শেষ আপডেট: 6th September 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাশিয়ার টিকার ট্রায়াল শুরু হতে পারে ভারতেও। সেই সম্ভাবনাই জোরালো হচ্ছে ক্রমশ। রুশ টিকা মানুষের শরীরে কার্যকরী হচ্ছে, এমন খবর দু’দিন আগেই দিয়েছে ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল। টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলাফল কী হয়েছে তার সবিস্তার তথ্য এবার ভারতকেও পাঠালো রাশিয়া। সূত্রের খবর, রাশিয়ার টিকার উৎপাদন ও ট্রায়ালের জন্য দুই দেশের মধ্যে কথাবার্তাও চলছে। বিশ্বে প্রথম টিকা নিয়ে আসার দাবি করেছে রাশিয়া। এই টিকা বানিয়েছে মস্কোর গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। রুশ টিকার নাম তাদের প্রথম মহাকাশযানের নামে স্পুটনিক ভি। গ্যামেলিয়ার ভাইরোলজিস্টরা বলেছেন, প্রথম দুই পর্বে মাত্র ৭৬ জনকে ইঞ্জেকশন দিয়ে টিকা নিয়ে আসার জন্য অনেক কথা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, কম জনকে টিকা দিলেও তার ফল একই হয়েছে। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই টিকা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। পাশাপাশি, করোনাকে ঘায়েল করার মতো ঘাতক টি-কোষও সক্রিয় হয়েছে। এই টিকার কোনও খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি। ভারত আগেই জানিয়েছিল, রুশ টিকার ট্রায়ালের প্রতিটা পদক্ষেপের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এই টিকা কার্যকরী প্রমাণিত হলে তবেই ভারতে তার উৎপাদন ও ট্রায়ালের কথা ভাবা যাবে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীনস্থ বায়োটেকনোলজি দফতরের সচিব রেণু স্বরূপ ও রাশিয়ায় ভারতের দূত ডি বি ভেঙ্কটেশ বর্মার মধ্যে রুশ টিকা নিয়ে আলোচনা চলছে। ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রথম দুই পর্বের ট্রায়ালের রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। ১৮ জুন থেকে টিকার ট্রায়াল শুরু করে গ্যামেলিয়া। ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবককে দুটি দলে ভাগ করে টিকা দেওয়া হয়। প্রথম ৩৮ জনকে লিকুইন ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা হয়, বাকি ৩৮ জনকে টিকার পাওডার দেওয়া হয়। অক্সফোর্ডের মতো অ্যাডেনোভাইরাসের দুর্বল স্ট্রেনকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে টিকা তৈরি করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার ক্লিনিকাল ট্রায়াল অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর ভেতলানা জ়্যাভিডোভা বলেছেন, একসঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল করা হয়েছে ভ্যাকসিনের। দাবি, দুই পর্যায়তেই সাফল্য মিলেছে। দেখা গেছে, টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই রক্তে টি-কোষ তথা টি-লিম্ফোসাইট কোষ সক্রিয় হতে শুরু করেছে। এই কোষ সক্রিয় হলেই ভাইরাস বা প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে ‘অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স’ তৈরি হয় শরীরে। স্পুটনিক ভি টিকার প্রভাবেও রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হচ্ছে বলেই দাবি। রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকার তৃতীয় স্তরের ট্রায়াল চলছে। ৪৫টি মেডিক্যাল সেন্টারে প্রায় ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই ট্রায়ালের তত্ত্বাবধানে রয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। জানা গিয়েছে, সৌদি আরব, ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ফিলিপিন্সে টিকার তৃতীয় স্তরের ট্রায়াল করতে পারে রাশিয়া। সেই তালিকায় ভারতের নামও যোগ হবে কিনা সেটাই এখন জানার বিষয়। রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সিইও কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানিয়েছেন, ভারত সহ বিশ্বের ২০টি দেশে টিকা তৈরির ইচ্ছা রয়েছে তাদের। বিশেষত ভারত, ব্রাজিল, লাতিন আমেরিকা এই টিকা উৎপাদনের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে। তিনি বলেছেন, “রুশ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ভারতের সঙ্গে হাত মেলাতে চাইছে রাশিয়া। ভারতের একাধিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি আছে যারা আমাদের ফর্মুলায় টিকা তৈরি করতে পারবে। এই পার্টনারশিপ তৈরি হলে দুই দেশই চাহিদা মতো টিকা উৎপাদন ও বিতরণ করতে পারবে।“ রুশ টিকা তৈরির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকার উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন দিমিত্রিয়েভ।