শেষ আপডেট: 3rd April 2024 13:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিল্লির আবগারি মামলায় ছয় মাস জেলে থাকা আম পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং’কে মঙ্গলবার জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার নিম্ন আদালত তাঁর জামিনের শর্ত ঘোষণা করেছে। পাসপোর্ট জমা রাখার পাশাপাশি বলা হয়েছে, তিনি এনসিআর অর্থাৎ ন্যাশনাল ক্যাপিটল রিজিয়নের বাইরে যেতে পারবেন না, বলেছে আদালত।
সঞ্জয়ের পরিবার মঙ্গলবারই জানিয়ে দেয়, তাঁর জামিন পাওয়া উপলক্ষে বাড়িতে কোনও আনন্দ অনুষ্ঠান হবে না। কেজরিওয়াল-সহ বাকি নেতারা ছাড়া পেলে তখন আনন্দ করা হবে।
কিন্তু আপের অন্দরে, বিশেষ করে কেজিরিওয়ালের মাথায় সঞ্জয়ের জামিন ঘিরে অন্য অঙ্ক কাজ করছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের খবর। প্রাথমিকভাবে আপ নেতৃত্ব আশা করেছিল সঞ্জয়ের জামিনকে দৃষ্টান্ত করে কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়াদের মুক্তির দাবি জানানো হবে আদালতে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবারের রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে, সঞ্জয়ের জামিনকে বাকি ধৃত আসামিরা দৃষ্টান্ত হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন না।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মঙ্গলবার এরপরই সুনীতা মুখ্যমন্ত্রীর বাংলোয় আপ বিধায়কদের বৈঠকে ডাকেন। ছিলেন সব মন্ত্রীরাও। সেখানে প্রস্তাব নেওয়া হয় কেজরিওয়ালের অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব দেবেন সুনীতাই। এজন্য দলীয় সুপ্রিমো কেজরিওয়ালের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সুনীতাকে দেন বিধায়কেরা। বিধায়কেরা বৈঠকে সমস্বরে কেজরিওয়াল পত্নীকে ‘সুনীতা ভাবি’ বলে সম্মোধন করে বলেন, আমাদের আপনার প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। আপনি সে কথা আমাদের জেলবন্দি নেতাকে জানিয়ে দেবেন।
সুনীতা যখন এই বৈঠক করছেন তখন তিহাড় জেলের ফটকের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন সঞ্জয়ের স্ত্রী এবং তিন শ্যালক। আম আদমি পার্টিতে সঞ্জয়ের গুরুত্বের সঙ্গে যা ছিল সম্পূর্ণ বেমানান। দলে কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়ার পরই সঞ্জয়ের স্থান। স্বভাবতই বিজেপি প্রচার শুরু করেছে, আপে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়েছে। সঞ্জয় জামিন পেতেই কেজরিওয়াল তাঁর স্ত্রীর প্রতি বিধায়কদের নিঃশর্ত আনুগত্য আদায় করে নিয়েছেন। কারণ, দলে সঞ্জয়েরও প্রভাব কম নয়।
কেজরিওয়ালকে আগামী ১৬ এপ্রিল আদালতে তোলা হবে। সেদিন তিনি জামিন না পেলে জেল থেকে সরকার চালানো নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরদার হবে। তখন উত্তরসূরি বাছাইয়ের প্রসঙ্গ এলে সঞ্জয়ের নাম সামনে আসা অসম্ভব নয়। বর্তমানে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ। বস্তুত দিল্লিতে আপের জন্ম, রমরমার পিছনে সঞ্জয়ের বড় ভূমিকা ছিল। যে কারণে কেজরিওয়াল নিজে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন তাঁকে দলে যোগ দেওয়াতে। আপে বিজেপি তথা মোদী বিরোধী লড়াইয়ের মুখ হিসাবেও কেজরিওয়ালের থেকে সঞ্জয় এগিয়ে আছেন। সব মিলিয়ে সঞ্জয়ের জামিন আপের জন্য স্বস্তি নাকি অস্বস্তির তা নিয়েও জল্পনা চলছে। তার উপর ইডির মঙ্গলবার আদালতে সঞ্জয়ের জামিনের বিরোধিতা না করার পিছনে কোনও বিশেষ অঙ্ক কাজ করছে কি না তা নিয়েও গুঞ্জন চলছে।
বিজেপি বলছে, এসবই আপের অন্দরে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের ইঙ্গিত। দলের রাজ্যসভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবার বক্তব্য, সঞ্জয় জামিন পাওয়া মানে কেজরির মুক্তি আসন্ন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ তিনি সরকারের মাথা হিসাবে দুর্নীতিরও নেতৃত্ব দিয়েছেন। কেজরিওয়াল স্ত্রীকে রাবড়ি দেবী বানাতে চাইছেন।