শেষ আপডেট: 1st July 2024 17:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো, উত্তর দিনাজপুর: বাংলায় সমাজবিরোধীদের চটুল নাম দেওয়ার ধারা বহু দিন ধরেই রয়েছে। অটো গোপাল, মেশিন দিলীপ, রসগোল্লা—গোছের নাম আকছার শোনা যায়। সেই নামের পিছনে অবধারিতভাবেই একটা গল্প থাকে। বেশিরভাগ সময়েই সেই গল্প মুখরোচক ও রোমহর্ষক হয়। তবে গত বিশ ত্রিশ বছরে এ ধরণের নামের পাহাড়ে ‘জেসিবি’ নামটা একেবারে অনন্য। চোপড়ার ঘটনায় অভিযুক্ত তাজমুলের নাম জেসিবি। কৌতূহলের বিষয় হল, এই জেসিবি নামকরণ হল কীভাবে? গল্পটা কী!
মাটি কাটার কাজে যে জেসিবি মেশিন ব্যবহার করা হয় অনেকেই চেনেন। আসলে মেশিনটার নাম জেসিবি নয়। জেসিবি হল একটি বিলিতি কোম্পানি। তার পুরো নাম জেসি ব্যামফোর্ড এক্সক্যাভেটরস। ইংল্যান্ডের স্ট্যাফোর্ডশায়ারে তাদের অফিস।
জানা গেল, তাজমুল একা জেসিবি নন, চোপড়া ব্লকের এদিক সেদিকে আরও অনেককেই জেসিবি বলে ডাকা হয়। যারা একশো মানুষের কাজ একা করতে পারে, তাদেরই নাকি জেসিবি বলে ডাকা হয়। বিস্তীর্ণ এলাকায় তোলাবাজি করে টাকা তোলার দায়িত্ব থাকে এদের উপর। এরজন্য প্রয়োজনে মারধর করতে পিছুপা হয় না তারা।
রবিবার চোপড়া কাণ্ডে তৃণমূল নেতা তাজমুল হক ধরা পড়ার পরে তাকে জেসিবি বলে উল্লেখ করা হচ্ছিল। সোমবার ইসলামপুর আদালতে পেশ করা হলে পাঁচদিনের হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। দশদিনের হেফাজত চাওয়া হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় ভাওয়াল জানান, ভাইরাল ভিডিও দেখে সুয়োমোটো মামলা করে পুলিশ। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় তাকে। পুলিশের ফরোয়ার্ডিংয়ে জেসিবির বিরুদ্ধে খুনের মামলা-সহ ১২ টি মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
তারপরেই প্রশ্ন উঠছে খুন-সহ একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কীকরে এতদিন বাইরে ছিল তাজমুল? কেনও এতদিন পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? সেই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর মেলেনি। রবিবার দুপুরে চোপড়ার তৃণমূল নেতা তাজমুলের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায় এক তরুণীকে রাস্তার মধ্যে ফেলে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারছেন তাজমুল। যন্ত্রণায় কাতর হওয়া মেয়েটিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে ফের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে চলছে মার। একইভাবে মারধর করতে দেখা যায় এক তরুণকেও। দ্য ওয়াল অবশ্য এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। জানা যায়, গ্রামের এক যুগলের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সালিশি সভা ডেকে তাদের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালায় তাজমুল ওরফে জেসিবি।
এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরেই রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন বিরোধীরা। রবিবার বিকেলের পরেই ইসলামপুরের পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে গ্রেফতার করে তাজমুলকে। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই তার উত্থান। রীতিমতো বলশালী এই সমাজবিরোধীকে এড়িয়েই চলেন তাঁরা। কারণ টাকা তোলার জন্য যে কোনও ধরনের অপরাধেই সে সিদ্ধহস্ত।
সম্প্রতি নবান্নে পরের পর বৈঠকে পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের লোক হলেও কোনও বেয়ারাপনা যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাজমুল কাণ্ডে চোপড়া থানার আইসিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।