শেষ আপডেট: 1st January 2024 16:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিটি বক্তৃতাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ও আদর্শে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এর অন্যথা কখনও হয়নি। কিন্তু কী এমন পরিস্থিতি হল যে সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে বলতে হল যে,“এই নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি লড়াই করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই তিনি লড়াই করবেন। জোড়াফুলকে সামনে রেখেই তিনি লড়াই করবেন, এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।”
সুব্রত বক্সীর এই কথাটা এদিন তৃণমূলের অনেকেরই কানে বেঁধেছে। এক ‘যদি লড়াই করেন’। এবং দুই ‘জোড়াফুলকে সামনে রেখেই তিনি লড়াই করবেন, এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।”
পুজোর পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সম্পর্কে একটা শৈত্য দেখা যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। অভিষেক দলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, লোকসভা ভোটে তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের বাইরে তিনি বেরোবেন না। অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংগঠনের বিষয়আশয় দেখেন। হঠাৎ তিনি যদি নিজেকে গুটিয়ে নেন তাহলে ভোট ব্যবস্থাপনার কী হবে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই। তবে এখনও পর্যন্ত অন্তত এই সংশয় তৈরি হয়নি যে জোড়াফুলের বাইরে অন্য প্রতীক নিয়ে অভিষেক লড়বেন।
কিন্তু সুব্রত বক্সী, 'আমি নিশ্চিত' এই কথা বলাতেই যেন অন্যরকম লাগছে অনেকেরই। বক্সীর এ কথা নিয়ে দলের মধ্যে অভিষেক ঘনিষ্ঠরা প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন।
তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলীয় কার্যালয়ে অভিষেক এদিন যাননি। তবে সকালে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “নব উদ্যমে আগামী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন, ক্লেদ, বিষাদ, গ্লানি মুছে যাক। একসঙ্গে সততা ও সংহতির সঙ্গে দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকব”।
অভিষেক ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, সুব্রত বক্সী অহেতুক মন্তব্য করেছেন। অভিষেক যদি লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন, বলাটা অর্থহীন এবং প্রসঙ্গ বহির্ভূত। কারণ, অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। বরং আসল কথা হল, সংগঠনে যে সংস্কার চাইছেন অভিষেক, একাংশ নেতার মৌরসীপাট্টা ভাঙার কথা বলছেন, সে ব্যাপারে প্রতিষ্ঠা দিবসে কেন কোনও বার্তা দিলেন না রাজ্য সভাপতি!
সুব্রত বক্সী বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন। দল তৈরি হওয়ার পর থেকেই তিনি রাজ্য সভাপতি পদে রয়েছেন। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবার অচলায়তন ভাঙতে চাইছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। আর সেই কারণেই দলের মধ্যে প্রবীণ বনাম নবীনের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অভিষেকের স্পষ্ট বক্তব্য, শুধু মাত্র পুরনো নেতা বলেই কেউ পদ বা দফতর আগলে বসে থাকবেন বা সাংসদ-বিধায়ক হবেন তা চলবে না। দলে আরও অনেক দক্ষ ও পরিশ্রমী নেতা কর্মী রয়েছেন। মেধার ভিত্তিতে, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ ও টিকিট দেওয়া জরুরি। নইলে কারও দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত থাকছে না। প্রোডাক্টিভিটিও থাকছে না।