী কাস্টমাইজড করে ফেলা যেতে পারে। এমনকি অনেকটা কমিয়ে ফেলা যেতে পারে বয়সও। না, অঙ্কের হিসেবে নয় অবশ্যই, তবে বাহ্যিক সৌন্দর্যের হিসেবে। এইভাবেই বলিরেখাকে বিদায় জানাচ্ছেন মহিলারা, উজ্জ্বল চুলের রাশ নিয়ে গর্ব করছেন টাকপড়া পুরুষরা।
এই টাকের প্রসঙ্গেই বিশ্ব সৌন্দর্য মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তুরস্কের নাম। এই দেশ যেন হয়ে উঠেছে বিশ্বের চুল প্রতিস্থাপনের রাজধানী। কেবল চুলের টানেই বহু পুরুষের স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে উঠেছে এই দেশ। অত্যন্ত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সার্জেন, উন্নত চিকিৎসা সুবিধা এবং পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম খরচের কারণেই তুরস্কে এই চুল গজানোর বাজার রীতিমতো জমে উঠেছে।
শুধু তাই নয়, থাকার জায়গা এবং পরিবহণ-সহযোগে, রীতিমতো ভর্তুকি দিয়ে বড়সড় চিকিৎসা পর্যটন প্যাকেজও অফার করে এই দেশ। সরকারি ভাবে চালানো হয় একাধিক ক্লিনিক। ব্যবহৃত হয় আধুনিক প্রযুক্ত। তাই সামর্থ থাকলেই সৌন্দর্যের টানে তুরস্ক ছুটে চলেছেন বহু টাক মাথার মানুষ।
চুল প্রতিস্থাপনের খরচ কেমন?
বস্তুত, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের খরচ কখনওই নির্দিষ্ট হতে পারে না। কার কতটা চুল প্রতিস্থাপিত হবে অর্থাৎ গ্রাফ্টের সংখ্যা, ক্লিনিকের গুণগত মান এবং সার্জেনের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বদলে যায় খরচের হারও। তুরস্কে মোটামুটি গড়ে দেড় লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টাকা খরচ করতে পারলেই মেলে মাথাভরা চুল। প্রসঙ্গত, ভারতেও প্রায় এমনই খরচা চুল প্রতিস্থাপনের। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি, কৌশল এবং নিশ্চিত ফলাফলের দিক থেকে ভারতের থেকে কয়েক গুণ এগিয়ে আছে তুরস্ক। সরকারি সহায়তা সে দেশের একটি বড় অস্ত্র।
চুল প্রতিস্থাপনের পদ্ধতি কী?
শরীরের ঘন লোমযুক্ত কোনও অংশ থেকে লোমকূপ তুলে এনে মাথার টাকে বসিয়ে এই হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। এই ট্রান্সপ্লান্টের দু'টি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে: ফলিকুলার ইউনিট ট্রান্সপ্লান্টেশন (এফইউটি) এবং ফলিকুলার ইউনিট এক্সট্রাকশন (এফইউই)।
প্রথম ক্ষেত্রে, শরীরের লোমশ অংশ থেকে চামড়া তুলে নিতে হয় এবং পৃথক ফলিকুলার ইউনিটগুলিকে ছিন্ন করে, আলাদা ভাবে টাক মাথায় বসানো হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, লোমশ অংশ থেকে পৃথক ফলিকল বের করা হয়, তারপর তা সরাসরি মাথায় প্রতিস্থাপন করা হয়।
প্রতিস্থাপনের এক একটি সেশন চার থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে। পুরোপুরি প্রতিস্থাপন হয়ে গেলে, নতুন বসানো চুল সাধারণত কয়েক সপ্তাহ পরে পড়ে যায়। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে আবার তা গজাতে শুরু করে। এভাবে প্রায় এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ ফলাফল পাওয়া যায় ট্রান্সপ্লান্টের।
ব্যথা হয় নাকি?
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতিটি লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া করে তবেই করা হয়। ফলে ট্রান্সপ্লান্টের সময়ে কোনও ব্যথা অনুভব হয় না। খানিকটা অস্বস্তি হতে পারে কেবল। পদ্ধতি শেষ হলে, রোগীদের লোমশ অংশ এবং মাথা, অর্থাৎ যেখান থেকে চুল নেওয়া হয়েছে ও যেখানে বসানো হয়েছে-- এই দু'জায়গাতেই হালকা ব্যথা, ফোলাভাব এবং অস্বস্তি হতে পারে। তাই হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের পরে ব্যথার ওষুধ এবং যথাযথ যত্ন প্রয়োজন।
কী রকম যত্ন প্রয়োজন?
ট্রান্সপ্লান্টের পরে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। এড়াতে হবে সরাসরি রোদ্দুর। কয়েক সপ্তাহের জন্য বেশি পরিশ্রমের কোনও কাজ করা যাবে না। সার্জেনের নির্দেশ মেনে মাথা ধুতে হবে। দরকারে ওষুধ খেতে হবে। সংক্রমণ, দাগ, চুলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি-- এই ধরনের ঝুঁকি থাকলেও, তা খুবই সামান্য।
তাহলে আর দেরি কেন, কীই বা ভাবছেন মাথা চুলকে! একমাথা চুল আর মোটেও স্বপ্ন নয়, তুরস্কের টিকিট কাটলেই হল!