সুনীতা উইলিয়ামস।
শেষ আপডেট: 24th August 2024 14:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। কিন্তু ৮০ দিন পরেও, কবে পৃথিবীতে ফিরবেন তাঁরা, তা এখনও অনিশ্চিত। তাই উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে মহাকাশচারী মহলে। যদিও নাসার তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নিরাপদেই আছেন সুনীতারা। আজ এজেন্সি পর্যায়ে একটি রিভিউ মিটিং হবে নাসায়। তারপরই জানা যাবে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরা নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
তৃতীয়বারের জন্য মহাকাশ অভিযানে গেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। গত ৫ জুন নাসার তরফে আমেরিকার ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস স্টেশন থেকে মহাকাশযান বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ক্যাপস্যুলে চড়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের একটি ভিডিওয় দেখা যায়, আনন্দে হাততালি দিতে দিতে নেচে নেচে স্পেস স্টেশনে ঢুকছেন তিনি।
তার পর থেকে ৮০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও স্পেস স্টেশনে আটকে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস! সঙ্গী তাঁর সহ-অভিযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর।
এই অবস্থায় সুনীতা-ব্যারিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ, শনিবারই নিতে চলেছে নাসা। এক বিবৃতিতে তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ২৪ অগস্ট এজেন্সি পর্যায়ে রিভিউ মিটিংয়ের পর জানা যাবে সুনীতাদের নিয়ে স্টারলাইনারের পৃথিবীতে ফেরা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতারা। কিন্তু পৃথিবী ছাড়ার পরেই এই বোয়িংয়ের পাঁচটি হিলিয়াম ফুটো হয়ে যায়। এর ফলে নষ্ট হয়ে যায় পাঁচটি ম্যানুভারিং থ্রাস্টার।
প্রসঙ্গত, এটিই ছিল বোয়িং-এর প্রথম মহাকাশচারী নিয়ে যাত্রা। তাছাড়া, সাধারণ মানুষ যাতে বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশে বেড়াতে যেতে পারে, সেই পরিকল্পনারও প্রথম ধাপ এই বোয়িং। অভিযোগ, স্টারলাইনার ওড়ার আগেও রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল। তখনই কেন মহাকাশযানটিকে ত্রুটিমুক্ত করা হয়নি, কেন স্থগিত করা হয়নি এই উড়ান, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বজুড়ে।
নাসা জানিয়েছে, স্টারলাইনার তথা সুনীতাদের কীভাবে ফেরানো যেতে পারে তার জন্য ইতিমধ্যে ১ লক্ষেরও বেশি মডেল-টেস্ট করেছে নাসা। তবে কোনও ভাবেই কোনও সুরাহা মিলছে না।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, নাসা এবং বোয়িং দুই সংস্থাই এই গ্যাস লিকের বিষয়টি আগেই আন্দাজ করেছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশেষ পাত্তা না দিয়েই সুনীতাদের স্পেস স্টেশনে পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয়, সুনীতা ও বুচের এই স্টারলাইনার রকেটের নকশা তৈরির পিছনে নাসারও হাত রয়েছে। তাই তাঁরা কেন এই গ্যাস লিকের বিষয়টি নিয়ে সচেতন হল না, সেই নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।
স্টারলাইনারের কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার জানিয়েছেন, এই মিশন আগে ছিল সর্বাধিক ৪৫ দিনের, তা থেকে একে ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে বাকি সময়ের মধ্যেই যে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, এমনটাও ভাবছেন না তাঁরা। নাসা বারবারই জানিয়েছে, দুই মহাকাশচারীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনও তাড়াহুড়ো করা হবে না। তবে চিন্তার বিষয় হল, ইতিমধ্যেই ৮০ দিন পেরিয়ে গেছে। একাধিকবার সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরার তারিখ বদল করা হয়েছে। এবার আর সময় নেই হাতে।
এবার জানা গেছে, ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স-এর সঙ্গে যৌথভাবে একটি মহাকাশযান তৈরি করছে নাসা। সেটাই মহাকাশে পাঠিয়ে সুনীতাদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
নাসা এবং স্পেস এক্স-এর যৌথ এই মিশনটির নাম দেওয়া হয়েছে ক্র-৯। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে ওই যানে দুজনকে মহাকাশে পাঠানো হবে। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে সুনীতাদের নিয়ে সেটি আবার পৃথিবীর দিকে ফিরবে। এই মিশন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হতে পারে।
এই অবস্থায় মহাকাশচারীদের শরীর খারাপ হতে শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর। দুজনের পেশি শিথিল হয়ে যাচ্ছে, হাড়ের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। যদিও নাসা জানিয়েছে, এই ধরনের সমস্যা হওয়া মহাকাশচারীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ব্যাপার। তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
নাসা জানিয়েছে, স্টারলাইনার মহাকাশযানের ত্রুটি পুরোপুরি না সারিয়ে চটজলদি যদি সুনীতাদের ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলেও বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে, ৩২২ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন সুনীতা উইলিয়ামস। একসময় সর্বোচ্চ স্পেসওয়াকের রেকর্ডও তাঁর দখলে ছিল। সুনীতাদের এই মিশন অবশ্য অনেক আগেই হত। কিন্তু প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে তা পিছিয়ে যায় একাধিকবার। এখন মহাকাশে পৌঁছনোর পর বিরাট সমস্যার মুখে পড়েছেন তাঁরা।