Date : 17th May, 2025 | Call 1800 452 567 | [email protected]
আস্থার প্রতীক হিসেবে তাঁর ফিরে আসাপ্রথমবার ৯০ মিটারের গণ্ডি পার! দোহা ডায়মন্ড লিগে ইতিহাস লিখলেন নীরজ চোপড়াসলমন রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হাদি মাটারের ২৫ বছরের কারাদণ্ডখেয়েছেন হরিণের মাংস, রেখেছেন শিং! ৩ বছরের কারাদণ্ড আলিপুরদুয়ারের যুবকেরSSC: প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করিয়ে দিন! শুভেন্দুকে আর্জি চাকরিহারাদেরফ্রি হ্যান্ড পেলেন না জেল ফেরত অনুব্রত! বালুর ভাগ্যে কি শিকে ছিঁড়বে?ঠা-ঠা রোদে কোয়েলের 'মেটগালা' সাজ! রসিকতা পরমের, তারপরেই হাসির রোলSSC: 'ধৈর্য রাখুন, শর্তহীনভাবে পাশে আছি', চাকরিহারাদের ধিক্কার মঞ্চ থেকে বার্তা শুভেন্দুরস্কিন কেয়ারেও প্রকৃতির ছোঁয়া! মেট স্টুডিওর উদ্যোগ 'উর্ভিজা'ইদেই মুক্তি পাচ্ছে ‘ধামাল ৪’, ফের হাসির ঝড় নিয়ে কামব্যাক অজয়ের
Review- Sedin Kuyasha Chilo

'সেদিন কুয়াশা ছিল', বাংলায় হাড়হিম অ্যান্থলজি বিবেকের সামনে দাঁড় করায় ছবিটি 

দর্শক এই ছবি দেখতে যাওয়ার সময় যে মন নিয়ে ঢুকবেন, বেরবার সময় অন্যরকম মন নিয়ে বেরবেন। এই ছবি আমাদেরকে নিজেদের বিবেকের  সামনে দাঁড় করায়। 

'সেদিন কুয়াশা ছিল', বাংলায় হাড়হিম অ্যান্থলজি বিবেকের সামনে দাঁড় করায় ছবিটি 

শেষ আপডেট: 13 February 2024 14:06

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় 

ছবি - সেদিন কুয়াশা ছিল
পরিচালনা - অর্ণব  কে মিদ্যা
অভিনয় করেছেন-পরাণ, লিলি, খরাজ, দেবশংকর,জিতু,সৌরসেনী,জয়,অর্ণ 

দ্য ওয়াল রেটিং - ৮/১০ 

সত্যি কথা বলতে কি  নবাগত পরিচালক অর্ণব মিদ্যা তাঁর নতুন ছবি দিয়ে চমকে দিয়েছেন দর্শকদের। তার কারণ 'সেদিন কুয়াশা ছিল' ছবিটি নিয়ে আগে থেকে খুব বেশি উত্তেজনা ছিল না।  কিন্তু ছবি দেখার পর মনে হল, না দেখলে সত্যিই  অনেকখানি মিস করতাম। 

'সেদিন কুয়াশা ছিল' ছবির ট্রেলার খুব একটা আহামরি লাগেনি।তবে ছবিটা সম্বন্ধে কিছুটা আন্দাজ করা গেছিল। কিন্তু ছবি দেখতে গিয়ে সব আন্দাজই গোলমাল হয়ে যায়। কারণ এটি কী ধরনের ছবি হতে চলেছে সেই রহস্য ট্রেলারে বা ছবির প্রমোশনে উন্মোচন  করেননি পরিচালক।  

দর্শক এই ছবি দেখতে যাওয়ার সময় যে মন নিয়ে ঢুকবেন, বেরবার সময় অন্যরকম মন নিয়ে বেরবেন। এই ছবি আমাদেরকে নিজেদের বিবেকের  সামনে দাঁড় করায়। 
সব সম্পর্কেই যত্নের প্রয়োজন হয়। অথচ আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না । গতিময় জীবনে আমরা পাশের লোকের সব কথা মন দিয়ে শুনি না। কিন্তু পরে সেটাই আফসোস রেখে যায়। এই সুরটিকে নিয়ে পরিচালক অর্ণব কে মিদ্যা এই ছবি তৈরি করেছেন। 

আসলে 'সেদিন কুয়াশা ছিল' তিনটি একদিনের ঘটনার সমাহার। তিনটি ভিন্ন গল্প একই ছবিতে। কিন্তু তিনটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের গল্পের মূল সুর এক, যাকে বলে ‘অ্যান্থলজি’। বাংলা চলচ্চিত্রে অ্যান্থলজি খুব একটা দেখা যায় না। ছটি গল্প নিয়ে 'এক মুঠো ছবি' বা সন্দীপ রায়ের 'চার' ছবি হয়েছিল।আর তিনটি গল্পের সহাবস্থান আমরা দেখেছি সত্যজিৎ রায়ের 'তিন কন্যা' ছবিতে।  কিছু বছর আগে 'হয়তো মানুষ নয়' বলেও একটি  অ্যান্থলজি  এসেছিল, তবে তা তেমন দাগ কাটেনি।বাংলার পরিচালকরা অ্যান্থলজি ফিল্ম সহজে করেন না। সেই সাহস দেখিয়েছেন নতুন  পরিচালক অর্ণব কে মিদ্যা। 

অর্ণবের পরিচালনায় এটি দ্বিতীয় ছবি। প্রথম ছবি 'অন্দরকাহিনি'। কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা সরকার। এই ছবিটি মুক্তির আলো বহু বছর দেখেনি। তাই পরিচালকের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ফিচার ফিল্ম 'সেদিন কুয়াশা ছিল'। নতুন পরিচালক হলেও পরিচালনার হাত  তাঁর বেশ পাকা। কারণ পরিচালক দীর্ঘদিন ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াতে কাজ করেছেন। প্রথম ছবিতেই তাঁর পরিচালনা ও সংলাপ দর্শক মনে দাগ কাটল। 

ছবির প্রথম গল্প সেই স্বদেশি আন্দোলনের যুগের। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগের  রক্ত ঝরানো বিপ্লবের গল্প। এক গৃহবধূ (সৌরসেনী মৈত্র) যে তার বিপ্লবী স্বামীকে হারিয়েছে ব্রিটিশের গুলিতে। কিন্তু তবু মেয়েটি সধবার পোশাক পরে, তার কপালে জ্বলজ্বলে সিঁদুরের টিপ। অসুস্থ শ্বশুর যদি ছেলের মৃত্যু সংবাদ সহ্য করতে না পারেন তাই পুত্রবধূ এভাবে তার ভবিতব্য আড়াল করে রাখে। এক রাতে তার সঙ্গে দেখা হয় এক আগন্তুকের। তারপর? আগন্তুক অর্ণ মুখোপাধ্যায়। 


দ্বিতীয় গল্প তিন বন্ধুর। তারা সিনিয়র সিটিজেন। পরিচালক (জয় সেনগুপ্ত),লেখক (খরাজ মুখোপাধ্যায়,চিত্রকর (দেবশংকর হালদার)-তিন বন্ধুর রিউইউনিয়নের কাহিনী।
শেষ গল্পে বাবা মা নিজেদের সবটুকু দিয়ে যে ছেলেকে ডাক্তার তৈরি  করল সেই ছেলের অভিজাত ফ্ল্যাটেই বাবা মা অবহেলিত বাতিল। বাবা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মা লিলি চক্রবর্তী ও ছেলের ভূমিকায় জিতু কমল। তবে এত সোজা সরল গল্প নয়। ছবিটা দেখলে বুঝবেন রহস্যে ঘেরা কুয়াশা সেদিন ছিল কতখানি। 


প্রথম গল্পে সৌরসেনী মৈত্র একেবারে তাঁতের শাড়ি,শাঁখা পলা সিঁদুর পরিহিতা চল্লিশের দশকের বনেদী বাড়ির বউ। এরকম চরিত্রে সৌরসেনীকে কেউ ভাবতেই পারবেন না কিন্তু পরিচালক সেই সাহস দেখিয়েছেন। সৌরসেনী করেছেনও খুব ভাল। সংসারের সবার দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া পরিশ্রান্ত বউয়ের চরিত্রে তিনি  যথাযথ। তবে সংলাপে সৌরসেনীর নিজস্ব উচ্চারণ ভঙ্গি কাটাতে পারলে আরও ভাল হত। আর আগন্তুকের ভূমিকায় এক কথায় অনবদ্য অর্ণ মুখোপাধ্যায়।  মঞ্চের দাপুটে অভিনেতা অর্ণ। কিন্তু তিনি পর্দা আর মঞ্চের অভিনয়ের তফাতটা দুর্দান্ত আত্মস্থ করেছেন। তাই এত গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিনয় করতে পেরেছেন। গল্পের শেষে সত্যিকারের শো ম্যান অর্ণ। এই ছবির হাত ধরেই প্রথম রুপোলি পর্দায় পা রাখলেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী উপাবেলা।মুখোপাধ্যায়। যথাযথ অভিনয় করলেও অভিনয় করার সুযোগ তিনি পেলেন না ,ছোট গল্পের ছোট চরিত্রের কারণে। সৌরসেনীর বরের চরিত্রে সবুজ বর্ধন স্বল্প উপস্থিতিতে মন জয় করেছেন। 

দ্বিতীয় ছবিতে খরাজ মুখোপাধ্যায়,জয় সেনগুপ্ত ও দেবশংকর হালদার তিনজনই বলিষ্ঠ পরিণত অভিনেতা। এরা কথা বললেই সেটা দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে। তিনজনের অভিনয় মন ভাল করে। খরাজ নিজের গলায় গানও গেয়েছেন ছবিতে। তবে তৃতীয় গল্পে সবার উপর ছাপিয়ে গেল পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়। হাসি কান্না মাখা অভিনয়ে চোখে জল ধরে রেখে পরাণ যে অভিনয় করলেন সেটা অভিনয় নয়,যেন বড্ড বাস্তব। লালিত্য মাখা স্নেহময়ী লিলি চক্রবর্তী তাঁর হাতে বানানো নাড়ু পায়েসের মতোই মিষ্টি। লিলি পরাণ জুটিকে বেশ লাগল। জিতু কমল চরিত্র অনুযায়ী পারফেক্ট। শেষ দৃশ্যে জিতু মাত করেছেন। সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা যথাযথ। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতনি পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রথম ফিল্মে অভিনয় করল। ছবিতেও সে দাদুরই নাতনি। ছোট্ট পৃথা বুঝিয়ে দিল সে দাদুরই নাতনি। এতটুকু জড়তা নেই প্রথম অভিনয়ে। 

'সেদিন কুয়াশা ছিল' ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন রণজয় ভট্টাচার্য। রণজয় মানেই কানে আরাম দেওয়া মেলোডি বেসড গান। এখানেও তিনি নিরাশ করেননি। ছবির শীর্ষসঙ্গীতে মন কাড়ে শাওনি মজুমদারের কন্ঠে। এই ছবিতে লগ্নজিতা চক্রবর্তীকে দিয়ে একখানি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইয়েছেন রণজয়। নতুন ভাবনায় রবি ঠাকুরের গান মন্দ লাগেনা। লগ্নজিতার কন্ঠ রবীন্দ্রসঙ্গীতে কতটা মনে ধরে সেটা শ্রোতারা জবাব দেবেন। ছবির শেষে রয়েছে উপরি উপহার নচিকেতা চক্রবর্তীর গান। নচিকেতা মানেই নস্ট্যালজিয়া। ছবির ক্লাইম্যাক্সের শেষে নচিকেতার গান ওষুধের মতো কাজ করে। 

'সেদিন কুয়াশা ছিল' সব দাপুটে অভিনেতাদের অভিনয়ের সমাহার। নামী থেকে নবাগতদের একই সুতোতে রেখে খুব সুন্দর ছবিটি নির্মাণ করেছেন পরিচালক অর্ণব মিদ্যা। নতুন পরিচালককে এমন ছবি করার সাহস জুগিয়েছেন প্রযোজক বৈশালী প্রসাদ,সায়ন্তন ঘোষাল,সুপ্রিয় সামন্ত। 

অ্যান্থলজি ছবিতে কতটা রাখব আর কতটা ছাঁটব সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুচারু ভাবে সেটি করেছেন সম্পাদক অনির্বাণ মাইতি।  মনোজ কর্মকার শুভদীপ নস্করের চিত্রগ্রহণ মন্দ নয়। তবে খরাজ ও জয় দুই বন্ধু যেখানে কথা বলছেন ফোনে  ঘুরতে যাবার জন্য এবং ঘুরতে যে জায়গায় তাঁরা যাচ্ছেন  দুটো পরিস্থিতির ব্যাকগ্রাউন্ড দৃশ্যপট এক। বোঝাই যায় একই জায়গায় শ্যুট করা হয়েছে। পরিচালকের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হিসেবে ভাল ভাবেই উতরেছে। কিন্তু ছবিটিকে প্রেক্ষাগৃহে রাখা হলে তবেই দর্শকের কাছে পৌঁছবে। 

'সেদিন কুয়াশা ছিল' দেখার পর মনে একটা রেশ রয়ে যাবে। আমাদের নিজেদের বিবেকের সামনে দাঁড় করায় এই ছবি


ভিডিও স্টোরি