Advertisement
Advertisement
শেষ আপডেট: 3 March 2024 20:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উত্তর কলকাতায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস রায়ের মধ্যে বনিবনার অভাব নতুন ঘটনা নয়। সাত মাস আগেই এক ঘরোয়া আড্ডায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাপস জানিয়ে দিয়েছিলেন, যাই ঘটে যাক, লোকসভা ভোটে সুদীপকে ফের উত্তর কলকাতায় প্রার্থী করা হলে তিনি প্রচারে নামবেন না।
কিন্তু সূত্রের খবর, ব্যাপারটা এখন আর সেই অবধিও থেমে নেই। তাপস রায় বিশ্বাস করেন, তাঁর বাড়িতে গত ১২ জানুয়ারি যে ইডির তল্লাশি চলেছিল, তার নেপথ্যেও ছিলেন সুদীপই। তিনিই লেলিয়ে দিয়েছেন। এবং তাঁর এও অভিমান যে, তিনি যে ‘চোর-জোচ্চোর’ নন, তা জেনেও দল সেদিন তাঁর ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি।
তাপস রায় উত্তর কলকাতায় বরাবরই ডাকাবুকো নেতা বলে পরিচিত। এখন বরাহনগরের বিধায়ক। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, গত দেড় মাস ধরে তাপসবাবু অভিমান বুকে চেপে রয়েছেন। এখন প্রায় ভিসুভিয়াসের মতো অবস্থা। কোনও অঘটন ঘটে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ ব্যাপারে তাপস রায়কে এদিন দ্য ওয়ালের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল। অঘটন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বড় ঘটনা কত সময়েই ঘটে যায়। এই যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ইস্তফা দিতে চলেছেন, রাজনীতিতে নামছেন, এও কি ভাবতে পেরেছিল।” তাঁর ব্যক্তিগত রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাপস বলেন, “আমার ব্যাপারে কে কী বলছে জানি না”।
তাপসবাবু এখনই খোলাখুলি না বললেও, কিছু যে একটা ঘটতে পারে তা আন্দাজ করার চেষ্টায় রয়েছেন অনেকেই। বড় ঘটনা ঘটলে তাঁর কোনও না কোনও ইঙ্গিত আগাম পাওয়া যায়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রাজনীতিতে নামতে পারেন তেমন সন্দেহ তাঁর কথাবার্তা শুনে অনেকেরই হয়েছিল। তাপসবাবুর ক্ষেত্রেও গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে নানান ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
যেমন এক নম্বর- তাপসবাবু নিয়মিত তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র বরাহনগরে যান। কিন্তু শেষবার তিনি বরাহনগরে গিয়েছিলেন গত ২১ জানুয়ারি। সেদিন বরাহনগরের সব কাউন্সিলর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। সাংসদ সৌগত রায়ও সেই বৈঠকে ছিলেন। ওই দিনের পর তাপস রায় আর বরাহনগরে যাননি।
দু’নম্বর- ১০ তারিখ তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ রয়েছে। এই সব সমাবেশের আগে তাপস রায় বরাবর সক্রিয় থাকেন। জেলা থেকে যে কর্মীরা কলকাতায় আসেন তাঁদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্তের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কিন্তু এবার ব্রিগেডের প্রস্তুতিতে তাপসের দেখা নেই।
তিন নম্বর-৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। তার মূল আয়োজনের দায়িত্ব থাকে সুব্রত বক্সী ও তাপস রায়ের উপর। কিন্তু এবার সুব্রত বক্সীকে তাপস মুখের উপর জানিয়ে দেন, তুমিই দেখে নাও ব্যাপারটা।
রাজনীতির চরিত্রই হল মানুষ একটি ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনার মিল বা তার সঙ্গে জুড়ে দেখার চেষ্টা করেন। লোকসভা ভোট আসছে। বাংলায় সাত দিনের মধ্যে তিনটে সভা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৭ মার্চ বারাসতে তাঁর সভা নিয়ে অনেক জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই জল্পনা থেকেও এখন বিচ্ছিন্ন নন তাপস রায়ের মুখটি। এও জল্পনা যে তাপস রায় ইস্তফা দিতে পারেন।
বরাহনগরের বিধায়ক ছাড়াও তাপস রায়ের একটা সাংগঠনিক পদ রয়েছে। তিনি তৃণমূলের ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। তাপস ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তাপস রায় কপিবুক প্লেয়ার। বাড়ির বৈঠকখানায় সুনীল গাভাসকারের সঙ্গে তাঁর একটি ছবি সযত্নে সাজানো রয়েছে। অঘটন যদি সত্যিই ঘটে তাহলে কপি বুক খেলবেন। সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তবেই নয়া ইনিংস শুরু হবে। তবে তার আগে যদি মানভঞ্জনের চেষ্টা হয়, তাঁকে মর্যাদা দেওয়া হয়, তাহলে অভিমান কেটেও যেতে পারে। কারণ মানুষটা আদতে মনে প্রাণে কংগ্রেসি।
Advertisement
Advertisement