শেষ আপডেট: 16th July 2024 13:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কবিতা-প্রেমী চোর। প্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধায়, অনুশোচনায় চুরির যাবতীয় মালপত্র বাড়ি বয়ে এসে ফেরত দিয়ে গেল চোর। যাওয়ার আগে ফাঁকা বাড়ির দেওয়ালে ক্ষমাপত্র লিখে সেঁটেও দিয়ে গিয়েছে 'নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক' চোরবাবাজি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছেন, পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপক প্রয়াত মারাঠি কবি নারায়ণ সুর্বের বাড়িতেই থাকতেন তাঁর মেয়ে-জামাই। সুর্বের মেয়ে সুজাতা এবং স্বামী গণেশ ঘারে তাঁদের ছেলের বাড়ি বিরার-এ গিয়েছিলেন। ১০ দিন ধরে ওই বাড়ি ফাঁকাই পড়েছিল। বেশ কয়েকদিন তালাবন্ধ দেখে চোরবাবাজির হাত সুড়সুড় করছিল। মওকা বুঝে সে হানা দেয় সেই বাড়িতে।
মঙ্গলবার পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ি থেকে বেশকিছু মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয় চোর। যেমন একটি এলইডি টিভি সহ নারায়ণ সুর্বের বেশিকিছু দামি মালপত্র। রায়গড় জেলার নেরালে কবি নারায়ণ সুর্বের বাড়ি। পুলিশ আরও জানিয়েছে, প্রথমদিন কিছু মালপত্র হাতিয়ে পরদিন ফের ওই বাড়িতে ঢোকে দুষ্কৃতী।
কিন্তু, সেদিন তার চোখে পড়ে নারায়ণ সুর্বের ছবি ও অন্যান্য পুরস্কার ও পরিচিতির দিকে। পুলিশের সন্দেহ চোরবাবাজি নিশ্চিতরূপে লেখাপড়া জানে, বিশেষত সাহিত্য সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। সে কারণে কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা আসে তার মনে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে চুরির সামগ্রী নিয়ে আসে কবির বাড়িতে। আবার সে সমস্ত রেখে যায় যথাস্থানে। যাওয়ার আগে একটি চিরকুট লিখে দেওয়ালে সেঁটে রেখে যায়। তাতে সে বাড়ির মালিকের কাছে চুরি করতে ঢোকার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। এই রকম একজন বড় সাহিত্যিকের বাড়িতে চুরি করার জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে, একথা লিখে গিয়েছে চোর।
কবিকন্যা সুজাতা এবং তাঁর স্বামী ছেলের বাড়ি থেকে ফিরে এসে দেখতে পান চোরের কীর্তি। পুলিশ বিভিন্ন জায়গার আঙুলের ছাপ নিয়েছে চোর ধরার জন্য। প্রসঙ্গত, মারাঠি ভাষায় বিখ্যাত কবি হয়ে ওঠার আগে নারায়ণ সুর্বের দুর্বিষহ ছেলেবেলা, কৈশোর-যৌবনের কথা অনেকেই জানেন।
১৯২৬ সালে অনাথ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন সুর্বে। মুম্বইয়ের সড়কে অনাথ হিসেবেই বড় হন। সে সময় বাড়ির কাজের লোক, হোটেলের থালাবাসন ধোওয়া, কুকুরের পরিচারক, বাড়ি বাড়ি দুধ দেওয়া, মুটে এবং কারখানায় কাজ করে পেট চালিয়েছেন। সে কারণে তাঁর কবিতা-লেখাতেও শহুরে শ্রমজীবী মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ধরা পড়েছে। প্রথাগত কবিতার বাইরে বেরিয়ে তিনি খেটেখাওয়া মানুষের লড়াইকে সাহিত্যে দিয়েছেন। তাই সোভিয়েত রাশিয়াও এই কবিকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানে ভূষিত করেছিল। ২০১০ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় নারায়ণ সুর্বের।