নিজস্ব চিত্র।
শেষ আপডেট: 24th July 2024 19:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মুখ্যমন্ত্রী ধরে আনতে বললে বেঁধে আনেন। হকার সমস্যা সমাধানে পুলিশি তৎপরতা নিয়ে এই অভিযোগ আগেই তুলেছিল বিরোধীরা। এবার কলকাতা পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে বলতে গিয়ে এই প্রসঙ্গের অবতারণা করলেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ।
কলকাতার অন্যতম বড় পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটি। যার অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা বিজেপি নেতা সজল। গত ১৮ জুলাই মুচিপাড়া থানার তরফে পাঠানো নির্দেশিকায় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটিকে একাধিক বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে, নিয়ম না মানা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের ওই নির্দেশিকা নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলেছেন সজল। বিজেপি কাউন্সিলরের কথায়, "কলকাতার এত পুজো কমিটি থাকতে বেছে বেছে আমাকেই কেন এই প্রেমপত্র?" খানিক থেমে জবাবও দিয়েছেন নিজেই। বলেছেন, "আসলে মুখ্যমন্ত্রী ধরে আনতে বললে পুলিশ বেঁধে আনে। তাই মুখ্যমন্ত্রী বলার এক সপ্তাহ আগেই পুলিশ আমাদের পুজো কমিটিকে নোটিস ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদেরই কেন নোটিস ধরানো হল, তার কারণও স্পষ্ট।"
এরপরই কোনও রাখঢাক না রেখে সজল বলেন, "আমরা যে কোনও আলোচনায় যেতে রাজি, কিন্তু পুলিশ এমন অনেক শর্ত দিয়েছে যা মানা সম্ভবই নয়। তেমন হলে আমরা পুজো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব!"
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৮ জুলাই মুচিপাড়া থানার পক্ষ থেকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোকে কেন্দ্র করে পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুজো মণ্ডপে প্রবেশ ও বাহিরের পথ চওড়া করতে হবে। পুলিশের নজরদারির জন্য মন্ডপের ভেতরেও নির্দিষ্ট জায়গা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মণ্ডপের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা রাখার কথাও বলা হয়েছে। তা না হলে ভিড়ের মধ্যে সবচেয়ে অসুবিধেয় পড়ে শিশু ও বয়স্করা।
নির্দেশিকায় পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে লেজার সাউন্ড লাইট শোয়ের জেরে পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই ধরনের কোনও লেজার/লাইট/সাউন্ড শো করা যাবে না। এমনকী প্যান্ডেলের অভ্যন্তরে আলোকসজ্জা কখনও বন্ধ করা যাবে না। মূলত দর্শকদের আকর্ষণের জন্য অনেক সময় প্যান্ডেলের ভেতরের আলোয় নানারকম কারুকাজ করে থাকেন উদ্যোক্তারা। এর ফলে ভেতরে পর্যাপ্ত আলো না থাকার ফলেও ভিড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, প্যান্ডেলের ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
মন্ডপে প্রবেশ ও বাহিরের পথে কোথাও যেন কোনও স্টল না রাখা হয়, তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে উদ্যোক্তাদের। প্যান্ডেলের ভিতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত সাইনবোর্ড রাখতে হবে। গত বছর সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয় ১৪টি সিসিটিভি বসানো হয়েছিল। এবারে সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬টি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভিড় সামলাতে পিক আওয়ারে কমপক্ষে ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং কম সময়ে ১০০ জন স্বেচ্ছা্সেবক রাখার কথা বলাহয়েছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে আগে থেকে পুজোর থিমও থানাকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এও বলা হয়েছে, পুলিশ তা গোপন রাখবে।
সজলের প্রশ্ন, "২১ জুলাই শহিদ সমাবেশের চেয়েও কি আমাদের পুজোয় বেশি লোক হয়? ২১ জুলাইয়ের ভিড় কে সামলাল? তাহলে সেই পুলিশ পুজোর ভিড় সামলানোর দায়িত্ব নেবে না কেন?" এ ব্যাপারে পুলিশের অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
তবে মঙ্গলবার ইনডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে প্রাক-পুজো বৈঠক থেকে সুজিত বসুর শ্রীভূমির পুজোর জন্য এয়ারপোর্টের রাস্তা পুরো জ্যাম হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, উত্তর কলকাতার কিছু বিশেষ পুজোর ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকে। এরকম সমস্যা এবারেও তৈরি হলে, সংশ্লিষ্ট পুজোগুলিকে 'ব্ল্যাকলিস্টেড' করে দেওয়া হতে পারে। তারপরই সামনে এসেছে মুচিপাড়া থানা থেকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোকে পাঠানো চিঠি। যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে তিলোত্তমায়।