শেষ আপডেট: 4th September 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা মানুষের শরীরে কার্যকরী হচ্ছে। টিকার ডোজে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কম জনের মধ্যে ট্রায়াল হলেও সুফল দেখা যাচ্ছে। এমনটাই দাবি করেছে ল্যানসেট জার্নাল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভেক্টর ভ্যাকসিনের ইতিবাচক দিকের কথাও প্রথম সামনে এনেছিল ল্যানসেট। সেখানে গবেষকরা দাবি করেছিলেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিন প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। টি-কোষও সক্রিয় হয়েছে। রাশিয়ার টিকাও একইভাবে কাজ করেছে বলে এবার দাবি করল ল্যানসেট। গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ৭৬ জনকে টিকার দুটি ডোজ দেওয়া হয়েছিল। ৪২ দিন ধরে চলেছিল টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিনের মধ্যেই অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। গবেষকদের দাবি, দ্বিতীয় রিপোর্ট পাওয়া যায় ট্রায়ালের ২৮ দিন পর থেকে। দেখা গেছে, টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই রক্তে টি-কোষ তথা টি-লিম্ফোসাইট কোষ সক্রিয় হতে শুরু করেছে। এই টি-কোষ হল শরীরের মূল সুরক্ষা কবচ। এই কোষ সক্রিয় হলেই ভাইরাস বা প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে ‘অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স’ তৈরি হয় শরীরে। স্পুটনিক ভি টিকার প্রভাবেও রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হচ্ছে বলেই দাবি। রাশিয়ার ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ও কার্যকারিতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে আন্তর্জাতিক মহলে। প্রথম পর্যায়ে মাত্র ৭৬ জনের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেই কীভাবে ভ্যাকসিন নিয়ে আসার কথা বলছে রাশিয়া, এই নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে নানা মহলেই। টিকার সুরক্ষাবিধিতেই এবার বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন খোদ রাশিয়ারই অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং এথিক্স কাউন্সিলের অন্যতম প্রধান ডক্টর আলেক্সান্ডার। তাঁর অভিযোগ, ভ্যাকসিন তৈরি ও তার ট্রায়ালের দায়িত্বে থাকা প্রধান দু’জন নিয়ম ভেঙে বেআইনিভাবে টিকার প্রয়োগ করেছেন। তাঁরা হলেন গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ভাইরোলজিস্ট আলেক্সান্ডার গিন্টসবার্গ এবং রুশ সেনার মুখ্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক সার্গে বোরিসেভিক। সরকারের এথিক্স কাউন্সিলের নিয়ম ভেঙে টিকার প্রয়োগ হয়েছে দাবি করে কমিটি থেকে পদত্যাগও করেছেন ডাক্তার আলেক্সান্ডার। ১৮ জুন থেকে টিকার ট্রায়াল শুরু করে গ্যামেলিয়া। ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবককে দুটি দলে ভাগ করে টিকা দেওয়া হয়। প্রথম ৩৮ জনকে লিকুইন ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা হয়, বাকি ৩৮ জনকে টিকার পাওডার দেওয়া হয়। অক্সফোর্ডের মতো অ্যাডেনোভাইরাসের দুর্বল স্ট্রেনকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে টিকা তৈরি করেছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছিলেন, মানুষের শরীরে এই টিকা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত। তাঁর মেয়েকেও টিকা দেওয়া হয়েছে এবং কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। রাশিয়ার ক্লিনিকাল ট্রায়াল অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর ভেতলানা জ়্যাভিডোভা বলেছেন, একসঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল করা হয়েছে ভ্যাকসিনের। দাবি, দুই পর্যায়তেই সাফল্য মিলেছে। ল্যানসেটের গবেষণাতেও দেখা গেছে টিকার প্রভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করেছে। রুশ টিকার এখন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। ৪৫টি মেডিক্যাল সেন্টারে প্রায় ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হচ্ছে। পুতিন সরকার জানিয়েছে, এই ট্রায়াল শেষ করে তার রিপোর্ট খুব শীঘ্রই সামনে আনা হবে। ভারতেও এই টিকার উৎপাদন ও বিতরণ হতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মস্কো সফরে গিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার টিকা কার্যকরী প্রমাণিত হবে। টিকার ট্রায়ালের ফলাফল, সেফটি ট্রায়ালের রিপোর্ট নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তাও চলছে।